• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

গোদাগাড়ীতে ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসব শুরু

প্রকাশ:  ০৯ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:০৫
গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি
প্রিন্ট

আজ ৯ অক্টোবর সোমবার শুভ অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপি ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসব। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গৌরাঙ্গবাড়ি মন্দিরে নেমেছে ভক্তদের ঢল।

দুই দিন আগে হতেই দেশের দূর দূরান্ত হতে ভক্তরা এসে আপন আপন থাকর জায়গা করে নিয়েছে। গোরাঙ্গবাড়ীর নির্ধারিত জায়গায় ছাড়াও রাস্তার দুইপাশে বিভিন্ন পসরার দোকান সাজিয়ে জমে উঠেছে খেতুর ধামের মহোৎসব।

সকাল থেকে লক্ষ্য করা গেছে দূর হতে সতানত ধর্মাম্বলিরা বাস- মাইক্রো , ভ্যানযোগে প্রয়োজনীয় সরাঞ্জমাদি নিয়ে আসতে দেখা গেছে।

সব মিলিয়ে মহোৎসবের প্রথমদিন বেশ জমে উঠেছে তবে সোমবার হতে হঠাৎ আকাশ মেঘাছন্ন দেখা দেওয়াই উৎসবে কিছুটা বিরুপ পড়া সম্ভাবনা রয়েছে।

আর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সেখানের সর্বচ্চ নিরাপত্তার দায়িত্বে সর্তকতা রয়েছে। তারও অনুষ্ঠানটিকে সফলতা করতে যথেষ্ঠ ভূমিকা রাখছে।

ভক্তদের মতে, প্রেমভক্তি মহারাজ ও অহিংসার প্রতীক ঠাকুর নরোত্তম দাস। প্রথমদিন সন্ধ্যায় শুভ অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় তিনদিনের অনুষ্ঠানমালা।

১০ অক্টোবর মঙ্গলবার অরুণোদয় হতে অষ্ট প্রহরব্যাপি তারক গ্রক্ষ্মনাম সংকীর্ত্তন, বুধবার প্রথম প্রহরে দধিমঙ্গল দ্বি-প্রহরে ভোগ আরতি ও মহান্ত বিদায়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদ নেওয়াজ জানিয়েছেন, এবারের উৎসবকে ঘিরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মহোৎসব ও উৎসবকে ঘিরে মেলা-এসব নির্বিঘ্নে করতে মাঠে থাকবেন ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ট্রাস্ট বোর্ডের কয়েকশ নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।

গোদাগাড়ী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিপজুর আলম মুন্সি জানান, খেতুরীধাম ও মেলাকে ঘিরে ওই এলাকায় যে কোনো অপ্রতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সেখানে জেলা পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। এ ছাড়া প্রেমতলী বাজারে বসানো হয়েছে পুলিশ কন্ট্রোল রুম। মাঠে আছে র‌্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। সেখানে সিসি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক নজদারি করা হচ্ছে।

গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্ট বোর্ডের সম্পাদক শ্যামাপদ স্যানাল জানান, সারা পৃথিবীতে হিন্দু ধর্মাবলাম্বীদের মোট ছয়টি ধাম রয়েছে। এরমধ্যে পাঁচটিই ভারতবর্ষে। একটি মাত্র বাংলাদেশে। আর তা এই খেতুরীধাম। এ কারণে প্রতিবছর উৎসবকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন জেলাসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ত্রিপুরা ও আসাম এবং নেপাল ও মায়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক লাখ ভক্তের সমাগম ঘটে খেতুরীধামে। এবার ভক্তের সংখ্যা সাত লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করেন তিনি।

গৌরাঙ্গবাড়ি মন্দিরের ব্যবস্থাপক গোবিন্দ চন্দ্র পাল জানিয়েছেন, সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে এবার ব্যপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। লাখ লাখ নারী-পুরুষ ভক্তের জন্য প্রয়োজনীয় প্রসাদ বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে প্রেমতলী বাজার থেকে খেতুরীধাম পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার  সংযোগ সড়কটিতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগত ভক্তদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলম অন্যান্য বারের চাইতে প্রায় ৩০ টির মতো মেডিকেল টিম গঠন করে অভিজ্ঞ স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ করে স্বাস্থ্য সেবা দিতে প্রস্তুত আছে বলে জানা যায়।

নরোত্তম ঠাকুর মহাশয় এর সংক্ষিপ্ত জীবনী থেকে জানা যায়, ১৫৩১ খ্রীষ্টাব্দে ঠাকুর নরোত্তম দাস তৎকালীন গড়েরহাট পরগণার অন্তর্গত ও বর্তমান গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মাতীরস্থ গোপালপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা জমিদার কৃষ্ণনন্দ দাস, মা নারায়নী রাণী। গোপালপুরে শৈশব অতিবাহিত করে ঠাকুর নরোত্তম দাস বৃন্দাবন অভিমুখে যাত্রা করেন। সেখানে নিখিল বৈষ্ণবকুল চূড়ামণি লোকনাথ গোস্বামীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে দীক্ষা লাভ করেন।

পরে তিনি গোদাগাড়ীর খেতুরী গ্রামে আসেন। খেতুর মন্দিরে স্থাপনা গড়ে তোলেন এবং সেখানে উৎসব আয়োজনের ব্যবস্থা করেন। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এসে তার কাছে দীক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করেন।

১৬১১ খ্রীষ্টাব্দের কার্তিকী কৃষ্ণা পঞ্চমী তিথিতে ঠাকুর নরোত্তম দাস নিত্তলীলায় প্রবেশের মানসে গঙ্গাস্নানের বাসনা প্রকাশ করেন। শিষ্যগণ তাকে গঙ্গাজলে নিয়ে গেলে নিজের দেহকে অর্ধনিমজ্জিত করে প্রিয় শিষ্য গঙ্গানারায়ণ ও রামকৃষ্ণকে আদেশ করেন দেহ মার্জন করতে। গুরু আজ্ঞায় নরোত্তমের ওই দুই শিষ্য দেহ মার্জন করতে থাকলে পুরো দেহ সাদা দুধের মতো তরল পদার্থে পরিণত হয়ে গঙ্গাজলে মিলিত হয়ে যায়। সে অনুযায়ী ঠাকুর নরোত্তম দাস পৃথিবীতে ৮০ বছর স্থায়ী ছিলেন।

এরপর থেকেই যুগ পরস্পরায় দুর্গাপূজার পর বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীরা অহিংসার এই মহান সাধক ঠাকুর নরোত্তম দাসের কৃপা লাভের আশায় খেতুরী ধামে বার্ষিক মিলিত হয়ে থাকেন।

সর্বাধিক পঠিত