ফরিদগঞ্জে একই রাতে একাধিক চুরি ও ডাকাতির ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বাড়ছে
একই রাতে একই ইউনিয়নে ফরিদগঞ্জের এক ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী বিএসসির বাড়িসহ একই গ্রামের চার বাড়িতে ডাকাতি ও স্থানীয় গ্রামীণ বাজারে তিন দোকানে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাত ধরতে গিয়ে একজন আহত হয়ে এখন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এসব ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে এখন এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করতে দেখা যায়।
এ খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে চাঁদপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রকিবসহ পুলিশ সদস্যরা ডাকাতির শিকার বাড়িগুলো পরিদর্শন করেছেন।
ডাকাতদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সদ্য বিদেশ ফেরৎ সুমন নামে একজন আহত হয়েছেন। ডাকাত দল অন্তত ২০ ভরি স্বর্ণালংকার, প্রায় দেড় লাখ টাকা ও বেশ ক’টি মোবাইল ফোন লুটে নিয়েছে। বুধবার গভীর রাতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৮নং ইউপির সাহাপুর গ্রামে। একইভাবে দুর্ধর্ষ সিরিজ চুরির ঘটনাও ঘটেছে।
ভুক্তভোগীদের মুখে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ডাকাতদল প্রত্যেক বাড়িতে একই কায়দায় ও সহজে কলাপসিবল গেইট ও দরজার তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে। তারা সংখ্যায় অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন ছিলো। ঘরে প্রবেশ করে ৩/৪ জনে ভাগ হয়ে বিভিন্ন কক্ষে ঢুকে পড়ে। সকলকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ও হাত-মুখ বেঁধে ফেলে। এরপর ঘরে থাকা আলমিরা, শোকেস, অন্যান্য আসবাবপত্র তন্ন তন্ন করে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন লুটে নেয়।
ডাকাতিকালে প্রবাসী সুমন শেখের স্ত্রী আলমিরার চাবি দিতে না চাইলে, তাকে অশ্লীল গালমন্দ করে ও তার পাঁচ বছরের কন্যা শিশুর গলায় ধারালো ছুরি ধরে। প্রবাসী আব্বাছ খানের স্ত্রী জানান, তার এক মাসের ছেলে সন্তানের গলায় রাম দা ধরে আলমিরার চাবি নিয়ে নেয়। আব্বাছ শেখের স্ত্রী জানান, ডাকাতদল বাড়িতে ঢুকে আমার স্বামীকে খুঁজে। তাকে না পেয়ে আমার কক্ষে প্রবেশ করে জানতে চায় আব্বাছ শেখ কোথায়। তিনি বিদেশ আছেন বললে তারা আমার ওপর চড়াও হয়ে বলে, সে তো গত দুই তারিখে বাড়ি এসেছে। অন্যদিকে ডাকাতির শিকার জামাল শেখ (৭৫) জানান, তিনি কৌশলে দরজার ছিটিকিনি খুলে বাইরে গিয়ে ডাক-চিৎকার দেন। এ সময় ডাকাতদল তার প্রবাসী ছেলে সুমন শেখের ঘাড় লক্ষ্য করে কোপ দেয়। এতে সুমন শেখ হাত দিয়ে ঠেকালে বাম হাত গুরুতর জখম হয় ও ঘাড় সামান্য কেটে যায়। আহত সুমন শেখকে ভোরে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
ডাকাতির শিকার উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত আলী বিএসসি বলেন, আমি এদিন রাতে বাড়িতে ছিলাম না। বাড়িতে শুধু আমার মা ছিল। ডাকাতরা আমার বসত ঘরে ঢুকে স্টিলের আলমিরা ভেঙ্গে ৫ ভরি স্বর্ণ ও ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
ডাকাতির শিকার পরিবারের সদস্যরা জানায়, ডাকাত দলের প্রত্যেকের হাতে চকচকে ধারালো অস্ত্র ছিলো। মুখে মাস্ক পরা, পরনে ছিলো জাঙ্গিয়া ও শর্ট প্যান্ট। তাদের বয়স আনুমানিক ১৮ থেকে ২৫ বছর হবে। ডাকাতদল রাত আনুমানিক একটায় প্রথমে ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী বিএসসির বাড়িতে, এরপর প্রবাসী আব্বাছ খান, ঢাকা বসবাসকারী সেকান্তর খান ও প্রবাসী সুমন শেখের বাড়িতে প্রবেশ করে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় গ্রামীণ বাজারে একই রাতে তিনটি দোকানে দুর্ধর্ষ চুরি সংঘটিত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, চোরের দল অন্তত তিন লাখ টাকার মালামাল লুটে নিয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, ডাকাতি ও চুরির সঙ্গে এলাকার কয়েকজন জড়িত থাকতে পারে।
এদিকে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রকিব এ প্রতিনিধিকে বলেছেন, ডাকাতির ব্যাপারে মামলা হচ্ছে। আমরা সকাল থেকেই ওই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেছি। আশা করছি দ্রুতই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারবো।