দুর্দান্ত জয়ের পর যা বললেন মেসি
দেশ কী চায়, ফ্যানরা কী চায়, মন কী চায়- জানেন তিনি। কিছু কূপমন্ডুক বলে বটে, ‘আরে আরে ও আবার দেশের জার্সি গায়ে কবে কী করল? যত কারিকুরি ক্লাবে’। কিন্তু বাস্তব যে তা নয়, তার চেয়ে ভালো কেউ জানেন না। বারেবারে সবটুকু করেও, সব পাওয়া হচ্ছিল না। কোথায় যেন আটকে যাচ্ছিল। আর ওই কূপমন্ডুকের দল হাসছিল অট্টহাসি! যেন ব্যর্থ হয়েছে বলেই সুখ। যেন চোখের পানিতে ভেসেছে বলেই শান্তি। যেন ক্ষত–বিক্ষত দেখতে পেলেই উল্লাস!
অবশেষে সেই সব না পাওয়া, পাওয়ায় পরিণত হলো বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোরে। ইকুয়েডরে তখন ক’টা জেনে কী লাভ? গ্রিনিজ টাইম না, আসলে তখন যেন মেসি–টাইম শুরু হয়েছে! হ্যাটট্রিকেই জবাব। সব সংশয়ের অবসান। মেসিরা বিশ্বকাপে।
আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের টিকিটটা এনে দিতে পেরে তিনিও কতটা স্বস্তি পেয়েছেন, পরিষ্কার হয়ে গেল মেসির কথাতেই। ২০১৬–র নভেম্বরের পর থেকে মেসি আর তার সতীর্থরা মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেননি। এদিন বললেন। প্রাণ খুলে, ইকুয়েডরে খেলতে আসার আগে ভয় কাজ করে। সব সময়। কিন্তু আমরা লাকি। তাই ঠিক সময়ে জ্বলে উঠেছি। আমরা ধির ছিলাম, স্থির ছিলাম। আমরা গোল করেছি। যে গোলের লক্ষ্যটা নিয়েই এসেছিলাম এখানে। বলতে পারেন, কাজের কাজটা করতে পেরেছি।
এতখানি বলার পর কয়েক সেকেন্ডের বিরতি। তারপর? মেসির মনের একেবারে ভেতরের কথাটা বেরিয়ে এলো, বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা নেই? তেমনটা হলে, পাগলামি বলতে হতো। এই দলের ক্ষমতা আছে বিশ্বকাপে খেলার। আমরা তিন–তিনটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠার পরও সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে! জানেন, আমরা মিডিয়ার থেকে, সাধারণ মানুষের থেকে ইচ্ছে করেই দূরে ছিলাম। এই দূরত্বটাই আমাদের মানে আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের কাছাকাছি এনেছে। বিশ্বাস করি, এভাবে হাতে–হাত রেখে যদি এগোতে পারি, তা হলে আমাদের সব কাজ সহজ হয়ে যাবে। দু’ দুটি কোপা আমেরিকা আর বিশ্বকাপ ফাইনালে আমাদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা একেবারেই ঠিক হয়নি। আশা রাখছি, এবার আমরা অন্তত কাপটা হাতে নিতে পারব। নিজেদের জন্যই ওই কাপটা হাতে নিতে চাই। যোগ্যতা পর্বটা উপভোগ করেছি। আমাদের দল প্রতিদিন তৈরি হবে। প্রতিদিন বড় হবে। দলটা বদলাবেই। বিশ্বকাপে অন্য এক আর্জেন্টিনাকে দেখবেন। এই আর্জেন্টিনা আরো আরো উন্নত হবে।’
মেসি যখন এভাবে বললেন, তখন কোচ সাম্পাওলিও লুকিয়ে রাখতে পারলেন না আবেগ। তবে সেই আবেগের মুহূর্তে বললেন একেবারে সঠিক কথাটা, জানেন, ছেলেদের কী বলেছি? মেসি আমাদের বিশ্বকাপে নিয়ে যায়নি, ফুটবলই মেসিকে নিয়ে গেছে বিশ্বকাপে। আমরা লাকি, বিশ্বের সেরা ফুটবলার মেসির দেশ আর্জেন্টিনা। ফুটবল বলুন আর বিশ্বকাপ— মেসি ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। আমাদের একথা মাথায় নিয়েই খেলতে নামতে হয়েছিল। এই যোগ্যতা পর্ব, এই ভয়ঙ্কর চাপ আমার দলকে আরও শক্তিশালী করে দিয়ে গেল। বিশ্বকাপে মেসিকে সাহায্য করার আরো একবার সুযোগ পাব আমরা। সেই সুযোগটা ষোলো আনা কাজে লাগাতে চায় ফুটবলাররা।