সাকিবকে দেখতে হাসপাতালে মাশরাফি
দুবাই থেকে শনিবার রাতে দেশে ফিরেছেন মাশরাফি। রবিবার ঘুম থেকে উঠেই আর বাসায় থাকতে পারেননি বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক। ছুটে যান অ্যাপোলো হাসপাতালে। সাকিব আল হাসান কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে। সকাল ১১টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে প্রায় ঘণ্টাদুয়েক সাকিবের সঙ্গে আড্ডা দেন মাশরাফি।
আলোচনায় ছিল শিরোপা না পাওয়ার হতাশা। ফাইনালে সাকিবকে না পাওয়ার আফসোস। প্রিয় অধিনায়ককে কাছে পেয়ে হয়তো বাঁ-হাতের কনিষ্ঠার ব্যথা ভুলে গিয়েছিলেন সাবিক। হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে তার আঙুল থেকে পুঁজ বের করা হয়েছে। কাল রাতে হাসপাতাল ছাড়েন সাকিব।
এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাপোলোর চিফ কনসালটেন্ট এবং কো-অর্ডিনেটর (অর্থোপেডিক্স) ডা. এম আলী বলেন, ৭২ ঘণ্টা পর ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু পুরোপুরি সেরে উঠতে আরো কিছুদিন লাগবে। অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে যেতে হবে। ওষুধ দিয়ে আমরা তাকে আজ (কাল) রিলিজ দিয়েছি। আমরা তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
তিনি বলেন, সিউড্রোমলাস নামে একটি ব্যাকটেরিয়ার কারণে তার এই ইনফেকশন হয়েছে। শুরু থেকেই তাকে যে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়েছে সেটা দারুণ কাজ করেছে। তার আঙুলে অবশ্যই অস্ত্রোপচার লাগবে। কিন্তু সেটা অবশ্যই ইনফেকশন পুরোপুরি দূর হওয়ার তিন সপ্তাহ পর।
সাকিবের আঙুল খালি অবস্থায় দেখলে যে কেউই ভয় পেয়ে যাবেন। সেলাই না করায় চামড়া ফাঁকা রয়েছে। মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন তিনি। মাশরাফি দেখা করে সাকিবকে সাহস জুগিয়েছেন। সম্পূর্ণ সেরে উঠতে প্রায় তিন মাস লেগে যাবে।
বৃহস্পতিবার অস্ত্রোপচারের পর থেকে দু’দিন বাঁ-হাত সিলিংয়ে ঝোলানো ছিল। আরেক হাতে ইনজেকশন, ব্যথানাশক ডোজ নিতে হয়েছে। বাবার এমন অবস্থা দেখে ছোট্ট মেয়ে আলায়না হাসানের দু’দিন মন ভীষণ খারাপ ছিল। বাবার ব্যথা যেন সেও অনুভব করতে পেরেছে।
শনিবার সারা দিন চিকিৎসকদের বাবার কাছে যেতে দেয়নি আলায়না। সাকিবের মেয়ে ভেবেছে, তার বাবাকে ব্যথা দিতেই হয়তো চিকিৎসকরা আসেন। মেয়ের অবস্থা দেখে আগেরদিন আবেগঘন একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন মা উম্মে আহমেদ শিশির।
সাকিবও মেয়েকে নিয়ে ফেসবুকে লেখেন, সে (মেয়ে) আমার চোখের আড়াল হতে চায় না। ঢাল হয়ে থাকা আমার মেয়ের চিকিৎসকদেরও কাছে আসতে দিতে চায় না, যাতে তার বাবাকে তারা (চিকিৎসকরা) ব্যথা না দিতে পারে!
কাল সাকিবকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান, অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ ও সদ্য বাবা হওয়া তাসকিন আহমেদ। সবকিছু ঠিক থাকলে সাকিব অস্ট্রেলিয়া যাবেন উন্নত চিকিৎসার জন্য। ইনফেকশন সেরে গেলে উড়াল দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে।
সেখানে বিশ্ববিখ্যাত এক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন তিনি। দু’দফায় চিকিৎসা ঠিকঠাক হলে ১১ সপ্তাহ পর ক্রিকেটে ফেরার প্রস্তুতি নিতে পারবেন। এরপর লাগবে আরও দু’এক সপ্তাহ। সব মিলিয়ে তিন মাসেরও বেশি। এর মধ্যে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজ মিস করবেন তিনি। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) আগে মাঠে ফিরতে পারেন।
সাকিব চোট পেয়েছিলেন বছরের শুরুতে ঘরের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচে। হাড়ে কোনো চিড় ধরা না পড়লেও বাঁ-হাতের কনিষ্ঠার গোড়া মচকে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় টিস্যু। এশিয়া কাপ শেষে অস্ত্রোপচার করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু চার ম্যাচ খেলার পর হাতের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ না খেলেই দেশে ফিরে দ্রুত অস্ত্রোপচার করান তিনি।