• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে নতুন মেরুকরণ

নাছির-আফসার রুদ্ধদ্বার বৈঠক

প্রকাশ:  ০৬ অক্টোবর ২০১৭, ২১:৪৭ | আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০১৭, ২১:৫৬
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন এমপি এবং মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বৃহস্পতিবার সকালে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। এ বৈঠককে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হিসেবে দেখছেন স্থানীয় নেতারা।

বিষয়টি স্বীকার করে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আমাদের সময়কে বলেন, আফসার ভাই আমাকে দেখতে এসেছিলেন। আমরা দুজনই রাজনৈতিক কর্মী। তিনি নগরীর একটি আসনের সংসদ সদস্য। আর আমি মেয়র ও নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক। আমাদের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক ঘটনা। কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলের বর্তমান বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সামনে নির্বাচন। এ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের আগে দলীয় ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রস্তুতির দরকার আছে। কীভাবে আগামী নির্বাচনে আরও ভালো করা যায়, সেসব বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। নগর আওয়ামী লীগের মেরুকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে দেখছেন, এটি যার যার দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। এই দীর্ঘ সময়ে আ জ ম নাছিরের পাশে ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। কিন্তু সম্প্রতি এ দুই নেতার মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ক্রমশ দূরত্ব বাড়তে থাকে। এ বিরোধ চলাকালেই সম্প্রতি একান্ত বৈঠক করেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনে ওই বৈঠকের পর থেকে মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন প্রকাশ্যে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সমালোচনা শুরু করেন। বর্তমানে নগরীর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো বলে সবাই দাবি করলেও মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন সম্প্রতি চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে বলেন, চট্টগ্রাম আবর্জনার শহরে পরিণত হয়েছে। ফুটপাত হকারদের দখলে চলে গেছে।

এর জবাবে আ জ ম নাছির দাবি করেন, চট্টগ্রাম শহর অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে পরিচ্ছন্ন। আর নিউমার্কেট এলাকাসহ সব ফুটপাতে এখন আর দিনের বেলা হকার বসে না। তাদের সন্ধ্যায় কয়েক ঘণ্টার জন্য বসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র প্যানেলের সদস্য চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনিও মন্ত্রীকে এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, আপনি বরং নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখে আসুন।

একই সময়ে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী নতুন করে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের বিপক্ষে কথা বলা শুরু করেছেন। তিনি গৃহ কর পুনর্মূল্যায়নের বিষয়টি নিয়ে আবারও মাঠে নামার প্রস্তুতি নিয়েছেন। গত ১১ এপ্রিল তিনি মেয়রের বিরুদ্ধে লালদীঘি মাঠে জনসভা করেছিলেন। গত বুধবার তিনি আগের মেয়রের মূল্যায়নের ওপর গৃহ কর আদায়ের জন্য মেয়রকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানান। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে এই চিঠি দেন তিনি। এ অবস্থায় গতকাল সকালে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন এমপি একান্ত বৈঠক করেন।

দলীয় সূত্র জানায়, নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একসময় ডা. আফসারুল আমীনের সঙ্গে সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সখ্যতা ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে সেই সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ওই নির্বাচনে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ডবলমুরিং আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমকে সমর্থন করেন বলে অভিযোগ করেন আফসারুল আমীন। তবে নির্বাচনে আফসারুল আমীন জয়ী হন। পরে মন্ত্রীও হন। আর মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম লাঙ্গল মার্কা নিয়ে মাত্র ৮ হাজার ভোট পান। তখন থেকে আফসার ও মহিউদ্দিন চৌধুরীর সম্পর্কের অবনতি হয়।

অন্যদিকে গত ৩১ ডিসেম্বর নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে প্রকাশ্যে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন নগরীর ডবলমুরিং আসনের সংসদ সদস্য ডা. আফসারুল আমীন। এই শহরে মন্ত্রীকে ভাড়াটে বলেও অবহিত করেন তিনি। বাদানুবাদের একপর্যায়ে তিনি মন্ত্রীর দিকে তেড়েও যান। ফলে মোশাররফ-মহিউদ্দিনের সখ্যের বিপরীতে আ জ ম নাছির-ডা. আফসারুলের সখ্যতা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, চলমান গৃহ কর পুনর্মূল্যায়ন সংক্রান্ত বিষয়, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের টানা সমালোচনার জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। গত কোরবানির ঈদের দিন পড়ে গিয়ে কোমরে ব্যথা পান মেয়র। তখন থেকে তিনি আন্দরকিল্লার বাসভবনে বসেই দাপ্তরিক ও অন্যান্য কাজ করছেন।

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আমাকে একটি চিঠি দিয়েছেন। আমি তার আমলের গৃহ কর থেকে শুরু করে সব বিষয় নগরবাসীর কাছে তুলে ধরব। এ জন্য আগামী সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।