বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা
একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে 'বিকল্প প্রার্থী' রেখে পুরনোরে ওপরই আস্থা রাখছে বিএনপি। সোমবার প্রথম দিনে রংপুরের ৩৩, রাজশাহীর ৩৯ ও বরিশালের ২১ আসনসহ তিন বিভাগে মোট ৯৩টি আসনের মধ্যে ৮৫টি আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে দলটি। বাকি আটটি আসন পুরনো মিত্র ২০ দলীয় জোট এবং নতুন মিত্র জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জন্য খালি রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার বাকি সব বিভাগের দলীয় ও দুই জোটের শরিকরে মনোনয়নের চিঠিও দেওয়া হবে।
তিন আসনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নের চিঠি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে সোমবার ধানের শীষের প্রার্থীদের প্রত্যয়নপত্র দেওয়া শুরু করে বিএনপি। কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মনোনয়নের চিঠি সোমবার তার নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধির হাতে তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়া এবার মনোনয়ন নিয়েছেন ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে।
বিএনপি কতটি আসনে নিজেরে প্রার্থী দিচ্ছে আর কতটি আসন জোট শরিকদের জন্য ছাড়ছে- সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনও আসেনি। তবে পুরনো মিত্র ও নতুন মিত্র দুই জোটকে ৬০টি আসন ছাড়বে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ২৫টিসহ ২০ দলকে ৪২টি আসন এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ১৮টি আসন দেওয়ার ব্যাপারে দরকষাকষি চলছে।
সংস্কারপন্থিরাও মনোনয়ন পেয়েছেন: দলে ফিরিয়ে আনা সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতাদের অবশ্য বিকল্প প্রার্থী রেখে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবিরকে নওগাঁ-৫, সাবেক হুইপ শহীদুল হক জামালকে বরিশাল-২, সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপনকে বরিশাল-১ আসনে, বগুড়া-৫ জিএম সিরাজ, ঝালকাঠি-২ ইলেন ভুট্টো, বরগুনা-২ নূরুল ইসলাম মনি, পটুয়াখালী-২ আসনে শহীদুল আলম তালুকদারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দলের শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে সমালোচনা করে বক্তব্য দেওয়ায় বহিস্কৃত নেতা আবু হেনাকে রাজশাহী-৪ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুবরণকারী নেতাদের আসনে স্ত্রী ও সন্তান: মৃত্যুবরণকারী নেতাদের আসনে স্ত্রী ও সন্তানকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। নওগাঁ-৩ আসনে সাবেক ডেপুটি স্পিকার মরহুম আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে আরিফিন সিদ্দিকী জনিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। অবশ্য বিকল্প হিসেবে রবিউল আলম বুলেটকে রাখা হয়েছে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মরহুম ফজলুর রহমান পটলের নাটোর-১ আসনে তার স্ত্রী অধ্যাপক কামরুজ্জামান শিরিনকে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে লের কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাক তাইফুল ইসলাম টিপুকে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে।
স্ত্রীকে বিকল্প প্রার্থী রেখেছেন যারা: বেশ কয়েকজন নেতা বিকল্প প্রার্থী হিসেবে তাদের স্ত্রীকে রেখেছেন। তারা হলেন- পটুয়াখালী-১ আসনে আলতাফ হোসেন চৌধুরীর স্ত্রী সুরাইয়া আখতার চৌধুরী, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান টুকুর স্ত্রী রোমানা মাহমু, পটুয়াখালী-২ শহীদুল আলম তালুকদারের স্ত্রী সালমা আলম, নাটোর-২ আসনে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর স্ত্রী ইয়াসমিন ছবি, বগুড়া-৩ আসনে আবুল মুহিত তালুকদারের স্ত্রী মাসুদা মোমেন।
