বাবার আত্মহত্যা নিয়ে বেয়ারস্টো
আট বছর বয়সী একটা ছেলে। ক্রিকেট ও ফুটবল দুটোই সে ভালোবাসে। লিডস ইউনাইটেডের হয়ে ফুটবলও অনুশীলন করত। বাড়িতে ছিল খেলার পরিবেশ। বাবা ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলেছেন। ছেলেকে নিরন্তর উৎসাহ জুগিয়ে যান তিনি খেলাধুলায়।
একটা বড় দুঃখ নিয়েই সে বড় হচ্ছিল। মায়ের যে ক্যানসার। কিন্তু সেই দুঃখের মধ্যেই ছেলেটির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল আজ থেকে ১৯ বছর আগে। লিডসের হয়ে ফুটবল অনুশীলন থেকে বাড়ি ফিরে কড়িকাঠে ঝুলন্ত অবস্থায় বাবার মৃতদেহ দেখেছিল সে। আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি। এরপর ক্যানসার আক্রান্ত মায়ের শুরু হল জীবন-সংগ্রাম। ক্যানসারের পাশাপাশি জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা।
ইংলিশ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্টোর জীবনের গল্প এটি। ১৯ বছর ধরে এই দুঃসহ স্মৃতি বুকের মাঝে চেপে রেখে এত দূর এসেছেন। বাবার পথ অনুসরণ করে ক্রিকেটটাকেই জীবনের অংশ বানিয়েছেন। বাকিটা তো ইতিহাস।
ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছিলেন ৪ টেস্ট ও ২১ ওয়ানডে খেলেছিলেন বাবা ডেভিড বেয়ারস্টো। ইয়র্কশায়ারের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৪ হাজার রানের পাশাপাশি ১০৯৯ ডিসমিসাল রয়েছে ডেভিডের। এর মধ্যে ১৯৮২ সালে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে এক ম্যাচে উইকেটরক্ষক হিসেবে ১১টি ক্যাচ নিয়েছিলেন, যা ওই সময় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ছিল যুগ্মভাবে বিশ্ব রেকর্ড।
বাবার কাছ থেকে তাঁকে হাতে-কলমে ক্রিকেট শেখার সুযোগ পাননি জনি বেয়ারস্টো। কিন্তু দুজনের উইকেটকিপিং প্রায় একইরকম, বাবার মতোই ইয়র্কশায়ারে খেলছেন বেয়ারস্টো। প্রায় ২০ বছর হয়ে গেল বাবার মৃত্যু নিয়ে চুপ করে ছিল বেয়ারস্টো পরিবার। শেষ পর্যন্ত বেয়ারস্টো এ নিয়ে মুখ খুলেছেন তাঁর বই ‘এ ক্লিয়ার ব্লু স্কাই’-এ। বেয়ারস্টোর এ বইয়ে বেরিয়ে এসেছে, ডেভিডের মৃত্যুর পর অসুস্থ মা কীভাবে হাল ধরেছিলেন গোটা পরিবারের।
তিন সন্তান জনি, বেকি আর অ্যান্ড্রু (বৈমাত্রেয় ভাই) নিয়ে জীবনসংগ্রামে জ্যানেট সফলই হয়েছেন। ক্যানসারকে মোটামুটি জয় করে বেঁচেও আছেন তিনি। ডেভিডকে হারানোর শোককে পরিবারের ওপর চেপে বসতে দেননি জ্যানেট, ‘সে (ডেভিড) এটা কেন করেছিল, তা হয়তো কখনোই জানতে পারব না। এ জন্য আপনি নিজেকে অপরাধী ভাবতে পারেন, দোষারোপ করতে পারেন, কিন্তু পেছনে ফিরে তাকাতে পারেন না। আপনাকে সামনে তাকাতেই হবে। ক্যানসার ধরা পড়ার পর সন্তানদের জন্য আমাকে শক্ত হতে হবে। এরপর ডেভিডও চলে গেল। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করতে হয়, আমরা ঠিক সেটাই করেছি, কখনো বেশি দুরে তাকাইনি।’
বেয়ারস্টোর ভাবনাও ঠিক একইরকম, ‘মা, আমি, বেকি কিংবা অ্যান্ড্রু কেউ কখনো জানতে পারব না সে (ডেভিড) এটা কেন করেছিল। এটা নিয়ে প্রতিদিন নিজেকে প্রশ্ন করার কিছু নেই। কারণ, সেটা করলে আপনি উঠে দাঁড়াতে পারবেন না। বাবা হারানোর কস্টকে প্রাধান্য দিলে সেটা মায়ের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব রাখত। এ কারণে কোনো সমস্যা থেকে বের হতে অন্য কিছুতে নজর দেওয়া জরুরি ছিল, আমরা ঠিক সেটিতেই নজর দিয়েছিলাম মায়ের স্বাস্থ্য।’
বেঁচে থাকতে ডেভিড বেয়ারস্টোকে তাঁর আমুদে বন্ধুবৎসল মনোভাবের জন্য সবাই ডাকত, ‘ব্লুয়ি’। বাবার এ নামটা কিন্তু জনি রেখেছেন তাঁর বইয়ের শিরোনামে ‘এ ক্লিয়ার ব্লু স্কাই’।
সূত্র: মেইল অনলাইন, মিরর