বছরের প্রথম অধিবেশনে যাননি ২৯ এমপি
বছরের প্রথম অধিবেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে একদিনের জন্যও উপস্থিত হতে পারেননি সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ ২৯ জন সংসদ সদস্য। ১৮ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১২ কার্যদিবস চলা ওই অধিবেশনে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিদিন উপস্থিত ছিলেন।
বছরের প্রথম এই অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংবিধান অনুযায়ী ভাষণ দিয়েছেন। পরে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সংসদে ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরও একদিনের জন্য যেতে পারেননি। অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। আবার কেউ জেলে থাকায় আর অনেকে বয়স্ক হওয়ায় সংসদে যোগ দিতে পারেননি বলে জানা গেছে। ফলে তাদের কেউই এই আলোচনায় অংশ নিতে পারেননি।
সংসদের লবিতে হাজিরা বই বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা ওই অধিবেশনে সংসদ সদস্য উপস্থিতির গড় ছিল ১৩৪ দশমিক ৬ জন। এর মধ্যে ১৮ জানুয়ারি অধিবেশন শুরুর দিন সবচেয়ে বেশি সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সেদিন ২৬২ জন উপস্থিত ছিলেন। ২০ জানুয়ারি ১০৫ জন উপস্থিত ছিলেন, যা এই অধিবেশনে সর্বনিম্ন উপস্থিতি।
এই অধিবেশনে আওয়ামী লীগের এমপি এন আশিকুর রহমান (রংপুর-৫), উম্মে কুলসুম স্মৃতি (গাইবান্ধা-৩), ওমর ফারুক চৌধুরী (রাজশাহী-১), আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান (কুষ্টিয়া-১), শেখ তন্ময় (বাগেরহাট-২), পঞ্চানন বিশ্বাস (খুলনা-১), এস এম জগলুল হায়দার (সাতক্ষীরা-২), নুরুন্নবী চৌধুরী (ভোলা-৩), আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ (বরিশাল-১), মো. একাব্বর হোসেন (টাংগাইল-৭), মো. হাফেজ রুহুল আমীন মাদানী (ময়মনসিংহ-৭), মো. কামরুল ইসলাম (ঢাকা-২), সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯), সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী (ফরিদপুর-২), জয়া সেনগুপ্তা (সুনামগঞ্জ-২), ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর (চাঁদপুর-১), এইচ এম ইব্রাহিম (নোয়াখালী-১), দিদারুল আলম (চট্টগ্রাম-৪), এম আবদুল লতিফ (চট্টগ্রাম-১১), শামসুন নাহার (মহিলা আসন-১৩), সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন (মহিলা আসন-৩৬) যোগ দেননি।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির গোলাম মোহাম্মদ কাদের (লালমনিরহাট-৩), বেগম রওশন এরশাদ (ময়মনসিংহ-৪), এ কে এম সেলিম ওসমান (নারায়ণগঞ্জ-৫), বেগম মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী (মহিলা আসন-৪৫) সংসদে যাননি।
বিএনপির মো. মোশাররফ হোসেন (বগুড়া-৪), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) হাসানুল হক ইনু (কুষ্টিয়া-২), বিকল্প ধারার মাহী বি চৌধুরী (মুন্সীগঞ্জ-১) ও স্বতন্ত্র এমপি মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলসহ (লক্ষ্মীপুর-২) মোট ২৯ জন অনুপস্থিত ছিলেন। পাপুল ফৌজদারি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে কুয়েতের জেলে। এজন্য সম্প্রতি তার সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।
বছরের প্রথম ও শীতকালীন অধিবেশেনে রওশন এরশাদের অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা জাগো নিউজকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের কারোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সংসদে যেতে পারেননি। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদও বয়স্ক ব্যক্তি। এজন্য তিনি সংসদে যাননি। তবে এখন দুজনই ভালো আছেন।’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, এ অধিবেশনে ১৩৩ জন এমপি রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নেন। মোট ২৫ ঘণ্টা ২৫ মিনিট আলোচনা হয়। এই অধিবেশনে মোট ছয়টি আইন পাস করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উত্তরদানের জন্য মোট ৮৪টি প্রশ্ন পাওয়া যায়। এর মধ্যে তিনি ২৮টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের জন্য ১ হাজার ৬৮৯টি প্রশ্ন পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৮২০টি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তারা।
জানা যায়, করোনার কারণে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংসদের অধিবেশন চলে। অধিবেশনে যোগ দেয়া সব এমপির কারোনা পরীক্ষা করাতে হয়। এছাড়া কে কবে যোগ দেবেন তারও তালিকা করা হয়। এজন্য অনেকে অধিবেশনে যেতে পারেননি বলে সংসদের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।