• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

যে পথে হাঁটতে চায় বিএনপি

প্রকাশ:  ০৩ অক্টোবর ২০১৭, ১৫:০১
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
প্রিন্ট

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমঝোতার কথা নাকচ করায় বিএনপির পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। তাঁরা বলছেন, এখন কঠোর আন্দোলন ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। তবে দলটির নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, দাবি আদায়ে বিএনপি এখনো সমঝোতার পথেই হাঁটতে চায়। রাজপথের আন্দোলন অনেক পরের ব্যাপার।

গত ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতার কথা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি এ-ও বলেছেন, ভবিষ্যতে কেউ যেন এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে তাঁর কাছে না আসে।

প্রধানমন্ত্রীর এই মনোভাবের পর বিএনপির নেতারা বলছেন, তাঁরা যদিও মনে করেন আওয়ামী লীগ সমঝোতায় আসবে না। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে এখনই শেষ অবস্থান বলে তাঁরা ধরে নিতে চান না। আরও কয়েক মাস তাঁরা নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে আলোচনা করার জন্য আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে যাবেন।

সমঝোতার প্রস্তাব নাকচ করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আলোচনার আর কোনো সুযোগ থাকে কি না, জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতার কথা বিএনপি বলে আসছে। দেশের ভালোর জন্য কথাগুলো বলা। প্রধানমন্ত্রী একা যদি জোর করে বলতে চান যে, না এ ব্যাপারে কোনো কথা বলব না এবং সেইভাবেই হবে, তাহলে সব দায়-দায়িত্ব তাঁর। বিএনপি বারবার সমঝোতার কথা বলতেই থাকবে।

শেষ পর্যন্ত দাবি না মানলে বিএনপি কী করবে? এই প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার পরবর্তীকালে আমরা এটা বলতে পারব। তারপর আমরা দলীয় ফোরামে কখন কী করব, সেটা নিয়ে আলোচনা করব। উনি (প্রধানমন্ত্রী) যদি না শোনেন, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব, তবে সেটা অনেক পরের ব্যাপার।’

২০১৮ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার আগ পর্যন্ত বিএনপি করবে এমন আলোচনা দলের সব পর্যায়ে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখানে আছেন দলটির আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। দলের এই দুই শীর্ষ নেতা করণীয় নিয়ে কি চিন্তা করছেন সে সম্পর্কেও পরিস্কার কোনো ধারণা নেই নেতাদের।

নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার নিয়ে সমঝোতা না হলে দলীয়ভাবে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, প্রধানমন্ত্রী যদি তাঁদের দাবি না শোনেন, তখন আন্দোলনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। তবে সেটা অনেক পরের ব্যাপার।

এসব বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে ফিরে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত করণীয় ঠিক করবেন। সেই অনুযায়ী দল পরিচালিত হবে। ওই নেতা বলেন, নির্বাচনের এখনো এক বছরের বেশি বাকি আছে। নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে বিএনপি কী ধরনের আন্দোলন করবে, তা আগামী বছরের জুলাইয়ের আগে সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই সময় পর্যন্ত এই দাবিতে জনমত গঠন ও সাংগঠনিক কাজ চলবে। নির্বাচনের অংশ নেওয়ার প্রস্তুতিও অনেকটা এগিয়ে রাখা হবে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের একটি রূপরেখা জনগণের সামনে উপস্থাপন করার মধ্য দিয়েই মূলত সহায়ক সরকারের আন্দোলন শুরু হবে। তবে এই আন্দোলন হবে একেবারেই শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে। রূপরেখা নভেম্বরে উপস্থাপন করা হবে। ডিসেম্বর থেকে আগামী জুন পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের বেশ কিছু নির্বাচন হওয়ার কথা আছে। বিশেষ করে খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আগামী বছরের জুনের মধ্যে হয়ে যাবে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ সিটির নির্বাচন হওয়ার কথা আছে। তাই অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো বিএনপিকে তখন এই নির্বাচনগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। এসব নির্বাচনে জয়-পরাজয়ও দলকে করণীয় নির্ধারণে সহায়তা করবে।

দলটির নেতারা বলছেন, সরকার বিগত সময়ে যেভাবে নির্বাচন করে এসেছে, তাতে এই সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মনে হয় না। সে ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ তা পর্যবেক্ষণ করবে। ভোট সুষ্ঠু না হলে বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবি জোরালো হবে। দেশে-বিদেশে এই দাবি অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। দলটির নেতারা বলছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী বছরের জুন-জুলাই পর্যন্ত বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়া, সহায়ক সরকার নিয়ে জনমত তৈরি, সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানো, সদস্য সংগ্রহ অভিযান, দেশের
বিভিন্ন স্থানে চেয়ারপারসনের সফর, কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্বাচনী আসন ওয়ারি সফরের মতো কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি ২০ দলের আকার বাড়ানোও চেষ্টা করবেন তাঁরা।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রথম থেকেই সমঝোতার প্রস্তাব নাকচ করে আসছেন। একক কর্তৃত্ববাদী একজন শাসক, তিনি এর চেয়ে আর কী-ই বা বলবেন। রিজভী বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) কীভাবে নির্বাচন করেন, সেটা জনগণ বোঝে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা বোঝেন যে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন কতটুকু শান্তিপূর্ণ হয় আর কতটুকু রক্তাক্ত হয়। এটা তো সবাই দেখেছে।’ রিজভী বলেন, সরকার আলাপ-আলোচনা না করলে তখন দলীয়ভাবে পরবর্তী করণীয় কী হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকেই আগামী নির্বাচন করবে বলে জানিয়েছে। আর তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি চায় একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। যদিও সেই নিরপেক্ষ সরকারের রূপ কেমন হবে, তা বিএনপি এখনো সাধারণ মানুষের কাছে পরিষ্কার করতে পারেনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এই দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। পরে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে ব্যর্থ হলে দলটি রাজনৈতিক মহলে রাজপথের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিতি চায়।

বিএনপির অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা মনে করেন ২০১৪ সালের মতো আবার একটি একতরফা নির্বাচন করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকারকে কিছু না কিছু ছাড় দিতেই হবে।

সূত্র: প্রথম আলো

সর্বাধিক পঠিত