নোট-গাইড নিষিদ্ধ করে শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত
পাঠ্যপুস্তকের আদলে নোট-গাইড নিষিদ্ধ করে ‘শিক্ষা আইন ২০২০’-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এটি চূড়ান্ত করা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে শুরু হয়ে বৈঠক চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব, অতিরিক্ত সচিব প্রমুখ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘ বৈঠকের পর অবশেষে শিক্ষা আইন-২০২০-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। ছোটখাটো বানান সংশোধন ছাড়া আর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। শিগগিরই এটি মন্ত্রিপরিষদ সভায় পাঠানো হবে। এরপর ভাষাগত সংশোধনের জন্য আইন মন্ত্রণালয় হয়ে জাতীয় সংসদে উত্থাপন হবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে এটি কার্যকর করা হবে।
জানা গেছে, শিক্ষা আইনে শিক্ষার্থীদের জন্য সব ধরনের নোট, গাইড নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে সহায়ক বই প্রকাশ করা যাবে। শিক্ষকরা নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট, কোচিং করাতে পারবেন না। তবে ফ্রিল্যান্সিং কোচিং চালাতে বাধা থাকবে না। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলাকালে কোচিংয়ে যেতে পারবেন না।
প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়ার ১৬ ধারার ১ ও ২ উপ-ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ধরনের নোট বই বা গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে না। এই বিধান লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
উপধারা ৩-এ বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নোট বই বা গাইড বই কিনতে বা পাঠে বাধ্য করলে বা উৎসাহ দিলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, ব্যবস্থাপনা কমিটি বা পরিচালনা কমিটির সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক এখতিয়ারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
উপধারা ৪-এ বলা হয়েছে, সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে সহায়ক পুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে। প্রস্তাবিত আইনের ৩০ ধারার ১ উপ-ধারায় বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট টিউশনের মাধ্যমে পাঠদান করতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে অভিভাবকদের লিখিত সম্মতিতে স্কুল সময়ের আগে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা যাবে।
২০১১ সাল থেকে শিক্ষা আইন নিয়ে কাজ শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে একাধিকবার মতামত নেয়ার পর খসড়া তৈরি হয় এবং একবার মন্ত্রিসভায়ও উপস্থাপন করা হয় কিন্তু নানা অসঙ্গতির কারণে তা ফিরিয়ে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জনতে চাইলে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাগো নিউজকে বলেন, নোট-গাইড নিষিদ্ধ করে সরকার একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষা আইনে সহায়ক বই তৈরির কথা বলা হলেও সেখানে অনুমোদনের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। এটি প্রকাশকদের জন্য জটিল হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, এত পরিমাণে বই অনুমোদন নিয়ে ছাপানো একটি জটিল বিষয়। তাই সরকারের পক্ষ থেকে একটি দিক-নির্দেশনা দেবে। যাদের সক্ষমতা থাকবে, তারা সহায়ক বই তৈরি করবে। আমরা আশা করি, শিক্ষামন্ত্রী আমাদের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।