• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

‘ধ্রুবতারা’ হতে পারবেন আফিফ?

প্রকাশ:  ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৩:১৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

তারকার জন্ম এভাবেই হয়! ঘোর অন্ধকারে হঠাৎই আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে। হতাশার বাতাবরণ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা আশার আলোকরশ্মি হয়ে। বৃষ্টিধোয়া এক রাতে যেমন বাংলাদেশের ক্রিকেটাকাশে নতুন তারকা হিসাবে আবির্ভূত হলেন আফিফ হোসেন।

কী এমন করেছেন যে, এই বাঁধনহীন উচ্ছ্বাস! তারকা অভিধায় তাঁকে ভূষিত করে ফেলা! শুধু একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচই তো জিতিয়েছেন, তাই না? সেটিও আবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, বিশ্ব ক্রিকেটের আরেক ‘কেনিয়া’ হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করা যে দলের বিপক্ষে জয় অনেক দিনই বাংলাদেশের ক্রিকেটে কোনো অনুরণন তোলে না। সেই জয়ের নায়ককে নিয়ে এমন কাব্যগাথা! না, বাংলাদেশের সাংবাদিকদের বাড়াবাড়ির অভ্যাসটা আর গেল না! এমন কিছু ভেবে থাকলে বুঝতে হবে, বাংলাদেশের ক্রিকেটের হালহকিকত সম্পর্কে আপনি একেবারেই ওয়াকিবহাল নন।

নিউজিল্যান্ড তখন বাংলাদেশের কাছে রীতিমতো পরাশক্তি। জিম্বাবুয়ে এখন মোটেই তা নয়। তারপরও এই জয়টা বিশেষ হয়ে উঠছে এটির ধরনের কারণে। ১৪৫ রানের জন্য খেলতে নেমে ৬০ রানে ৬ উইকেট নেই—এই অবস্থায় ব্যাটিং করতে নেমে এখনো বিশ না ছোঁয়া এক তরুণ নিষ্কম্প স্নায়ু আর দুর্দান্ত স্ট্রোক প্লের এক প্রদর্শনীতে ম্যাচ জিতিয়ে দেবেন, এই ঘটনা প্রতিদিন ঘটে না। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তো বলতে গেলে কখনোই না। এমন অবস্থা থেকে প্রতিপক্ষ দলের কাউকে ম্যাচ বের করে নিয়ে যেতে অনেকবারই দেখেছে বাংলাদেশ। নিজেরা এই অভাবিত আনন্দের স্বাদ পেয়েছে কমই। ৮ নম্বর ব্যাটসম্যানের ২০০ স্ট্রাইক রেটের এক হাফ সেঞ্চুরিতে কখনো তা পেয়েছে বলেই তো মনে পড়ছে না।

কোনো কিছুকেই অসম্ভব না ভাবার দুঃসাহস শুধু তারুণ্যেরই অহংকার। আফিফের ব্যাটেও এদিন সেই দুঃসাহস। প্রথম বলটিকেই বোলারের মাথার ওপর দিয়ে তুলে দেওয়া আর ম্যাচের দোদুল্যমান অবস্থায় কাইল জার্ভিসের বলে থার্ডম্যান আর ফাইন লেগ দিয়ে টিপিক্যাল টি-টোয়েন্টি শটে মারা বাউন্ডারিতে যেটির সুন্দরতম বহিঃপ্রকাশ। ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ের মতো আফিফের নিরাবেগ মুখচ্ছবিটাও টেলিভিশন দর্শকদের মনে গেঁথে যাওয়ার কথা। উইকেটে তাঁর সঙ্গে হেঁটে গিয়েছে বছর দেড়েক আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় বলেই শূন্য রানে আউট হয়ে যাওয়ার স্মৃতি। ভেতরে সেই নার্ভাসনেস না থেকে পারেই না, তবে আফিফকে দেখে তা বোঝার ছিল না। উল্টো সেই ব্যর্থতাকে ‘ব্যতিক্রম’ বলে প্রমাণের প্রতিজ্ঞাই যেন ফুটে বেরোল তাঁর শরীরী ভাষা থেকে। আসলে তো ‘ব্যতিক্রম’ই ছিল। এর আগ পর্যন্ত আফিফের কাছে ‘অভিষেক’ মানেই অবধারিতভাবে সেটি রাঙিয়ে দেওয়া। ২০১৬ সালে বিপিএলে অভিষেকেই তাঁর ৫ উইকেট। পাঁচ শিকারের মধ্যে ছিলেন ক্রিস গেইল নামে জনৈক জ্যামাইকানও। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেকে ৫ উইকেট নেওয়ার সেই কীর্তি এখনো অম্লান। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেছেন, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রথম মৌসুমেই করেছেন হ্যাটট্রিক।

এই ম্যাচে আট নম্বরে নামলেও আদতে ওপেনার। বাঁহাতি বলে ‘ভবিষ্যতের তামিম ইকবাল’ তকমাও লেগেছে গায়ে। তবে বিকেএসপি ব্যাকগ্রাউন্ড, স্পিনিং অলরাউন্ডার এবং আবেগের ন্যূনতম প্রকাশ মিলিয়ে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে বরং আফিফের বেশি মিল খুঁজে পাচ্ছি। একদিন সত্যি সত্যি ‘সাকিব’ হতে পারবেন কি না, এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের হাতে তোলা। একই সূত্রে গাঁথা আরেকটি প্রশ্নের উত্তরও। আফিফ হোসেনের ডাকনাম ধ্রুব। ধ্রুব কি ধ্রুবতারা হয়ে উঠতে পারবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাকাশে?

সর্বাধিক পঠিত