ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের ৬ দাবি
অবিলম্বে বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা ও অপপ্রচার বন্ধ করাসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতি। (বুধবার) ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া এক প্রতিবাদলিপিতে এসব দাবি জানানো হয়।বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির অন্যান্য দাবিগুলো—
• ভারতে বাংলাদেশ হাই কমিশন, উপ হাই কমিশনসহ সকল বাংলাদেশি স্থাপনার সুষ্ঠু নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে হবে
• শেখ হাসিনার সকল অপ-তৎপরতা বন্ধ করা ও চাহিবামাত্র তাকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে
• সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে হবে
• হাসিনা-মোদির গোপন চুক্তি থাকলে তা প্রকাশ করা ও ট্রানজিট, বিদ্যুৎসহ সকল বৈষম্যমূলক চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করা
• বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করে দেশেই বিশ্বমানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশের নিকততম প্রতিবেশী ভারত। ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ-ভারত পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। অনস্বীকার্য যে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থন আমাদের স্বাধীনতা অর্জনকে সহজ করেছে। কিন্তু বিগত ১৫ বছর ধরে অবৈধ ফ্যাসিবাদী সরকারকে সর্ববিধ সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে ভারত সরকার বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যা ও মাফিয়া রাজত্ব প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করে এসেছে। আর অন্যায়ভাবে হাতিয়ে নিয়েছে বহু অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুবিধা। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে এবং তাকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে ভারত সরাসরি বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
আরও বলা হয়, ভারতীয় মিডিয়াগুলোতে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভিত্তিহীন নেতিবাচক অপপ্রচার চলছে। সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত আক্রমণ ও অত্যাচারের কাল্পনিক কাহিনী প্রচার করা হচ্ছে। অথচ এ দেশে স্মরণাতীত কাল থেকে হিন্দু-মুসলমানসহ সকল সম্প্রদায় সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সাথে বসবাস করছে। লংখ্যালঘু ইস্যু তৈরি করে এ দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রের তকমা দেওয়ার জন্য ভারত সরকারের মদদে ভারতীয় একটি মহল চেষ্টা করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা নাশকতার ইন্ধন দিচ্ছেন উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনা ভারতের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাশকতামূলক কাজ করার ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছেন, বিভিন্ন দেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আপত্তিকর ও দেশদ্রোহিতামূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যাতে এ ধরনের বক্তব্য রাখতে না পারেন, সে সংক্রান্ত বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ ভারত সরকার অগ্রাহ্য করছে।
হাই কমিশনগুলোতে ভারত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে উল্লেখ করে বলা হয়, কলকাতা এবং ত্রিপুরায় বাংলাদেশের উপ ও সহকারী হাই কমিশনের নিরাপত্তা দিতে ভারত সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে আমাদের প্রিয় জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে, যা দেখে জাতি হিসেবে আমরা বাংলাদেশিরা মর্মাহত হয়েছি।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ভারত বৈরিতামূলকভাবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভিসা প্রদান বন্ধ রেখেছে। অন্যদিকে, ভারতীয় অনেক হাসপাতাল বাংলাদেশিদের জন্য চিকিৎসাসেবা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। মনে রাখা প্রয়োজন, এসব ভারতীয় কুপ্রতিবেশিতা আমাদের চেয়ে ভারতের ক্ষতি করছে বেশি। এছাড়া অব্যাহত গতিতে সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। বারংবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তারা এ নির্মমতা চালিয়ে যাচ্ছে।
ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চায় আমরা এরূপ আচরণ বরদাস্ত করব না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সরকারের ঐক্য প্রক্রিয়াকে আমরা পূর্ণ সমর্থন করে এর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনে আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমরা এমন এক বাহিনীর উত্তরসূরি যারা রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে সর্বপ্রথম পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। আবারও প্রয়োজন হলে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।
এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির সভাপতি সাবেক ও ডিআইজি এম আকবর আলি খান, সংগঠনের মহাসচিব ও সাবেক এসপি মিয়া লুৎফর রহমান, সংগঠনের সদস্য ও সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক এসপি আব্দুর রহমান প্রমুখ।
তারও আগে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে রাজারবাগের পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টারের সামনে থেকে পদযাত্রা করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আসেন তারা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদলিপি জমা দেন।