• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

সংবাদ বিশ্লেষণ : যুক্তরাজ্যে ইউনূস সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা?

প্রকাশ:  ১২ জুন ২০২৫, ১৩:০৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার প্রধান এখনও যুক্তরাজ্যে। তার এই সফর ইতোমধ্যে বেশ বিতর্ক তৈরি করেছে। এই সফরটি সরকারি না ব্যক্তিগত এই আলোচনা এখনও চলমান। সরকারি হলে বিমানবন্দরে তাঁকে সরকারিভাবে বরণ করা হতো। কিন্তু তা হয়নি। তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন সে দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। একটি পদক আনতে তিনি সেখানে গেছেন। তাঁর হাতে পদক তুলে দেওয়ার কথা রাজা চার্লস-এর। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সাথে ড.ইউনুসের দেখা করা নিয়ে। বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে অনেক চেষ্টা সত্বেও শেষ পর্যন্ত বৃটিশ পত্রিকাগুলো খবর দিয়েছে যে, বাংলাদেমের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধে সাড়া দেননি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।  যুক্তরাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে এখন অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কোনো পরিকল্পনা কিয়ার স্টারমারের নেই। এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তাঁরা।

ক্ষমতায় বসার শুরু থেকেই নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনুসের প্রতি দেশবাসীর উচ্চাশা এই যে, আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক পরিচিতি থাকা একমাত্র বাঙালি যেহেতু দেশের সরকার প্রধান হয়েছেন, নিশ্চয়ই বাংলাদেশ বিশ্ব পরিসরে আলাদা মর্যাদা পাবে। মর্যাদা ভূলুন্ঠিত হয়েছে এটা বলা না গেলেও বলতে হবে যে সে রকম সাফল্য এই দশ মাসে দৃশ্যমান হয়নি। এই ১০ মাসে তিনি ১১ বার বিদেশ গেছেন। এর মধ্যে চীন ছাড়া বাকি কোনটিই সরকারি সফর ছিল না। লন্ডন সফরের আগে তিনি জাপান গিয়েছিলেন। সেটিও ছিল তাঁর ব্যক্তিগত সফর; দিপাক্ষিক নয়। সেখানে মূলত তিনি গিয়েছিলেন নিকে এশিয়া ফোরামের একটা সেমিনারে যোগ দিতে। পরে দুই দেশের রাষ্ট্রদূতের চেষ্টায় সেখানে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার একটা সাক্ষাতের ব্যবস্থা হয়।  এবার সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে।

এটিকে বিবেচনা করা হচ্ছে কূটনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবেই। প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতকার নিয়ে যে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে তার কারণ বাংলাদেশ নিজেই।  প্রেস সচিব শফিকুল আলম বললেন, দুই সরকার প্রধানের দেখা হওয়া অনিশ্চিত, কারণ কিয়ার স্টারমার এখন লন্ডনে নেই, আছেন কানাডায়। কিন্তু সাথে সাথেই প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি লন্ডনেই আছেন, কানাডায় যাবেন শনিবার। তিনি যখন বলেছিলেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার কানাডায় অবস্থান করছেন এবং সে কারণে ইউনূসের সঙ্গে তাঁর কোনো সাক্ষাৎ হবে না, সাথে সাথেই সামাজিক মাধ্যম, এ প্রমাণ চলে আসে যে স্টারমার লন্ডনেই আছেন। সবশেষ বৃটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা Financial Times শিরোনাম করল— "Keir Starmer declines to meet Bangladesh leader tracking down missing billions!"

প্রশ্ন হলো কিয়ার স্টারমার আমাদের প্রধান উপদেষ্টাকে কেনো গুরুত্ব দিলেন না?  ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, লন্ডনে সফরত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধে সাড়া দেননি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে পাচার হওয়া কয়েক বিলিয়ন ডলার উদ্ধারের প্রচেষ্টায় বৃটেন সরকারের জোরালো সমর্থন আদায়ের পরিপ্রেক্ষিতে স্টারমারের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা জানায় বাংলাদেশ। তবে তাতে সাড়া দেননি স্টারমার। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, কেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থ ও বোঝাপড়ার আলোচনায় বসতে পারেন না? কেন সরকারিভাবে এত ঢাকঢোল পেটানো হলো, অথচ পরিণামে এই প্রত্যাখ্যান পেতে হলো? প্রেস উইংই বা কেন পরিষ্কারভাবে কেন তথ্য দিতে পারল না?

প্রধান উপদেষ্টার মতো একজন বিশ্বব্যাপী পরিচিত ব্যক্তিত্বকে এ ভাবে উপেক্ষিত হতে দেখাটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য দুঃখজনক। এটি শুধু ব্যক্তিগত বিষয় নয়, রাষ্ট্রের জন্যও মর্যাদার ইস্যু। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মতো নোবেলজয়ী একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যে আচরণ সেখানে বসবাসরত বাঙালিরা করেছে, এবং কিয়ার স্টারমার যে নীরবতা দেখিয়েছেন তা দু:খজনক।

সর্বাধিক পঠিত