• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

নায়কের বন্ধু

প্রকাশ:  ০৬ অক্টোবর ২০১৭, ২০:১২
মনিজা রহমান
প্রিন্ট


নায়কের বন্ধুকে সিনেমা শেষে কেউ মনে রাখেনা। নায়করাজ রাজ্জাককে চেনে সবাই। তাঁর মৃত্যুতে সব পত্রিকার বড় শিরোনাম হয়। বাংলাদেশের মানুষ আজীবন মনে রাখবে তাঁকে। কিন্তু সিনেমায় রাজ্জাকের বন্ধু আলতাফ কিংবা খান জয়নুলের কথা কি কারো মনে আছে? বেশীরভাগ মানুষেরই নেই। কারণ তারা তো রাজ্জাকের মতো রূপবান পুরুষ নয়। তাদের কোন বিশেষ গুনও নেই। নায়ক যেমন গান গাইতে পারে, নাচতে পারে, মারামারি করতে পারে, বন্ধু কোন কিছুই করতে পারেনা।

আপনি যদি বাংলা বা হিন্দি সিনেমার নিয়মিত দর্শক হন, তাহলে তো বিষয়টা আপনার চোখে আগেই পড়েছে। সিনেমার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নায়কের বন্ধুর উপস্থিতি থাকলেও তার নাম ট্রেলারে লেখা হয় না। অনেক সময় নায়িকার চেয়েও তাকে পর্দায় বেশী সময় দেখানো হয়। তার ভূমিকা অনেকটা কৌতুক অভিনেতাদের মতো। সুসময়ে সে সবাইকে হাসায়। আবার দু:সময়ে নায়কের পাশে আর কেউ না হোক, সে থাকে। গোরস্থানে কিংবা শ্মশানে, জানাজায় কিংবা অন্তেস্টিক্রিয়ায় নায়কের পাশে একমাত্র বন্ধুই দাঁড়ায়।

নায়ক কখনও ভুল পথে গেলে সেই বন্ধু তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনে। তখন সে যাত্রা দলের বিবেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। সত্যি কথা বলতে সে একবিন্দু ছাড় দেয় না। মোহ আর প্রলোভনে অন্ধ হয়ে নায়ক অনেক সময় ভুল পথে পা বাড়ায়। বন্ধু কিন্তু তখন নায়কের সঙ্গী হয় না। বরং সে চোখে আঙ্গুল দিয়ে নায়কের ভুল ধরিয়ে দেয়। প্রথমে নায়ক হয়ত সেটা সহ্য করতে পারেনা। অনেক সময় বন্ধুকে ত্যাগ করে। কিন্তু পরে ভুল বুঝতে পেরে বন্ধুর কাছে ক্ষমা চায়। আর যত বড় ভুল করুক না কেন, বন্ধু কিন্তু ঠিকই নায়ককে ক্ষমা করে বুকে জড়িয়ে ধরে।

বাস্তবে এই উদারতা আমরা কতখানি দেখাতে পারি? আসলেই কি পারি? বন্ধু ভুল করার পরে, আবার অনুতপ্ত হয়ে ফিরে এলে, আমরা কি পারি তাকে বুকে টেনে নিতে? সে কোন মারাত্নক অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হলে, আমরা কি পারি তার পাশে থাকতে? যেমন ধরুন, আপনার বন্ধু যদি কোন ঘটনার ফেরে খুনের দায়ে অভিযুক্ত হয়, এবং আপনার কাছে আশ্রয় চায়, তবে কি পারবেন সেই বন্ধুকে আশ্রয় দিতে? নায়কের বন্ধু কিন্তু এই কাজটা সব সময় করে। সে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও কাজটা করে। সিনেমা শেষে দেখা যায় বন্ধু মারা যায়, কিন্তু নায়ক বেঁচে থাকে। নায়ক চোখের জলে বন্ধুকে স্মরণ করে। কিংবা অনেক সময় অনাগত সন্তানের নাম রাখে।

বন্ধুত্ব জিনিষটাই এমন যে তাকে কোন সরল সংজ্ঞায় ফেলা যায়না। মানুষের বন্ধু এক বা একাধিক থাকতে পারে। বন্ধু নানা বয়সের হতে পারে। যে কোন লিঙ্গের হতে পারে। তবে নায়কের বন্ধু বেশীরভাগ সময় তার সহপাঠি থাকে। নায়কের বন্ধু অনেক সময় প্রেমে পড়ে। তবে নায়কের প্রেমে যেমন অনেক বেশী জটিলতা থাকে, বন্ধুর প্রেমে সেটা থাকে না। নায়কের বন্ধুর প্রেম একদম মসৃন। নায়কের বন্ধুর জীবনে আসলে কোন সমস্যাই থাকেনা। তার সব চিন্তা নায়ককে ঘিরে।

মাঝে মাঝে মনে হয়, নায়কের বন্ধু আসলেই কি আলাদা কোন মানুষ? নাকি নায়কেরই দ্বিতীয় সত্তা? যার নিজের সুখ-দু:খ বলতে কিছু নেই। কোন ব্যাক্তিগত জীবন নেই। তার কাজ শুধু নায়ককে অনুসরণ করা। বিনা প্রশ্নে নায়কের জীবনের চ্যালেঞ্জকে নিজের জীবনের চ্যালেঞ্জ করা। বাস্তবে তো সিনেমার মতো এমন বন্ধু মেলেনা, তাই এত কথা! তবে বাস্তবে তো নায়কের মতো সর্বগুনে গুনান্বিত মানুষও মেলেনা।

৬ অক্টোবর, ২০১৭। নিউইয়র্ক।