তোমরা যারা নোবেল শান্তিপুরস্কার বিজয়ীদের শর্ট লিস্ট প্রকাশ করেছিলে
তারেক রহমান কিছু দিন কারাবরণ করেছেন, জীবনের একটা বড় অংশ কারাগারে কাটিয়েছিলেন নেলসন ম্যানডেলাও। এ প্রেক্ষিতে বিএনপির সমর্থকরা 'তারেক রহমান, বাংলার ম্যানডেলা' নামে একটি পেজ খুলেছিলেন। তারেক রহমানের মতো একজন নেতাকে ম্যানডেলার পর্যায়ে নামিয়ে আনায় বিএনপির ওপর আমি ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম এবং ফেসবুকে লিখেছিলাম— বিএনপির উচিত হয়নি 'তারেক রহমান, বাংলার ম্যানডেলা' নামে পেজ খোলা, বরং আফ্রিকানদেরই উচিত ছিল 'নেলসন ম্যানডেলা, আফ্রিকার তারেক' নামে পেজ খোলা।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা এক জীবনে সম্মানসূচক অজস্র ডক্টরেট ডিগ্রি ও পুরস্কার পেয়েছেন। তার ডিগ্রি ও পুরস্কার সাজিয়ে রাখতে গেলেও শেখ হাসিনা ডিগ্রিশালা ও শেখ হাসিনা পুরস্কারশালা নামে আস্ত দুটো জাদুঘর হয়ে যাবে, এও আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে সম্মানসূচক। এই সৌরজগতের চেনা-অচেনা-অর্ধচেনা মোটামুটি সব পুরস্কারই তার পাওয়া হয়ে গেছে। মাঝে-মধ্যে তিনি এমনতর পুরস্কারও পেয়েছেন এবং সেই পুরস্কারপ্রাপ্তির প্রেক্ষিতে বিবিধ কমিটি তাকে সংবর্ধিত করেছে, আবাঙ্গাল বাঙ্গালি আগে সেসব পুরস্কারের নামও শোনেনি। সেইসব নাম-না-শোনা পুরস্কার আনতে তিনি নিজেই ছুটে গিয়েছেন রাষ্ট্রীয় খরচে। অর্থাৎ এই বঙ্গীয় জনপদের পুরস্কারজগতে শেখ হাসিনা একজন পথিকৃতের নাম, একজন অগ্রদূতের নাম।
বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতি থেকে খালেদা জিয়া বহুদিন ধরেই দূরে ছিটকে আছেন, জাতীয় পার্টিও হাসিনার পদানত, রাজাকারদের বিচারের কারণে জামায়াতও কোণঠাসা। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক অঙ্গন দূরে থাক, অরাজনৈতিক অঙ্গনেও হাসিনার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই আপাতত। নোবেল পদক পেয়ে যাওয়ায় ডক্টর ইউনূস বহির্বিশ্বে হাসিনার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়ে গিয়েছিলেন, ব্যাপারটি হাসিনার ভালো লাগেনি। হাসিনা ইউনূসকে গ্রামীণব্যাংকচ্যুত করেছেন, বিনিময়ে ইউনূস আমেরিকাকে দিয়েছেন হাসিনাবিরোধী কানপড়া। ব্যাপারটা এখানেই শেষ হলে ঠিক ছিল। কিন্তু হাসিনা ও তার সভাসদরা যতটা আক্রমণ ইউনূসকে করেছেন, এর চেয়ে বেশি আক্রমণ করেছেন ইউনূসের নোবেল পদকটির ওপর! মন্ত্রী-সান্ত্রী, অ্যাটর্নি-ইন্টার্নি থেকে শুরু করে লিগপন্থি অনেকেই পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে বলেছেন— নোবেল পদকটা হাসিনার প্রাপ্য, ইউনূসের না!
তবে আমি মনে করি না শেখ হাসিনার নোবেল পদক পাওয়ার দরকার আছে, তিনি নোবেল পদকের ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন বহু আগেই, বস্তুত তিনি এখন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডেরই সব পদকের ঊর্ধ্বে। আমরাই বরং এখন নোবেল পদকের সমান্তরালে একটা পালটা-পদক প্রবর্তন করতে পারি, সেটি হবে 'হাসিনা পদক'। সাহিত্য, শান্তি, অর্থনীতি, চিকিৎসাশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে প্রতি বছর ৫ই জানুয়ারি আমরা বাংলাদেশ থেকে হাসিনা পদক দিতে পারি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব কিছুতে আমরা যেহেতু স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি, সেহেতু পদকেও স্বয়সম্পূর্ণতা অর্জন এখন সময়ের দাবি। ২০১৬ সালে কারা পেতে পারেন হাসিনা পদক?
