• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

করোনা ভাইরাস নারীবান্ধব

প্রকাশ:  ০৭ জুন ২০২০, ১২:৪৮
হাসান আলী
প্রিন্ট

পৃথিবীতে এ প্রথম একটি ভাইরাস পাওয়া গেলো যা তুলনামূলক বিচারে নারীবান্ধব। আক্রান্ত এবং মৃত্যুর দিক থেকে বিবেচনায় নিলে আমার এ কথার সত্যতা খুঁজে পাবেন। প্রকৃতি জানে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি উৎপাত পুরুষই করে। এক ডোনাল্ড ট্রাম্পের যন্ত্রণায় সবচেয়ে উন্নত দেশ কাহিল হয়ে পড়েছে। অন্যান্য দেশের পুরুষ নেতৃবৃন্দ প্রায় একই ধাঁচের। তাঁরা ট্রাম্পের মতো এতোটা খোলামেলা না।

আমেরিকা উন্নত জীবন ও রুচি সংস্কৃতির দেশ, তাই আমাদের কাছে এতো প্রিয়। যারা আমেরিকার সিটিজেনশিপ নিয়েছেন তাদের পরিবারের লোকজনের ভাবসাব-ই আলাদা। প্রবাসে থাকা কিছু বাঙালি দেশে থাকা বাংলাদেশিদের কমবেশি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন। অবশ্য কিছু গুরুত্বহীন প্রবাসী বুদ্ধিজীবী মাঝে মধ্যে আমাদের নসিহত করেন। তারা দেশ নিয়ে সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, কিন্তু দেশে থাকেন না। মনে করিয়ে দেন ঢাকা পৃথিবীর দ্বিতীয় বসবাস অনুপযোগী শহর। এ নসিহতকারীরা অধিকাংশই পুরুষ। দু-একজন ছাড়া বাকিরা গোঁফহীন! শুনতে পাই এদের স্ত্রীরা উচ্চ বেতনে চাকরি করেন।

পুরুষ দয়াপরবশ হয়ে নারীকে সবচেয়ে সহজ দুটি কাজ দিয়েছেন। একটি সন্তান লালন-পালন, আরেকটি রান্নাঘর। দুঃসাহসী কিছু নারী পুরুষের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে। একইসঙ্গে সন্তান লালন এবং রান্না ঘরের দায়িত্ব নিজ হাতে রেখেছে।

এ প্রথম পৃথিবীর সকল পুরুষ নারীর প্রতি হাজার বছরের লকডাউনের গভীর তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পেরেছে। নারীর স্বাধীনতার (!) জন্যে পুরুষ ব্যাকুল ছিলো, কিন্তু নারী নিতে চায়নি। এ স্বাধীনতা হলো স্বেচ্ছায় গৃহত্যাগ অথবা আত্মহনন। পুরুষ প্রেম-পিরিতের কথা বলে নারীকে সংসারে আকৃষ্ট করে আর নারী মোহগ্রস্ত হয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়। বিশ্বাস স্থাপন করে একদল নারী পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়।

দীর্ঘদিন ধরে নারী আশা করতো, পুরুষ কাজ শেষে প্রথমেই ঘরে ফিরে আসবে। পুরুষ নানা অজুহাতে ঘরে ফিরে আসতে বিলম্ব করতো। বেশিরভাগ মিটিং হতো সন্ধ্যার পর। গুরুত্বপূর্ণ বয়সী পুরুষ বড় বেশি ব্যস্ত ছিলো। রাতের ক্লাবগুলোতে পুরুষের হৈ-হুল্লোড় কিছুটা বেশি ছিলো। কেউ কেউ নিজের অফিসকে ছোটখাটো ক্লাবের মতো বানিয়ে ফেলেছিলো। পার্লার, শপিং, আড্ডা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে নারী সংযত হয়েছে।

আশঙ্কা করা হয়েছিলো লকডাউনের ফলে বহু সংসার ভেঙ্গে যাবে। এ আশংকা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। পুরুষ আর আগের মতো মোবাইল ফোনের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখে না। ফোন আসলে আগ্রহ নিয়ে ছুটে যায় না, কারণ শয়তানগুলো জানে পুরুষ এখন ঘরবন্দী।

পুরুষ পরিবারের সাথে দীর্ঘসময় থাকার ফলে একে-অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং দরদী হয়ে উঠেছে। বদঅভ্যাসগুলো চর্চার অভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা অনেক কমে গেছে। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত ছুটে চলা খানিকটা হলেও আটকে গেছে। নারীর বিরুদ্ধে যারা সভা-সমাবেশে কথা বলতো তারা অবসরে গেছেন।

নানা রকম পোশাক অলংকার দিয়ে সাজানোর মিথ্যা গল্প বলে নারীকে ব্যক্তিত্বহীন করার অপচেষ্টা থেমে আছে। নারীকে পুরুষের চোখে আকর্ষণীয় হবার নানা প্রেরণামূলক বিজ্ঞাপন অচল হয়ে পড়েছে। ডিম, দুধ, ফলমূল সহজলভ্য হওয়ায় নারীর স্বাস্থ্য আগের চাইতে ভালো।

স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসব অকল্পনীয়ভাবে বেড়েছে। গ্রামের নারীদের ঋণের কিস্তি দেবার ভয়ঙ্কর চাপ আপাতত নেই। করোনার জয় হোক!

লেখক : প্রবীণ বিশেষজ্ঞ।

সর্বাধিক পঠিত