চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে নতুন প্রার্থী চায় আওয়ামী লীগ বিএনপিতে পুরাতনেই ভরসা
চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে নতুন প্রার্থী চায় আওয়ামী লীগ বিএনপিতে পুরাতনেই প্রধান্য। চাঁদপুর জেলার সংসদীয় আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে ধরা ফরিদগঞ্জ আসনটিকে । ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। গত ৯ বছরে এ আসনে ভোটার বেড়েছে প্রায় ১ লাখের মত। তাই নতুন এই ভোটারাই আগামী নির্বাচনের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। নেতারা মনে করেন এই নতুন ভোটাররা ভোটের মাঠে জয়ে বড় ভূমিকা রাখবেন। এ আসনটি এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে এটি আওয়ামী লীগের দখলে। এখানে নতুন প্রার্থীর পক্ষে স্থানিয় আওয়ামী লীগ। বর্তমানে আওয়ামী লীগ তাদের অবস্থান ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে বিএনপি চাইছে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। অন্যদিকে ২০১৪ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ এই আসনটি পাওয়ায়, সেই ধারাবাহিকতায় এবারও তারা আটঘাট বেঁধে নামছেন। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অধিকাংশই নিয়মিত নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এই আসনে পুরোনো প্রার্থীর উপরই বিএনপির ভরসা।
২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসনে প্রথমে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির মাইনুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া। পরে জাপা প্রার্থী মাইনুল ইসলামের মনোনয়ন বাতিল হলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ৪১ বছর পর সেখান থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভুঁইয়া। এমপি হওয়ার পর তিনি সময় দিয়েছেন নির্বাচনি এলাকায় সময় দিয়েছেন। দলীয় ও বিভিন্ন কর্মসূচী থাকলেই ছুটে আসেন নির্বাচনী এলাকায়। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে তাঁর সমর্থিত নেতা-কর্মীরা জানান। তবে ২০০৮ সালে নৌকা হারানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে, এবং দলের একটি বড় পক্ষ এমপির বিরুদ্ধে রয়েছে, যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। আর গত পাঁচ বছরেে নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় সরকার বিরোধী জামাত,বিএনপির লোককে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া ও সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি নিয়োগে শিবিরের ও ছাত্রদলের ছেলেদের নিয়োগ দিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন। আর দলের একটি বড় অংশকে কাদিয়ানি আক্ষাদিয়ে দলীয় সকল কর্মকান্ড থেকে দূরে রেখেছেন।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান যিনি এলাকার তরুন সমাজের একজন আইকন। তাঁর রয়েছে বিশাল জনপ্রিয়তা যা গত কয়েকদিনের জনসভা ও শোডাউনের মাধ্যমে বোঝা গেছে। এছাড়াও তিনি সাবেক এমপি মরহুম অ্যাডঃ সিরাজুল ইসলাম সাহেবের পুত্র। পিতার ক্লিন ইমেজ ও নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তিনিও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক ভিপি, সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা বিএমএর ৩ বারের সাবেক সভাপতি ডাঃ হারুন অর রশীদ সাগর ও মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে গত ১৫ বছর যাবৎ নির্বাচনি এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন, তিনি ২০০৪ সাল থেকে ফরিদগঞ্জের আনাচে-কানাচে সকল গ্রামেই কমপক্ষে একটি ও কোন কোন এলাকায় কয়েকটি করে প্রায় ২৫০ টি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করে সাধারণ জনগনের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌছে দিয়েছেন, সাবেক এই ছাত্রনেতার সকল গ্রুপের নেতাদের সাথে সু- সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। তিনি নিয়মিত নির্বাচনি এলাকায় গনসংযোগ করে নৌকার ভোট প্রার্থনা করছেন। তিনি নির্বাচনি এলাকার সকল শ্রেনি পেশার মানুষের মনে ঠাই করে নিয়েছেন। তাকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন নির্বাচনি এলাকায় ত্যাগি আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীরা। তাকে প্রার্থী করা হলে আসনটি ধরে রাখা যাবে বলে নেতা কর্মী ও সাধারনের ধারনা।
অন্যদিকে বিগত ২০০১ ও ২০০৮ সালে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মুহাম্মদ শফিকুর রহমান। একজন সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত এই সাংবাদিক নেতা ২০০১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তাঁর নির্বাচনী এলাকায় মানুষের পাশে থেকেছেন। ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে দলের নির্যাতিত কিছু নেতাকর্মীদের পাশে থেকে তাদের সহযোগিতা করেছেন।
২০১৪ সালে মনোনয়ন না পেয়ে তিনি এলাকা ছেড়েদেন। তবে গত ২০১৭ সালের ১৮ আগষ্টের শোকসভার মধ্য দিয়ে আবার এলাকায় আসেন এবং গত এক বছরে আরো দুই একবার এসেছেন। দুইবার নির্বাচন করা এই সাংবাদিক নেতার পুরোনো বেশির ভাগ নেতাই এখন তার সাথে নেই। তারা এখন নিজেরাই মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে মাঠে কাজ করছে। তারপর ও তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে বিশ্বাস করেন তাঁর সমর্থকরা।
এই ছাড়া মনোনয়নের জন্য মাঠে নেমেছেন সাবেক সাংসদ সর্বোজন শ্রদ্ধেয় মরহুম রাজা মিয়ার পুত্র উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা আমির আজম রেজা, তিনি মাঠে গনসংযোগ করে যাচ্ছেন।
তরুণ নেতা হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমএনএ ও আওয়ামীলীগ নেতা এড,শিরাজুল ইসলামের পুত্র চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম রোমান। তিনি ছাত্রলীগের কিছু কর্মী ও জেলা পরিষদের সদস্য তার চাচাতো ভাইকে নিয়ে গনসংযোগ করে যাচ্ছেন । তার কর্মীরা ও মনোনয়ন এর ব্যাপারে আশাবাদী। তারা এই আসনে নতুন নেতৃত্বের স্লোগান নিয়ে মাঠে আছেন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার ও মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন, তিনি ও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক নেতা মহিউদ্দিন খোকা।
অন্যদিকে ১৯৯১ সালে যুবদল নেতা হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া মরহুম আলমগীর হায়দার খান টানা চারবার এমপি নির্বাচিত হয়ে এলাকায় বড় ভোট ব্যাংক তৈরি করেছিলেন। যার ফল হিসেবে ২০০৮ সালের নির্বাচনের অল্পদিন আগে মাঠে নেমে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়ে আলোড়নের সৃষ্টি করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ব্যাংকিং ও রাজস্ব বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা বিএনপির সভাপতি লায়ন মোঃ হারুন অর রশীদ। এছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোতাহের হোসেন পটাওয়ারী, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ হান্নান, বৃহত্তর কুমিল্লা আইনজীবী কল্যাণ সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্বাস উদ্দিন, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হুমায়ুন কবির বেপারী। জাতীয় পার্টি থেকে ইতোমধ্যে গ্রিনসিগন্যাল পেয়ে মাঠে নেমেছেন জাতীয় পাটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য, গবেষণা ও আইসিটি সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মিলন। এছাড়া জাপার কেন্দ্রীয় যুবসংহতির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুব সংহতির সাবেক সহ-সভাপতি হারুন অর রশীদও মনোনয়ন চান। এদিকে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ (খালেকুজ্জামান) জেলা নেতা আলমগীর হোসেন দুলাল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় নেতা আল্লামা মুকবুল হোসাইন নিজ নিজ দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান।