কেমন হচ্ছে বিশ্বকাপ পরবর্তী আর্জেন্টিনা?
দ্বিতীয় রাউন্ডে ফ্রান্সের সঙ্গে ৪-৩ গোলে পরাজিত হয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েছে দু’বারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। এভাবে আর্জেন্টিনার বিদায় মানতে পারছে না আর্জেন্টিনাবাসি।
তাই সামনে কাতার বিশ্বকাপকে নিয়ে আর্জেন্টিনার ফুটবলে বিশাল একটি পরিবর্তন আসছে তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। বিশ্বকাপে হেরে যাওয়ার পরপরই হাভিয়ের মাসচেরানো ও মিডফিল্ডার লুকাস বিগলিয়া অবসরে চলে যান। ম্যাচের পর থেকে এখন পর্যন্ত মেসি কোনও মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেননি। তাই সকলে তাকিয়ে আছে মূলত তার দিকে মেসি কি আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে খেলবেন কী না।
বিশ্বকাপ পরবর্তী আর্জেন্টিনার লক্ষ্য এখন একটি তরুণ দল তৈরি করা। যাদের মাধ্যমে তারা বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফি পুনরায় ঘরে তুলতে পারে। তবে তারুণ্য নির্ভর দল হলেও দলটি কেমন হবে তা অনেকটা নির্ভর করছে মেসির ওপর। কারণ মেসি অবসরের ঘোষণা দিলে তিনি থাকবেন না, এটি নিশ্চিত, যদি দেশের হয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে চান, তাহলে তাকে ঘিরেই হয়তো নতুন করে স্বপ্ন দেখবে আর্জেন্টাইনরা।
আর্জেন্টিনা তাদের বিশ্বকাপ পরবর্তী দল কিভাবে সাজাবে তার জন্য দুটি রাস্তা তারা তৈরি করে রেখেছে। আসুন দেখে নেই সে রাস্তা দু’টো কি?
তাদের পরিকল্পনায় মেসিকে নিয়ে রয়েছে একটি পদ্ধতি, আরেকটি পদ্ধতি রয়েছে মেসিকে ব্যতিত।
এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে গোলরক্ষক। আর এ পজিশনের জন্য ভাবা হচ্ছে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল সোসিয়েদাদের ২৪ বছর বয়সী গোলরক্ষক জেরোনিমো রুয়িকে।
এরপর রক্ষণভাগে বর্তমান দল থেকে ২৫ বছর বয়সী আয়াক্স লেফট ব্যাক নিকোলাস টাগলিয়াফিকোকে রেখে দেয়া হতে পারে। কিন্তু সেন্টার ব্যাকে পুরোপুরি নতুন সেটআপ নিয়ে আসা হবে। যেখানে দেখা যেতে পারে ২২ বছর বয়সী জেনিত সেন্টার ব্যাক ইমানুয়েল মাম্মানা ও রিভারপ্লেটের ২২ বছর বয়সী সেন্টার ব্যাক লুকাস মার্টিনেজ কুয়ার্তা। আর রাইটব্যাকে আসবেন ইন্ডিপেনদিয়েন্তে ২২ বছর বয়সী ফ্যাব্রিসিও বুস্তোস।
মাঝমাঠে হাভিয়ের মাসচেরানো একাই ছিলেন আর্জেন্টিনার ভরসা। কিন্তু তিনি অবসরে চলে যাওয়ায় তার জায়গা পূরণ করতে আসতে পারেন জার্মান ক্লাব স্টুটগার্টের ২১ বছর বয়সী ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সান্টিয়াগো আসকাসিবার। তার দলে সুযোগ পাওয়ার কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে মাসচেরানোর খেলার স্টাইলের সঙ্গে তার মিলের কারণ। মিডফিল্ডে তার সঙ্গী হবে পিএসজির ২২ বছর বয়সী মিডফিল্ডার জিওভানি লো সেলসো। এবার স্কোয়াডে থাকলেও নামার সুযোগ পাননি তিনি। তাদের পাশে থাকবেন ২৪ বছর বয়সী রাশিয়ান ক্লাব এফ সি জেনিত সেন্ট পিটার্সবার্গের মধ্যমাঠের খেলোয়াড় লিয়েনড্রো প্যারেডেস।
সৃষ্টিশীলতার অভাব পূরণ করতে থাকবেন ওয়েস্ট হামের ২৫ বছর বয়সী মিডফিল্ডার ম্যানুয়েল ল্যানজিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার তুরুপের তাস ভাবা হচ্ছিল তাকে। কিন্তু বিশ্বকাপের আগেই মারাত্মক চোট ল্যানজিনি ও আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্নে ধাক্কা দেয়।
আক্রমণভাগে সবার ওপরে থাকবেন ২৪ বছর বয়সী ইন্টার মিলানের অধিনায়ক মাউরো ইকার্দি। তার ট্যাকটিসকস সাম্পাওলির সঙ্গে মিল না থাকার অজুহাতে দলে নেয়নি সাম্পাওলি। সবকিছু ঠিক থাকলে হিগুয়েইনের জার্সি পেতে যাচ্ছেন তিনি।
ইকার্দির সঙ্গে আক্রমণভাগে আরো থাকবেন ২৪ বছর বয়সী ফরাসি ক্লাব জুভেন্টাসের আক্রমণভাগের খেলোয়াড় পাওলো দিবালা। রাশিয়া বিশ্বকাপে দলে থাকলেও মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ২৬ মিনিট। এই জুটির পেছনে থাকবেন পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি। কারণ ইকার্দি-দিবালাকে গোলের সুযোগ তৈরি করে দিতে মেসির চেয়ে বিকল্প কাউকে পাওয়া যাবে না।
তবে মেসিকে নিয়ে সংশয়ে রয়েছে আর্জেন্টিনা। কারণ বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে তিনি এখনো নিজের সিদ্ধান্ত জানাননি। মেসি থাকলে তাকে নিয়ে আর্জেন্টিনার খেলার পদ্ধতি এক রকম থাকবে। আর মেসি না থাকলে তার জায়গায় সুযোগ পাবেন ২২ বছর বয়সী বোকা জুনিয়র্সের আক্রমণভাগের খেলোয়াড় ক্রিশ্চিয়ান পাভোন।
তবে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, গঞ্জালো হিগুয়েইন, সার্জিও আগুয়েরো, নিকোলাস ওটামেন্ডি, সার্জিও রোমেরোদের আর দেখা যাবে না এমনটা বলা চলে প্রায় নিশ্চিত।