• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

দেবীগঞ্জের জাম্বুরা যাচ্ছে সারাদেশে

প্রকাশ:  ০৫ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:৩৬
রাজিউর রহমান রাজু, পঞ্চগড়
প্রিন্ট

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা শহরে প্রতিদিনই বসছে জাম্বুরা বা বাতাবি লেবুর  হাট। এখানে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে প্রায় তিন হাজার পিস জাম্বুরা। অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে জাম্বুরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে স্থানীয় লোকজনের যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে সেই সাথে বাড়ছে জাম্বুরা চাষের আগ্রহ। পাইকারী দরে প্রতিটি জাম্বুরা বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। জাম্বুরা কিনে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে ট্রাক যোগে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা, টাঙ্গাই, চট্রগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলায়।

একটা সময় মানুষ শখের বশে বা নিজেদের চাহিদার বিবেচনায় বাড়িতে জাম্বুরা গাছ লাগালেও এখন দাম দেখে অনেকেই ভাছেন বাণিজ্যিক ভাবে জাম্বুরা চাষের।

বর্তমানে দেবীগঞ্জের কোনো এলাকায় বাণিজ্যিক বাগান না থাকলেও অধিকাংশ বাড়িতে এক বা একধিক জাম্বুরার গাছ রয়েছে। স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষকদের কাছে এই জাম্বুরা হাজার হিসেবে বা গাছ চুক্তি হিসেবে কিনে নিয়ে আসছেন দেবীগঞ্জ বাজারে। পরে সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে তাদের নিজস্ব এলাকায়। এতে কৃষক, খুচরা ব্যবসায়ী ও বাইরে থেকে আসা ব্যাবসায়ীরা সবাই লাভবান হচ্ছেন।

জাম্বুরার বিক্রি মৌসূম শুরু হয় ভাদ্র মাস থেকে চলবে কার্তিক মাসের শেষ পর্যন্ত।  একেকটি গাছে দুই থেকে আড়াইশ জাম্বুরা পাওয়া যায়। আগের দিনে মানুষ বাড়ির আশপাশে জাম্বুরার গাছ লাগিয়েছিল শখ করে খাওয়ার জন্য কিন্তু বর্তমানে জাম্বুরা বাণিজ্যিক বাজার তথা ক্রেতারা দখল করেছে।

দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার এলাকার সফিকুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়িতে অনেকদিন আগে একটা জম্বুরার গাছ লাগিয়েছিলাম। এতোদিন তেমন চাহিদা ছিলনা। তবে এবার জাম্বুরা ধরেছেও অনেক, দামও ভাল। আমি সহ আমার এক প্রতিবেশির একটি গাছ মিলে প্রতিটি ৮ টাকা দরে চাররশ পিস জাম্বুরা বিক্রি করেছি।

ভাউলাঞ্জ এলাকার হাসেম আলী বলেন, জাম্বুরা বিক্রি করতে আমাদের বাজারে যেতে হয়না। ব্যাসায়ীরা বাড়িতে এসেই কিনে নিয়ে যায়। আমার বাড়িতে একটি জাম্বুরর গাছ আছে ফল বেশ ভালই হয়। চাহিদা দেখে এবার ভাবছি একটা জাম্বুরার বাগান করবো।

দেবীগঞ্জ বাজারের জাম্বুরা ব্যবসায়ী মো. নুর আলম বলেন, আমার এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা এসে জাম্বুরা নিয়ে যায়। আমারা গ্রাম পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে এই জাম্বুরা কিনে নিয়ে আসি। এতে কৃষকের পাশাপাশি আমরা যেমন লাভবান হচ্ছি তেমনি বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরাও লাভবান হচ্ছেন। সেই সাথে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাম্বুরার চাহিদাও মিটছে।

জাম্বুরা অনেকটা লোভনীয় এবং উপকারী খাবার। জাম্বুরার মধ্যে কোন রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার হয় না। জাম্বুরা এখনো প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়মেই পাওয়া যাচ্ছে। এটি অর্গাণিক ফল হিসেবই পঞ্চগড়ে বেশ পরিচিত। জাম্বুরার মধ্যে রয়েছে নানান পুষ্টিগুন। গাছ লাগানোর দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যেই আসে জাম্বুরার ফল।

দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, জাম্বুরায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি , রয়েছে ক্যালসিয়াম। জাম্বুরা মানবদেহের হাড় শক্তিশালি করে, ক্যান্সার প্রতিরোধক, হার্টের সুরক্ষা এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। জ্বরে জাম্বুরা ভাল ওষুধ হিসেবে কাজ করে। জাম্বুরা নিয়মিত খাওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. শামছুল হক বলেন, পঞ্চগড় জেলার মাটি বেশ অম্লীয় যে কারণে এখানে লেবু জাতীয় ফল বেশি হয়। জাম্বুরা বা বাতবি লেবু বেশ সুস্বাদু ও লাভজনক ফল হওয়ায় এখন কৃষকেরা এই ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। দেবীগঞ্জে এর পরিমাণ কিছুটা বেশি হলেও সমস্ত জেলায় এই জাম্বুরা ফল পাওয়া যায় এবং বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা এসে কিনে নিয়ে যায়।

সর্বাধিক পঠিত