আর্জেন্টিনার শেষ সুযোগ
হৃদরোগ ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি এড়াতে দেশবাসীকে বিয়ার এবং চর্বি জাতীয় খাবার পরিহারের পরামর্শ দিয়েছে আর্জেন্টিনার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে গণসচেতনতা তৈরির জন্য কয়েকদিন ধরে নানা কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। তা চালাক, কিন্তু খেলার পাতায় এ খবর কেন কারণ আছে। ২০১৮ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব থেকে আর্জেন্টিনার বিদায়ের শঙ্কা জেগে ওঠায় যে দেশটির ফুটবল সমর্থকদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে গেছে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ-ভাগ্য আক্ষরিক অর্থেই সুতোয় ঝুলছে।
ইকুয়েডরের মাঠে শেষ ম্যাচ জিততে না পারলে ২০১৮ বিশ্বকাপ হয়তো দর্শক হয়েই দেখতে হবে মেসিদের। কঠিন এক সমীকরণ মেলানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে খেলোয়াড়রা যতটা চাপে থাকবেন, চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে টিভি সেটের সামনে বসে থাকা সমর্থকরা হয়তো তার চেয়েও বেশি স্নায়ুচাপে ভুগবেন। হৃদরোগের পূর্ব ইতিহাস আছে যাদের, তাদের ম্যাচটি না দেখার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এমন অভাবনীয় প্রেক্ষাপটই বলে দিচ্ছে, এ ম্যাচটি আর্জেন্টিনার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। দশ দলের লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্ব দীর্ঘ ১৮ রাউন্ডের। অথচ সব রোমাঞ্চ যেন শেষ রাউন্ডের জন্যই তুলে রাখা হয়েছে।
এ অঞ্চল থেকে শীর্ষ চার দল সরাসরি বিশ্বকাপে খেলবে। পঞ্চম দল সুযোগ পাবে প্লে-অফ খেলার। ১৭ রাউন্ড শেষে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ-যাত্রা নিশ্চিত হয়েছে শুধু ব্রাজিলের।
এই অঞ্চল থেকে রাশিয়ার ট্রেনে ব্রাজিলের সঙ্গী হবে কারা, তা শেষ রাউন্ডের পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে। বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় একসঙ্গে পাঁচটি ম্যাচ।
এরমধ্যে কিটোয় ইকুয়েডর-আর্জেন্টিনা ম্যাচটির দিকে চোখ থাকবে গোটা ফুটবল বিশ্বের। ২০১৮ বিশ্বকাপ মেসি ও আর্জেন্টিনাবিহীন হবে কিনা, এ ম্যাচেই তার উত্তর মিলবে। ২৮ পয়েন্ট নিয়ে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের দ্বিতীয় স্থানে থাকা উরুগুয়ের তেমন কোনো শঙ্কা নেই। শেষ ম্যাচে ঘরের মাঠে বলিভিয়ার কাছে হারলেও উরুগুয়ের বিশ্বকাপ-যাত্রা প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু পরের পাঁচটি দলেরই শঙ্কা এবং সম্ভাবনা আছে।
তিনে থাকা চিলির (২৬) সঙ্গে সাতে থাকা প্যারাগুয়ের (২৪) ব্যবধান মাত্র দুই পয়েন্ট। পাঁচে থাকা পেরুর সমান ২৫ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে আছে আর্জেন্টিনা। শেষ ম্যাচটা জিতলে অন্তত প্লে-অফে খেলা নিশ্চিত হবে আর্জেন্টিনার। চার ও পাঁচে থাকা কলম্বিয়া-পেরু ম্যাচটা ড্র হলে এবং নিজেরা জিতলে সরাসরিই বিশ্বকাপে চলে যাবে আর্জেন্টিনা।
ব্রাজিলের মাঠে চিলি জয়বঞ্চিত হলেও সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ থাকবে মেসিদের। আবার চিলি ও কলম্বিয়া জিতলে, নিজেদের ম্যাচ জিতেও প্লে-অফ খেলতে হবে আর্জেন্টিনাকে। বাকি ম্যাচগুলোর ফল অনুকূলে থাকলে ড্র করেও প্লে-অফের টিকিট পেতে পারে তারা।
এমনকি হারলেও ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকবে! ঘরের মাঠে প্যারাগুয়ে যদি ভেনিজুয়েলার বিপক্ষে হোঁচট খায় এবং পেরু যদি আর্জেন্টিনার চেয়ে বড় ব্যবধানে হারে, সেক্ষেত্রেই শুধু হেরেও প্লে-অফে যাবে আর্জেন্টিনা। তবে আর্জেন্টিনা যে দুঃসময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে, তাতে অমন আশায় বুক না বাঁধাই ভালো।
মোটা দাগে বিশ্বকাপে যেতে শেষ ম্যাচটা জিততেই হবে মেসিদের। সমস্যা হল, যেখানে খেলা সেই মাঠে ২০০১ সালের পর আর জয়ের দেখা পায়নি আর্জেন্টিনা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৮৫০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত কিটোয় খেলা অতিথি দলগুলোর জন্য সবসময়ই কঠিন। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে রোববারই তাই দল নিয়ে ইকুয়েডরে উড়ে গেছেন আর্জেন্টিনা কোচ হোর্হে সাম্পাওলি। শুধু ভেন্যুর উচ্চতা নয়, মেসি-দিবালা সমীকরণও মেলাতে হবে তাকে।
দু’জনের খেলার ধরন একইরকম হওয়ায় আগের ম্যাচে মেসির সঙ্গে শুরুর একাদশে দিবালাকে রাখেননি সাম্পাওলি। কিন্তু বাঁচা-মরার শেষ ম্যাচে সর্বশক্তি নিয়েই ঝাঁপাতে হবে তাকে। টানা চার ম্যাচে জয়হীন আর্জেন্টিনা। এ চার ম্যাচে তাদের একমাত্র গোলটিও আত্মঘাতী। এমন পরিস্থিতিতে কোচের ভরসা একজনই আর সে হলো মেসি।
দেশের জার্সিতে এবার বার্সেলোনার মেসিকে দেখতে চান তিনি। ডাগআউটে সাম্পাওলির সঙ্গে টক্কর দেবেন যিনি, সেই হোর্সে সেলিকোও একজন আর্জেন্টাইন।
শেষ রাউন্ডের সূচি
ইকুয়েডর ও আর্জেন্টিনা
পেরু ও কলম্বিয়া
ব্রাজিল ও চিলি
প্যারাগুয়ে ও ভেনিজুয়েলা
উরুগুয়ে ও বলিভিয়া (সব ম্যাচ বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় শুরু হবে)।
সূত্রঃ ওয়েবসাইট