রাজশাহী ও রংপুরে নতুন মুখ: নাটোর-১ আসনে তাইফুল ইসলাম টিপু ও অধ্যক্ষ কামরুন নাহার শিরিন, নাটোর-৩ (সিংড়া), দাউদ আর মাহমুদ ও অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন আনু, নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আবদুল আজিজ, বগুড়া-১ কাজী রফিকুল ইসলাম, নওগাঁ-১ মোস্তাফিজুর রহমান ও মাসুদ রানা, নওগাঁ-২ খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী, নওগাঁ-৩ পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি ও রবিউল আলম বুলেট, নওগাঁ-৪ ডা. একরামুল বারী টিপু, নওগাঁ-৫ নাজমুল হক সনি ও জাহেদুল ইসলাম ধলু, নওগাঁ-৬ শেখ রেজাউল ইসলাম রেজু, জয়পুরহাট-১ ফয়সল আলীম ও ফজলুর রহমান, জয়পুরহাট-২ আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-১ কনকচাপা, সিরাজগঞ্জ-২ ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও রুমানা মাহমুদ, সিরাজগঞ্জ-৩ আবদুল মান্নান তালুকদার ও সাইফুল ইসলাম শিশির, সিরাজগঞ্জ-৫ মেজর (অব.) আব্দুল আল মামুন ও আমিরুল ইসলাম আলিম, সিরাজগঞ্জ-৬ ড. এ এ মুহিত। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনটি শূন্য রাখা হয়েছে। পাবনা-২ একেএম সেলিম রেজা হাবিব, পাবনা-৩ কেএম আনোয়ারুল ইসলাম, পাবনা-৪ হাবিবুর রহমান হাবিব ও পাবনা-৫ অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। পাবনা -১ শূন্য রাখা হয়েছে।
পঞ্চগড়-১ ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, পঞ্চগড়-২ ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান (জাগপা), দিনাজপুর-১ মঞ্জুরুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ চৌধুরী, দিনাজপুর-২ সাদেক রিয়াজ ও বজলুর রশিদ, দিনাজপুর-৩ সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, মোফাজ্জল হোসেন দুলাল, দিনাজপুর-৪ হাফিজুর রহমান, দিনাজপুর-৫ জাকারিয়া বাচ্চু, দিনাজপুর-৬ লুৎফুর রহমান মিন্টু ও শাহীন মন্ডল।
কুড়িগ্রাম-১ সাইফুর রহমান রানার স্ত্রী শামীমা রহমান আপন, কুড়িগ্রাম-২ আবু বক্কর সিদ্দিক ও সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ, কুড়িগ্রাম-৩ তাসভীর-উল-ইসলাম ও আব্দুল খালেক, কুড়িগ্রাম-৪ মোখলেছুর রহমান ও আজিজার রহমান, লালমনিরহাট-১ মোশারফ রহমান, লালমনিরহাট-৩ আসাদুল হাবীব দুলু।
রংপুর-১ কামরুজ্জামান বাবু, রংপুর-২ মোহাম্মদ আলী সরকার, রংপুর-৩ রিটা রহমান, রংপুর-৪ আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা ও খলিলুর রহমান, রংপুর-৫ সোলাইমান আলম ফকির ও ডা. মমতাজ, রংপুর-৬ সাইফুল ইসলাম। নীলফামারী-১ ন্যান্সি রহমান ও রফিকুল ইসলাম, নীলফামারী-৪ আমজাদ হোসেন সরকার ও বেবী নাজনীন।
বরিশালে নতুন মুখ: নবম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রাপ্তদের কেউ বাদ যাননি। বিকল্প প্রার্থীদের সবাই নতুন। তারা হলেন- পটুয়াখালী-১ সুরাইয়া আখতার চৌধুরী, পটুয়াখালী-২ সালমা আলম, পটুয়াখালী-৩ হাসান মামুন, পটুয়াখালী-৪ মনিরুজ্জামান মুনির, বরগুনা-১ নজরুল ইসলাম মোল্লা, ভোলা-২ রফিকুল ইসলাম মনি, ভোলা-৩ কামাল হোসেন, ভোলা-৪ মো. নুরুল ইসলাম নয়ন, বরিশাল-৩ জয়নুল আবেদীন, বরিশাল-৪ রাজীব আহসান, বরিশাল-৫ এবায়দুল হক চাঁন, ঝালকাঠি-২ রফিকুল ইসলাম জামাল ও জেবা খান, পিরোজপুর-১ ব্যারিষ্টার সারোয়ার হোসেন, পিরোজপুর-২ খালি রাখা হয়েছে, পিরোজপুর-৩ রুহুল আমিন দুলাল ও শাজাহান মিলন।
চট্টগ্রাম বিভাগ
নোয়াখালী-১ ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও মামুনুর রশিদ, নো্য়াখালী-২ জয়নুল আবেদিন ফারুক ও জাফর ইকবাল, নোয়াখালী-৩ বরকত উল্লাহ বুলু ও ডা. কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলন, নোয়াখালী-৪ মোহাম্মদ শাজাহান ও মোসাম্মৎ শাহীনুর বেগম, নোয়াখালী-৫ ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ ও নোয়াখালী-৬ ফজলুল আজিম।
কক্সবাজার-১ হাসিনা আহম্মেদ, কক্সবাজার-৩ লুৎফুর রহমান কাজল, কক্সবাজার-৪ মো. সালাহউদ্দিন ও শাজাহান চৌধুরী। এছাড়া বান্দরবানে শাচি প্রু জেরি ও উম্মে কুলসুম সুলতানা, রাঙ্গামাটিতে দীপেন দেওয়ান ও মনি স্বপন দেওয়ান এবং খাগড়াছড়িতে ওয়াদুদ ভূইয়া দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।
সূত্র : সমকাল।