• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

নয়টি ছাড়া আওয়ামী লীগের কোনো অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন নেই

চাঁদপুরেও রয়েছে অনেক ভুঁইফোঁড় সংগঠন ॥ হচ্ছে চাঁদাবাজি

প্রকাশ:  ০৬ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:১২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

আওয়ামী লীগ দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে পুরানো এবং সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। যে দলটির নেতৃত্বে বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্তমানে এ দলটিই সর্বোচ্চ সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। আর স্বাধীনতার মহান সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। এটি যেমনি দেশের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয়, তেমনি আওয়ামী লীগের জন্যও ইতিহাস হয়ে রইলো। কিন্তু আশঙ্কা এবং ভীতির বিষয় হচ্ছে, দলের এই সুবর্ণ সুসময়ে ব্যক্তিপর্যায়ে যেমন অনেক সুযোগসন্ধানী এবং সুবিধাবাদীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে দলটিতে, তেমনি দলের বা বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করে অসংখ্য ভুঁইফোঁড় সংগঠনের জন্ম হয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, এমন ভুঁইফোঁড় সংগঠনের সংখ্যা হবে শতাধিক। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যেসব সংগঠনের কোনো বৈধতা নেই। চাঁদপুরেও এমন ভুঁইফোঁড় সংগঠন আছে অনেক। বিভিন্ন সময় চাঁদপুরের স্থানীয় মিডিয়াতে নাম আসে এমন ধান্দাবাজি ভুঁইফোঁড় সংগঠনের হিসাব করলে চাঁদপুরেই এর সংখ্যা হবে ডজনখানেকের উপরে। অথচ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটির সহযোগী সংগঠন হচ্ছে মাত্র নয়টি। এর বাইরে অন্য যা কিছু হবে সবই ধান্দাবাজি ভুঁইফোঁড় সংগঠন। এদের কাজই হচ্ছে চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি, তদবির করা ও বিভিন্নভাবে সুবিধা নেয়া। অথচ দল বিরোধী দলে থাকাকালীন বা দলের দুঃসময়ে এদের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া ছিলো দুষ্কর।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটির সহযোগী সংগঠন হচ্ছে নয়টি। যা দলের গঠনতন্ত্রের ২৫-এর (২) ধারাতে ‘সহযোগী সংগঠন’ শিরোনামে উল্লেখ রয়েছে। সে নয়টি সংগঠন হচ্ছে (গঠনতন্ত্রের ধারায় ক্রমানুসারে) : বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, বাংলাদেশ তাঁতীলীগ ও বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ। আর জাতীয় শ্রমিক লীগ এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের স্ব-স্ব সংগঠনের গঠনতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হবে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের উক্ত ২৫-এর ২ ধারাতে এভাবেই উল্লেখ রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ নয়টি ছাড়া অন্য যেসব সংগঠন রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত কী? এ বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারণী মহলের সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, এই নয়টি সংগঠনের বাইরে আওয়ামী লীগের কোনো অঙ্গ সংগঠন বা ভ্রাতৃ সংগঠন নেই।
চাঁদপুরেও দেখা গেছে যে, উক্ত নয়টি সংগঠনের বাইরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন নামে অনেক সংগঠন রয়েছে। যেমন আওয়ামী তরুণ লীগ, আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ, রিক্সা শ্রমিক লীগ, আওয়ামী হকার্স লীগ, সজীব ওয়াজেদ জয় পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী মোটর শ্রমিক লীগ, শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, আওয়ামী ওলামা লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, পরিবহন শ্রমিক লীগ, অটোরিক্সা শ্রমিক লীগ, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ ইত্যাদি।
এসব সংগঠনের নেতৃত্বে যাদের চাঁদপুরে দেখা যায়, তাদের পরিবারের বর্তমান বা পূর্বপুরুষদের কেউ আওয়ামী লীগ করেছে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তারপরও এখন যারা এসব সংগঠন করছে, তাদেরকেও যদি বিগতদিনে দলের দুঃসময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে দেখা যেতো তাতেও হয়তো কারো তেমন কোনো আপত্তি থাকতো না। কিন্তু দেখা গেলো যে, এদের কারো ১৯৯৬ সালে আবার কারো ২০০৯ সালে দল ক্ষমতায় আসার পর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এসব ভুঁইফোঁড় সংগঠনের নাম ব্যবহার করে এরা চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি ও তদবির বাণিজ্য করে থাকে। অনেকে সরকারি জমি দখল এবং অবৈধ ব্যবসা বেশ রমরমাভাবে করছেন। এসব দলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে এরা প্রশাসন থেকে সুবিধা এবং আনুকূল্য পেয়ে থাকে। দেখা গেছে যে, মাঠপর্যায়ে এরাই সাধারণ মানুষের উপর নানাভাবে অত্যাচার, নির্যাতন এবং হয়রানি করে থাকে। এদের ব্যাপারে তথা ভুঁইফোঁড় সংগঠনগুলোর ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে মনে করেন সাধারণ জনগণ এবং মূল দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীরা।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, এসব সংগঠনের বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহলের যে মনোভাব বা সিদ্ধান্ত, আমাদেরও একই সিদ্ধান্ত। চাঁদপুরে ওইসব কোনো সংগঠন আছে বলে আমার জানা নেই। যদি থেকেও থাকে বা কেউ যদি করেও থাকে সেটা শুধুমাত্র ধান্দাবাজির জন্যে করেছে। আমাদের আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী এসবের সাথে জড়িত নয়। তারপরও আমি বলবো, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে নয়টি সহযোগী সংগঠন রয়েছে, এর বাইরে অন্য কোনো ভুঁইফোঁড় সংগঠনকে যেনো দলের কেহ আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেয়।


সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