নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত পাকিস্তান


২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, পাকিস্তান ও ইরান একে অপরের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এর ফলে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত সামরিক উত্তেজনা দেখা দেয়। এর ১৭ মাস পর ইরানে ইসরাইলের হামলার তীব্র নিন্দা জানাল পাকিস্তান। এই হামলার ফলে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও ইসলামাবাদের উদ্বেগ বাড়ছে বলে জানান বিশ্লেষকরা।
১৩ জুন ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়ে একাধিক ইরানি জেনারেল এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করার পর, পাকিস্তান ইসরাইলি পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানায়।
এমনকি ইসলামাবাদ ইসরাইলি হামলাকে ইরানের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং এগুলোকে প্রকাশ্য উস্কানি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
১৩ জুন ইরানে ইসরাইলের হামলার পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, 'আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখা, অবিলম্বে এই আগ্রাসন বন্ধ করা এবং আক্রমণকারীকে তার কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি করা।'
ইরানের উপর ইসরাইলি আক্রমণ এবং তেহরানের পাল্টা হামলা যখন ষষ্ঠ দিনে গড়িয়েছে, তখন বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান সংঘাত ইসলামাবাদে আতঙ্কের জন্ম দিচ্ছে, যার মূলে রয়েছে তেহরানের সাথে তার জটিল সম্পর্ক এবং পাকিস্তান সীমান্তের কাছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর বিমান প্রভাব বিস্তার নিয়ে আরও বেশি অস্বস্তি।
ইরান-ইসরাইলি সংঘর্ষে মানুষের প্রাণহানি ক্রমশ বাড়ছে। ইরানের উপর ইসরাইলের হামলায় ইতিমধ্যেই ২২০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত এক হাজারেরও বেশি মানুষ। প্রতিশোধ হিসেবে, ইরান ইসরাইলি ভূখণ্ডে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যার ফলে ২০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ব্যাপক সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে।
পাকিস্তান, যার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তান হয়ে ইরানের সাথে ৯০৫ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, তেহরানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছে। একই সাথে ১৫ জুন থেকে বেলুচিস্তানে পাঁচটি সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ৫০০ জনেরও বেশি পাকিস্তানি নাগরিক, ইরান থেকে ফিরে এসেছেন।
এদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্ত কার্যকরভাবে সিল করার সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে বেলুচিস্তানের নিরাপত্তা নিয়ে পাকিস্তানের উদ্বেগ।
মে মাসে ভারতের সাথে পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত সামরিক সংঘাতের সময়ও ইরান সতর্কতার সাথে পক্ষ নেয়া এড়িয়ে চলে।
সোমবার, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সংসদে ভাষণ দেন। পাকিস্তান ইরানের সাথে কীভাবে কথা বলছে তার উপর জোর দিয়ে পরামর্শ দেন, ইসলামাবাদ ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে সামরিক শত্রুতা বন্ধে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কূটনৈতিক ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক।
পর্যবেক্ষকদের মতে, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হল বেলুচিস্তানের সম্ভাব্য পরিণতি, যা একটি সম্পদ সমৃদ্ধ কিন্তু অশান্ত প্রদেশ। তেল, গ্যাস, কয়লা, সোনা এবং তামা সমৃদ্ধ, বেলুচিস্তান আয়তনের দিক থেকে পাকিস্তানের বৃহত্তম কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে ছোট প্রদেশ, যেখানে প্রায় দেড় কোটি লোক বাস করে।
১৯৪৭ সাল থেকে, বেলুচিস্তানে কমপক্ষে পাঁচটি বিদ্রোহ হয়েছে, যার সর্বশেষ শুরু ২০০০ সালের গোড়ার দিকে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো স্থানীয় সম্পদের একটা বড় অংশ এবং স্বাধীনতার দাবি করেছে। যার ফলে কয়েক দশক ধরে সামরিক দমন-পীড়ন চলছে।
অন্যদিকে, বেলুচ জাতীয়তাবাদীরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে স্থানীয় উন্নয়নকে উপেক্ষা করে সম্পদ শোষণের অভিযোগ তুলেছেন। বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো বিশেষ করে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এবং বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএ), স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে।
সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো আব্দুল বাসিত আল জাজিরাকে বলেন, 'পাকিস্তানের ভেতরে একটি বড় উদ্বেগ রয়েছে যে, যুদ্ধ আরও তীব্র হলে, বিএলএ এবং বিএলএফের মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা, যাদের অনেকেই ইরানের সীমান্তবর্তী এলাকায় বাস করে, তারা দুই দেশের মধ্যে ভাগ করা সীমানা অতিক্রম করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সুরক্ষা খোঁজার চেষ্টা করতে পারে।
তাই অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণের জন্য পাকিস্তানকে ক্রসিং বন্ধ করতে হয়েছিল। তারা সফলভাবে এটি করতে পারে কিনা তা দেখার বিষয়, তবে অন্তত এটিই তাদের লক্ষ্য বলে জানান তিনি।