ফুটবলের দুঃখের নাম মেসি
ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপ শুরু হতে আর বাকি মাত্র ছয় দিন। বিশ্বকাপের হাওয়া এখন ভালোমতোই বইতে শুরু করেছে বিশ্বজুড়ে। স্মৃতিতে ভেসে উঠছে অমর সব স্মৃতি। প্রতি বিশ্বকাপের আগে যেসব স্মৃতি রোমন্থন না করে আসলে থাকতে পারেন না ফুটবলপ্রেমীরা। বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে আয়োজিত এনটিভি অনলাইনের বিশেষ আয়োজনে এবার থাকছে আর্জেন্টিনার আশা-ভরসা লিওনেল মেসির প্রসঙ্গ।
২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপ ফাইনালের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? ফাইনালের মহারণে আর্জেন্টিনা-জার্মানি মুখোমুখি। ‘কেউ কাউকে নাহি ছাড়ি’ অবস্থাটা এমন। কিন্তু অন্তিম মুহূর্তে মারিও গোৎসের গোলে সব ওলটপালট হয়ে গেল। আর্জেন্টিনাকে কাঁদিয়ে বিশ্বকাপের ট্রফিটা নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় জার্মানি। সবকিছু ছাপিয়ে হৃদয়ে দাগ কাটে লিওনেল মেসির চোখের পানি। এত কাছে গিয়েও বিশ্বকাপ ট্রফিটা যে ছুঁয়ে দেখা হলো না তাঁর।
কী নেই মেসির এই ৩০ বছরের স্বল্প জীবনে? চারটি ইউরোপিয়ান কাপ, আটটি লা লিগা টাইটেল, তিনটি ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ, পাঁচটি ব্যালন ডি'অর! কিন্তু একটা আক্ষেপই যে কুড়ে কুড়ে খায় মেসি আর তাঁর ভক্তদের। বিশ্বকাপ শিরোপা! এখানেই মেসি অসম্পূর্ণ। বারবার নিয়তির কাছেই হেরে যাচ্ছেন তিনি। দোষটা কি শুধু মেসির একার? বিশ্বকাপে ফেভারিট থেকেও ৩২ বছর একটা দেশের ট্রফির দেখা না পাওয়া ভাগ্যের নির্মম পরিহাসই বটে।
আর্জেন্টিনা দলে অনেক তারকা ফুটবলার আছেন। অ্যাগুয়েরো, দিবালা, ইকার্দি, হিগুয়েইন, ডি মারিয়ারা ক্লাবের জার্সি গায়ে দাপট দেখালেও জাতীয় দলে তাঁরা নিজেদের সেরাটা দেখাতে ব্যর্থ হন। যার ফলে পুরো চাপটা এসে পড়ে মেসির কাঁধে। মেসিকে ছাড়া বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং রাউন্ডে আর্জেন্টিনা সাতটি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে জয় একটি, হার দুটি, বাকি চার ম্যাচে ড্র! আর মেসিসহ খেলেছে ছয় ম্যাচে। এর মধ্যে পাঁচ ম্যাচে জয়, হার এক ম্যাচে! মেসি ছাড়া আর্জেন্টিনা দল কতটা দুর্বল, সেটা দেখিয়ে দিয়েছে গত মাসে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে। ২০১০ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের কাছে দেড় হালি গোল খাওয়ার দৃশ্য গ্যালারিতে বসেই হজম করতে হয় মেসিকে।
এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে দলকে রীতিমতো তলানি থেকে তুলতে হয়েছে। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচে মেসির হ্যাটট্রিক না হলে রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইনদের দর্শক হয়েই হয়তো কাটিয়ে দিতে হতো। ১৯৭০ সালের পর এই প্রথম এতটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে তারা মূল পর্ব নিশ্চিত করে। ইউরোপিয়ান লিগে দাপিয়ে বেড়ানো তারকা ফুটবলারদের কাছে রাশিয়ার টিকেট পাইয়ে দেওয়াটাকে তারা ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবেই বিবেচনা করে।
গত তিন বছরে টানা তিনটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে প্রতিবারই আর্জেন্টিনাকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে শিরোপা হাতছাড়া করে আর্জেন্টিনা। পরের দুই বছর কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির কাছে টাইব্রেকারে হারে দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
এবারের বিশ্বকাপ মেসির জন্য বাঁচা-মরার লড়াই। এটাই মেসির শেষ সুযোগ বিশ্বকাপ জিতে জাতীয় বীরের রূপকথা লেখার! রাশিয়া বিশ্বকাপের ‘ডি’ গ্রুপে আর্জেন্টিনাকে লড়তে হবে আইসল্যান্ড, নাইজেরিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে।
কোচ জর্জ সাম্পাওলির অধীনে আর্জেন্টিনার উন্নতি তেমন চোখে পড়ার মতো নয়। তাই রাশিয়ায় শিরোপা লড়াইয়ে থাকতে হলে দলের আরো দ্রুত উন্নতির তাগিদ দিলেন মেসি, ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে চাইলে আমাদের আরো উন্নতি করতে হবে। বর্তমানে আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে কিছুটা দূরে আছি। কিন্তু আমাদের প্রস্তুত হওয়ার জন্য সময় আছে।’
সময় বাকি নেই খুব বেশি। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল হবে ২৬ মে। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ আইসল্যান্ডের বিপক্ষে, ১৫ জুন। এই অল্প সময়ে সতীর্থদের সঙ্গে বোঝাপড়াটা কেমন হবে, সেটা সময়ই বলে দেবে! প্রতিটি ম্যাচে মেসির ভূমিকা হতে হবে ফিনিশার এবং প্লেমেকারের। মেসি যদি ৯০ মিনিট স্ট্রাইকে থাকেন, তবে আর্জেন্টিনার জয়ের সম্ভাবনা আছে। পুরো টিম মেসিকে সহযোগিতা করলে এবং সুযোগ সৃষ্টি করে দিলে বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনার ঘরেই শোভা পাবে।