'কবি' ইয়াফেস ওসমান সংসদে প্রায়ই শেখ হাসিনাকে নিয়ে স্বরচিত ছড়া পাঠ করেন। তার মাপের কবি এই বঙ্গীয় জনপদে আগেও জন্মাননি, ভবিষ্যতেও জন্মাবেন না। 'কবি' হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাব্যখ্যাতিও জগৎজোড়া, তিনি এখন মন্ত্রিপদমর্যাদায় শেখ হাসিনার বিশেষ দূতও। ২০১৬ সালে ইয়াফেস ও এরশাদকে যৌথভাবে দেওয়া যেতে পারে হাসিনা সাহিত্য-পুরস্কার।
শামিম ওসমান আওয়ামি লিগের সম্পত্তি না, সম্পদ। তিনি একাই নারায়ণগঞ্জকে অশান্তিমুক্ত করেছেন। আবার রাষ্ট্রপতি থাকাকালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সন্ত্রাসীর ফাঁসি মওকুফ করে এই বঙ্গীয় জনপদকে শান্তির স্বর্গে পরিণত করে গেছেন জিল্লুর রহমান, ফাঁসি দিয়ে তিনি দেশে অশান্তি তৈরি করেননি। ওদিকে দেশে যখনই সরকারি সিদ্ধান্তবিরোধী কোনো আন্দোলনে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে, তড়িঘড়ি করে গিয়ে পিটিয়ে অশান্তি সৃষ্টিকারীদের পিতৃনাম ভুলিয়ে দিয়ে শান্তি স্থাপন করেছে ছাত্রলিগ। তাই ২০১৬ সালের হাসিনা শান্তিপদকটা যৌথভাবে জিল্লুর রহমান (মরণোত্তর), শামিম ওসমান ও বাংলাদেশ ছাত্রলিগকে দেওয়া যেতেই পারে।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলার অর্থনীতির দিকপাল। তিনি শেয়ারবাজারকে যেভাবে রাবিশমুক্ত করেছেন, তা বিশ্বের কাছে রোল মডেল। হলমার্ক ৪ হাজার কোটি টাকা মেরে দেওয়ার পর তিনি বলেছিলেন— ৪০০০ কোটি টাকা কোনো টাকাই না। আবার এক ও দুই টাকার নোট তুলে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণের সময়েও তিনি বলেছিলেন একটাকা-দুইটাকা কোনো টাকাই না। তার কাছে ৪০০০ কোটি টাকাও টাকা না, এক-দুই টাকাও টাকা না। তিনিই এভাবে জাতিকে হাতে-কলমে শিখিয়েছেন— টাকা-পয়সা নিছকই হাতের ময়লা। অর্থনীতির এই ব্যবহারিক তত্ত্বটি উদ্ভাবনের জন্য তাকে এবং শেয়ারবাজারে বিশেষ অবদান রাখার জন্য লোটাস কামাল ও সালমান ফজলুর রহমানকে অর্থনীতিতে ২০১৬ সালের হাসিনা পদকটি দেওয়া যেতে পারে।
কিছু দিন আগেই দেশের বৃহত্তম ভর্তিপরীক্ষা হয়ে গেল। মেডিকেলের ঐ ভর্তিপরীক্ষাটি বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের ছিল। পরীক্ষাটির প্রশ্ন কোনোভাবে ফাঁস হয়নি, হয়নি কোনো অনিয়মও। এমন অনবদ্য একটি ভর্তিপরীক্ষার ফলে পাঁচ বছর পরই আমরা একঝাঁক মেধাবী চিকিৎসক পাব; চিকিৎসার জন্য আমাদেরকে আর বিদেশ যেতে হবে না, দেশের টাকা থাকবে দেশেই। এত চমৎকার একটি ভর্তিপরীক্ষার মাধ্যমে এত-এত মেধাবী শিক্ষার্থী উৎপাদনের নেপথ্য কারিগর যিনি, সেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে চিকিৎসাশাস্ত্রে ২০১৬ সালের হাসিনা পদক না দিলে নাসিমের প্রতি অন্যায়ই করা হবে।
মরণোত্তর নোবেল পদক দেওয়ার বিধান নেই। কিন্তু মরণোত্তর হাসিনা পদক দেওয়ার বিধান থাকতে হবে। শেখ হাসিনাকে নোবেল পদক না দিয়ে নরওয়ের নোবেল কমিটি যেভাবে সীমা লঙ্ঘন করেছে, আমরা নিশ্চয়ই তা করতে পারি না। তাই ডিনামাইট আবিষ্কারের জন্য পদার্থ বা রসায়নে আমরা আলফ্রেড নোবেলকেই ২০১৬ সালের মরণোত্তর হাসিনা পদকটি দিয়ে দিতে পারি। আর শেখ হাসিনা যেহেতু সৌরজগতের প্রায় সব পুরস্কারই পেয়েছেন, সেহেতু আর কাউকে না দিয়ে শুধু হাসিনাকেই ২০১৬ সালের 'হাসিনা পদক' দেওয়া যেতে পারে।
পুনশ্চ : হুমায়ুন আজাদ বলেছেন— পুরস্কার অনেকটা প্রেমের মতো; দু-একবার পাওয়া খুবই দরকার, এর বেশি পাওয়া লাম্পট্য।
লেখক : আইনজীবী ও কবি ( ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে)