বাংলাদেশী জুয়েল, রোহিঙ্গা যুবতীর প্রেম-বিয়ে, অতঃপর পলায়ন
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রোহিঙ্গা যুবতীকে বিয়ে করা বাংলাদেশী সোয়াইব হোসেন জুয়েলকে (২৫) হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা যুবতী রাফিজার (১৮) প্রেমে পড়েন জুয়েল। এরপর তার পিতামাতার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এরপরই তাদের বিয়ে হয় গত মাসে। কিন্তু এমন বিয়েতে সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে। ফলে বিয়ের পর থেকে ওই নব দম্পতি পালিয়ে আছে। এরই মধ্যে জুয়েলের গ্রামের বাড়ি সিঙ্গাইরে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।
কিন্তু তাকে পাওয়া যায় নি। ওদিকে এ বিয়ের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন জুয়েলের পিতা বাবুল হোসেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে কমপক্ষে ৫ লাখ রোহিঙ্গা। রাফিজা তাদেরই একজন। সিঙ্গাইরের পুলিশ প্রধান খন্দকার ইমাম হোসেব বলেছেন, আমরা শুনেছি জুয়েল একজন রোহিঙ্গা যুবতীকে বিয়ে করেছে। আমরা তার সন্ধানে তার গ্রামের বাড়ি চারগ্রামে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায় নি। তার পিতামাতা বলতে পারেন নি, তারা কোথায় আছে।
এ ঘটনার তদন্ত চলছে। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেয়ার জন্য এখানে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে বলে রিপোর্ট বের হয় এর আগে। তারই প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে মিয়ানমারের কোনো রোহিঙ্গা মুসলিমের সঙ্গে বাংলাদেশীর বিয়ে নিষিদ্ধ করে ঢাকা। ওদিকে জুয়েলের পিতা বাবুল হোসেন তার ছেলের পক্ষ নিয়ে বলেছেন, যদি কোনো বাংলাদেশী কোনো খ্রিস্টানকে বিয়ে করতে পারেন, অন্য ধর্মের লোককে বিয়ে করতে পারেন, তাহলে রোহিঙ্গাকে বিয়ে করে আমার ছেলে কি অপরাধ করেছে? সে তো একজন মুসলিম যুবতীকে বিয়ে করেছে, যে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।
স্থানীয় একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়, জুয়েল স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে স্বপরিবারে বাংলাদেশে এসে সিঙ্গাইরে এক ধর্মীয় নেতার বাড়িতে আশ্রয় নেন রাফিজা। এ সময়ে তার প্রেমে পড়ে জুয়েল। এরই মধ্যে পুলিশের অভিযানের কারণে ওই পরিবারটি কক্সবাজারের মূল শরণার্থী শিবিরে ফিরে যায়। সিঙ্গাইর থেকে প্রায় ২৬৫ মাইল দূরে এই শিবির। ওদিকে প্রেমে মত্ত হয়ে জুয়েল খুঁজতে থাকে রাফিজাকে। ছুটে যায় শরণার্থী শিবিরে। সেখানে এই শিবির থেকে ওই শিবিরে সে খুঁজে ফেরে রাফিজাকে। এমনি খুঁজতে খুঁজতে সে পেয়ে যায় রাফিজাকে। তার পিতামাতার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তাদের সম্মতিতে বিয়ে হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পালায় এই নবদম্পতি। আগস্টের শেষে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল শুরুর পর এটাই প্রথম কোনো বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা শরণার্থীর বিয়ের ঘটনা।