লা লিগায় থাকবে না বার্সেলোনা
ক্লাবের চেয়েও বেশি কিছু’ স্লোগান নিয়েই যাত্রা শুরু হয়েছিল বার্সেলোনার। মাঠে ফুটবলের পাশাপাশি সামাজিক-রাজনৈতিক নানা ইস্যুতেও বরাবর সোচ্চার ইউরোপের অন্যতম সেরা এই ক্লাব। কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার দাবিতেও প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছে বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব। কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনে ইউরোপের অন্যতম সেরা লিগ লা লিগাও ছাড়তে রাজি বার্সেলোনা।
গত রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছিল কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার দাবিতে গণভোট। স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকারের সহিংস বিরোধিতার মধ্যেও অনেকে স্বাধীনতার দাবিতে ভোট দিয়েছেন। অভিনব এক প্রতিবাদ প্রদর্শন করে বার্সেলোনা তাদের লা লিগার ম্যাচটি খেলেছে পুরোপুরি দর্শকশূন্য অবস্থায়। আর এবার কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার প্রশ্নে বার্সেলোনা শেষ পর্যন্ত লা লিগায় থাকবে কি না, সেই ভাবনাও গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে বার্সেলোনা। ক্লাবটির সভাপতি জোসেফ বার্তোমেউ বলেছেন, ক্লাব ও অন্য সদস্যদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমরা ভবিষ্যতে কোন লিগে খেলব। আমরা কঠিন ও জটিল একটা সময় পার করছি। এখন ভবিষ্যতে কী হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্তটা আমাদের ঠান্ডা মাথায় নিতে হবে।
লা লিগায় শুধু বার্সেলোনাই নয়, কাতালোনিয়া রাজ্য থেকে খেলে আরো বেশ কয়েকটি দল। ভ্যালেন্সিয়া, এসপানিওল, গিরোনার মতো দলগুলোর সামনেও এ প্রশ্ন হাজির হবে যে কাতালোনিয়া সত্যিই স্বাধীনতা পেলে তারা কোন লিগে খেলবে।
বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব সব সময় ছিল কাতালোনিয়া জাতীয়তাবাদের প্রতীক। ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত, তিন বছরের রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের পর স্বৈরশাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো যখন ক্ষমতা দখল করলেন, তখন বার্সেলোনার ওপর নেমে আসে নির্মম অত্যাচার। এর একটা অন্যতম প্রধান কারণ, ১৯৩৬ সালে ফ্রাঙ্কোর সেনাবাহিনীর ক্যুর বিরুদ্ধে প্রথম আওয়াজ এসেছিল বার্সেলোনা থেকে। সে বছর বার্সার সভাপতি জোসেফ সুনিয়োলকে গ্রেপ্তার করে হত্যা করে ফ্রাঙ্কোর সেনাবাহিনী। ১৯৩৬ সালের পর ফ্রাঙ্কোর শাসনামলে নিষিদ্ধ করা হয় কাতালান ভাষা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় কাতালান ভাষায় লেখা বহু বই। সামরিক শাসনামলে এসবের প্রতিবাদ জানানোর মঞ্চ হিসেবে কাতালোনিয়ার মানুষ বেছে নিয়েছিল ফুটবল মাঠকে। বার্সেলোনার মাঠ ন্যু ক্যাম্প পরিণত হয়েছিল নিপীড়ত মানুষের মুখ খোলার জায়গা। এখানেই কোনো দ্বিধা-ভয় ছাড়া তারা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারত মাতৃভাষায়। এভাবেই সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিল একটা ফুটবল মাঠ ও ক্লাব।