• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

জাতীয় স্কুল ফুটবলে অপ্রতিরোধ্য কলসিন্দুরের মেয়েরা

প্রকাশ:  ০৪ অক্টোবর ২০১৭, ১৫:৫৯
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রিন্ট

ভরদুপুর টিফিন বিরতি শুরু হবে এরই মধ্যে জার্সি আর বুট পরে তৈরি মেয়েরা। ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে মাঠে নেমে পড়ল একঝাঁক মেয়ে। শুরু হলো দারুণ এক ফুটবল ম্যাচ।

কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রায় নিয়মিত দৃশ্য এটি। ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী ধোবাউড়ার কলসিন্দুর গ্রামের। একই মাঠে অবস্থিত কলসিন্দুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেয়েরা প্রথমবার ফুটবলে জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য পেয়ে তাক লাগিয়ে দেয় সবাইকে। এই মেয়েরাই এখন পড়ছে কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে তারা। এরপরও আত্মতুষ্টি নেই তাদের। বরং সাফল্যের ক্ষুধা যেন বাড়ছে মেয়েদের। বাড়ছে অপরাজেয় হওয়ার অদম্য ইচ্ছা। তবে এরই  ফুটবল দলের এক সতীর্থকে হারিয়েছে কলসিন্দুরের মেয়েরা। এতে শুধু এসব মেয়েই নয়, পুরো কলসিন্দুরেই নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

গত ২৩ সেপ্টম্বরের কথা। দুপুরে স্কুলে ঢুকেই দেখা হয় থাইল্যান্ডে খেলে আসা মেসিখ্যাত তহুরার সঙ্গে। কথা হয় একই দলের মার্জিয়ার সঙ্গেও। এই ভরদুপুরে তপ্ত রোদে অনুশীলনের কারণ জানতে চাইলে মেয়েরা জানায়, ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্যই এই অনুশীলন।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৪ সালে জাতীয় পর্যায়ে কলসিন্দুরের ১০ মেয়ে ফুটবলারেরএকসঙ্গে সুযোগ পাওয়ার পর থেকে এখানকার অনেক মেয়ে এখন ফুটবলের প্রতি খুব মনোযোগী। তারা পড়াশোনার পর ফুটবল নিয়েই বেশি ভাবে। স্কুলের সবচেয়ে ভালো ৯ জন খেলোয়াড় অনূর্ধ্ব-১৬ জাতীয় দলে থাকায় ৪৬তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারা নিয়ে সংশয় ছিল কিছুটা। তবে মেয়েদের দৃঢ়তায় এবারও চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসে তারা। এর আগে একই প্রতিযোগিতার ২০১৪ ও ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় এখানকার মেয়েরা। ২০১৬ সালে কোনো খেলায় না হেরেও গোলের ব্যবধানে রাঙামাটির কাছে শ্রেষ্ঠত্ব হারায় তারা। এবার শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধার করল এখানকার মেয়েরা।

তৃতীয়বারের মতো ১৭ সেপ্টেম্বর ৪৬তম জাতীয় স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কলসিন্দুরের স্কুল শাখার মেয়েরা। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটির নয় কিশোরী এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল খেলতে দেশের হয়ে থাইল্যান্ডে থাকলেও অন্য মেয়েরা ঠিকই ছিনিয়ে এনেছে সাফল্যের মুকুট।

টিফিন শেষে আবার ক্লাস। তাই ১৫ মিনিটেই অনুশীলন শেষ করল মেয়েরা। অনুশীলন শেষে গাছের ছায়ায় টিউবওয়েলের কাছে জড়ো হয় মেয়েরা। সেখানে আবার কথা হয় তাদের সঙ্গে। মেয়েরা জানায় তাদের স্বপ্নের কথা।

মেয়েরা জানায়, এখানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৩৫টি মেয়ে নিয়মিত ফুটবল প্রশিক্ষণ নেয়। মারিয়া, মার্জিয়া আর সানজিদাদের সাফল্যই তাদের অনুপ্রেরণা। এই সফলতা ধরে রাখতে চায় তারা।

জমিলা খাতুন পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। তার কাছে ফুটবল খেলার কারণ জানাতে চাওয়া হলে বলে, আমাদের বড় আপুরা দেশে-বিদেশে ফুটবল খেলতে যায়। একদিন আমিও যাব।

নবম শ্রেণির হাফসা সিদ্দিকা বলে, তার সহপাঠীরা জাতীয় পর্যায়ে খেলছে। সে বঙ্গমাতায় খেললেও এখনো জাতীয় পর্যায়ের কোনো দলে ডাক পায়নি। সে আরও বলে, আমি চাই জাতীয় দলের সদস্য হতে। এ কারণে বেশি বেশি অনুশীলন করছি।

মুঠোফোনে গতকাল মঙ্গলবার কথা হয় অধ্যক্ষ মালা রানী সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের এখন একটাই গর্ব। সেটা হচ্ছে আমাদের মেয়েদের ফুটবল। যেকোনো মূল্যে আমরা এই গর্ব ধরে রাখব। সেই সঙ্গে তিনি দুঃখভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলেন, কলেজের স্কুল শাখার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর মারা যায়। মেয়েটি ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে জ্বরে ভুগছিল। ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে হঠাৎ জ্বর বেড়ে যায়। দ্রুত তাকে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ২৭ সেপ্টেম্বর সাবিনার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের অধীনে প্রাথমিক অনুশীলন ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। অধ্যক্ষ আরও বলেন, মেয়েরা সাবিনার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে।

২০১১ সালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে প্রথমবার জেলা চ্যাম্পিয়ন হয় কলসিন্দুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেয়েরা। পরে এখানকার মেয়েরা জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়নসহ একের পর এক সাফল্য পায়। বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক মফিজ উদ্দিন এই মেয়েদের ফুটবলার করে তোলার কারিগর।

মুঠোফোনে মফিজ উদ্দিন বলেন, এবার ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তিনি কিছুদিন মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেননি। এখন আবার অনুশীলন করানো শুরু করেছেন। আবারও তিনি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মেয়েদের।