• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

অর্থাভাবে ঢাবিতে ভর্তি হতে পারছে না দিনাজপুরের মোহাম্মদ আলী

প্রকাশ:  ০৩ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:১৫
দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট

মানুষের বাসায় দিনমজুরের কাজ করে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’-এর ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার পিতৃহীন গরীব মেধাবী ছাত্র মোহাম্মদ আলী ভর্তি হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে । 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে হবে কি-এখন ভর্তির টাকা পাবেনই বা কোথায় এবং লেখাপড়ার টাকাই বা জোগাড় করবেন কিভাবে-এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় নেয়া দিনমজুর মা ও ছেলের দুই সদস্যের এই অসহায় পরিবারটি।

মোহাম্মদ আলী (১৮) দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার ১নং ডাবোর ইউনিয়নের ডহচী গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে।

বাড়ীর ভিটেমাটি না থাকায় আশ্রয় নেন কাহারোল উপজেলার ডহচী মধুহারী আশ্রয়ণ প্রকল্পে। ৩য় শ্রেণীতে লেখাপড়ার সময় বাবা চলে যান না ফেরার দেশে। তখন মা মোসলিমা বেগম বড় মেয়ে রওশন আরা বেগম ও মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে সংসার চালাতে বিপাকে পড়েন। মা মোসলিমা বেগম অন্যের বাড়িতে দিন মজুরের কাজ করে সংসারের হাল ধরেন। এভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করেন মোহাম্মদ আলী।

মোহাম্মদ আলী জানায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করার পর স্থানীয় জয়নন্দ এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি করে দেয় মা। মনে করলাম, ভাল করে পড়াশুনা করে এসএসসিতে ভাল ফলাফল করতে হবে। কিন্তু আমাদের সংসারে বিবাহ যোগ্য বড় বোন আছে। তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য ‘মা’ খুবই টেনশন করতেন প্রায়ই সময়। একাই দিনমজুরি করে কিভাবে বোনকে বিয়ে দিবে সেই চিন্তায় মগ্ন থাকতো মা। তাই ৭ম শ্রেনী থেকে মায়ের সাথে দিনমজুরের কাজ আমিও শুরু করলাম।

সপ্তাহে দুই দিন স্কুলে যেতাম আর নিয়মিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতাম। অবশেয়ে মা-ছেলের উপার্জিত টাকায় ৫ বছর আগে বোন রওশন আরার বিয়ে দেই। মায়ের দুশ্চিন্তা তখন কিছুটা কমে আসে। এর মধ্যে ২০১৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে ৪.৯৪ জিপিএ পয়েন্ট নিয়ে উত্তীর্ণ হই। মায়ের দিক দেখে অন্য কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হলেও পরে এলাকায় জয়নন্দ ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হই। কিন্তু মা-ছেলের জীবন নির্বাহের জন্য দিনমজুরের কাজ ছাড়তে পারি নাই।

মোহাম্মদ আলী জানান, সারাদিন মাঠে ক্ষেত খামারে কাজ করে রাত জেগে পড়াশুনা করতাম। ইচ্ছে ছিল ভাল করে পড়াশুনা করলেই একমাত্র জীবন সংগ্রামের পরিবর্তন হতে পারে। এরপর ২০১৭ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ৪.৮৩ জিপিএ পয়েন্ট নিয়ে উত্তীর্ণ হই। অনেক বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং করার জন্য ঢাকা শহরে পাড়ি জমায়। আমারো ইচ্ছে ছিল, কিন্তু উপায় ছিল না। হঠাৎ একদিন মনে হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশুনা করতে পারলে আমার জীবনে পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্ত সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। সেই স্বপ্ন নিয়ে এলাকার এক ভাইয়ের কাছে পরামর্শ নেই। ফরম কেনার টাকাও ছিল না। স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলম ভাই ৫শ’ টাকা দিয়েছিল বলেই ফরম পূরণ করে পাঠিয়েছিলাম। এরপর রাত জেগে কোচিং ছাড়াই প্রস্তুত নেয়া শুরু করি।

এরপর স্থানীয় এক শিক্ষকসহ কিছু লোকের সহায়তায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্থানীয় কিছু ছাত্রের সহযোগিতায় ঢাকায় গিয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য গত ২২ আগষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। ২৫ আগষ্ট ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল হওয়ার পর দেখি ‘খ’ ৬৬৮ সিরিয়াল। ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। মা’ কে প্রথমেই খবরটি জানাই। কিন্তু ‘মা’ কেন জানি খুশি হতে পারেনি। মা বলেন, ঢাকায় পড়াশুনা করবি কিভাবে? আমাদের তো টাকা নেই। ভর্তির জন্য টাকা লাগবে, সেটা কিভাবে জোগাড় করবি। মায়ের কথা শুনে আমিও হতাশ হলাম কিভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো।

দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও এখন চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মোহাম্মদ আলী ও তার মা মোসলিমা বেগম। মোহাম্মদ আলী জানান, আগামী ২৪ অক্টোবর ভর্তির শেষ সময়। ভর্তি হতে লাগবে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু এই টাকা তারা যোগাড় করবে কিভাবে? মা-ছেলে মিলে দিনমজুরের কাজ করে যা রোজগার হয়-তা দিয়ে কোনমতে তাদের সংসার চলে। এই অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভতির সুযোগ পেয়ে মনের বড় স্বপ্ন আঁকলেও অর্থের অভাবে চোখে অন্ধকার দেখছে দরিদ্র মা ও ছেলের এই পরিবার। মোহাম্মদ আলী বিত্তবান ও সমাজের হৃদয়বান ব্যাক্তিদের প্রতি আকুতি জানিয়ে বলেন, তারাই তার এই স্বপ্নপূরণ করতে পারে। এ জন্য বিত্তবান ও হৃদয়বানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন দরিদ্র মেধাবী ছাত্র মোহাম্মদ আলী। মোবাইল নং-০১৭৭৩ ৪৬১৭৩৮( বিকাশ)।

জয়নন্দ ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক সামিউল আলম জানান, দিন মজুর হলেও মোহাম্মদ আলীর মধ্যে তিনি লক্ষ্য করেছেন অদম্য এক স্বপ্ন। মানুষের বাসায় দিনমজুরের কাজ করে কলেজে নিয়মিত উপস্থিত হতে না পারলেও পরীক্ষায় নিয়মিত অংশ নিতো এবং বরাবরই তার ফলাফল ছিলো ভালো।

মোহাম্মদ আলী তার সুখ-দুঃখের আলাপ করেন একই এলাকার জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যাক্তির সাথে। সেই জাহাঙ্গীর আলম  জানান, মোহাম্মদ আলী সুযোগ পেলেও শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, দেশের জন্যও কিছু করতে পারবে। এ জন্য তিনিও দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।

সর্বাধিক পঠিত