কুলাউড়া উপজেলা হাসপাতালে টাকা ছাড়া কাজ হয় না
কুলাউড়া উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতালে দুর্নীতিবাজ চক্রের হাতে জিম্মি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ওই চক্রের সদস্যরা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হলেও তাদের দৌরাত্ম্যের কারণে কোনো ডাক্তার হাসপাতালে থাকতে চান না। কুলাউড়া হাসপাতালের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দুর্নীতিবাজ ওই চক্রের মূল হোতা কুলাউড়া হাসপাতালের পরিসংখ্যান সহকারী তফাজ্জল হোসেন। সে ৩৬ বছর থেকে একই পদে কর্মরত আছে।
তার সহযোগী অফিস সহকারী বিনয় শীল কর্মরত আছেন ৭ বছর থেকে। এদের আরেক সহযোগী অফিস সহকারী মো. আলমাছ মিয়া। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজের গোপনীয়তা প্রকাশ, সরকারি কাজে বিভিন্ন কৌশলে বাধা প্রদান, অফিসে দল পাকানো এবং কাজে গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে। সর্বোপরি এদের বিরুদ্ধে উৎকোচ ছাড়া কোনো ফাইল না নড়া এবং উৎকোচের বিনিময়ে সব অসাধ্যকে সাধন করে দেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মিজানুর রহমান এই চক্রের ভুয়া বিল-ভাউচারে স্বাক্ষর না করায় এবং দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় ২০১৬ সালে তফাজ্জল হোসেনের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। বিষয়টি তিনি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। এ ঘটনার পর কুলাউড়া হাসপাতাল থেকে অনেক ডাক্তার স্বেচ্ছায় বদলি হয়ে চলে যান। এছাড়া অফিস সহকারী বিনয় শীলের হাতে নাজেহাল হন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক মমতাজ তাহের বিনা।
তফাজ্জল হোসেন ও বিনয় শীলের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছ থেকে যেসব খাতে ঘুষ ও চাঁদা গ্রহণ করেছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রাপ্তিতে ১৫শ’ টাকা হারে ঘুষ দাবি। বেতন বৃদ্ধিতে ২০১৬ সালের ১ জুলাই প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে ১শ’ থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণ। চলতি বছর ঘুষ না দেয়ায় বেতন বৃদ্ধির অফিশিয়াল কপি কম্পিউটার থেকে ডাউনলোড করে সার্ভিস বইতে সংযুক্ত করেনি। জাতীয় ভিটামিন রাউন্ড জুলাই-ডিসেম্বর ২০১৬ সালে অফিসের খরচ দেখিয়ে ২০% টাকা কর্তন করা হয়।
কর্মচারীদের পেনশনের সময় চুক্তিবদ্ধ না হলে বিভিন্ন অযুহাতে পেনশনকারীকে হয়রানির শিকার হতে হয়। মাতৃত্ব ও চিকিৎসা ছুটি অনুমোদনে সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকা উৎকোচ দিতে হয়। তাছাড়া প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা উত্তোলনে বাধ্যতামূলক ৫% উৎকোচ দিতে হয়। এছাড়াও আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে তফাজ্জল হোসেন ও বিনয় শীল জানান, স্যারের (উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা) অনুমতি ছাড়া কোনো কথা বলবেন না এমনকি কোনো বক্তব্য দেবেন না।