চাঁদপুরে চালের বাজার স্থিতিশীল
আমদানিনির্ভর চাঁদপুরে চালের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও বর্তমানে পাইকারি বাজারে মোটা গুটি চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা। আর ভারত থেকে আমদানিকৃত (এলসি) মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৩ টাকা। গত বছর এদিনে আমদানি ছাড়া দেশে উৎপাদিত মোটা চাল বর্তমানের চেয়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ টাকা কম ছিলো বলে চাল ব্যবসায়ীরা জানান। তবে করোনাকালে প্রথম দিকে চালের বাজার অনেকটা কম থাকলেও করোনার কারণে চাল উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থায় নাজুক অবস্থা দেখা দেয়। তাই ধাপে ধাপে চালের বাজার বৃদ্ধি হতে দেখা যায়।
অনেকের মতে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাতারাতি চালের বাজার বাড়িয়ে দিয়ে বাড়তি মুনাফা করছেন বলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও চালের বাজার মূল্য পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি খাদ্য মন্ত্রণালয় ওএমএসের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে চাল বিতরণের ব্যবস্থাগ্রহণ করলেও দামের ক্ষেত্রে চালের বাজারে তার কোনো প্রভাব না পড়ায় খাদ্য মন্ত্রণালয় দেশে চাল আমদানির ব্যবস্থাগ্রহণ করে। ফলে গত ১ মাস ধরে চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি না পেয়ে বর্তমান সময় তা স্থিতিশীল থাকতে দেখা যায়।
সরকারি-বেসরকারিভাবে দেশে চাল আমদানি করায় এই সুফল পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করেন চাঁদপুর চাল ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোটাঃ রিপন সাহা। তিনি বলেন, চালের আমদানি শুল্ক যদি আরও কমিয়ে দেয়া হতো, তাহলে চালের দাম আরও কমে যাওয়ার সম্ভবনা ছিলো। চাল আমদানির ফলে চালের দামে তেমন কোনো প্রভাব না পড়লেও বাজার ঊর্ধ্বগতিতে এর অনেক প্রভাব পড়েছে বলে এই চাল ব্যবসায়ী মনে করেন।
একই দাবি করলেন পুরাণবাজারের আরেকজন পাইকারি চাল ব্যবসায়ী গাজী মহসীন (মিশু)। তিনি বলেন, চাঁদপুর একটি আমদানিনির্ভর মোকাম। বাজার অস্থিতিশীল থাকার দরুণ আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। যে দামে বিক্রি করছি পরবর্তী সময় আবার সেই দামেই কিনতে হচ্ছে। চাল আমদানি করায় চালের বাজারমূল্যে এর তেমন প্রভাব না পড়লেও বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে মোটা গুটি চাল ৪২ টাকা, ভারত থেকে আমদানিকৃত (এলসি) স্বর্ণা ৪৩ টাকা, মিনিকেট (এলসি) ৫৮ টাকা, পাইজাম ৪৫ টাকা, মিনিকেট ৬০ টাকা, ২৮ মিনিকেট ৫০ টাকা, নাজিরশাইল ৬২ টাকা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, ধানের বাজার বেশি হওয়ার দরুণ চালের এই বাজারমূল্য। বাজার বৃদ্ধিতে আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না। আমরা মোকাম থেকে চাল আমদানি করে থাকি। উৎপাদনশীল মোকাম যদি উৎপাদন ও বিপণনের ক্ষেত্রে বাজার নিয়ন্ত্রণে আন্তরিক হন আর প্রশাসন যদি তা লক্ষ্য রাখে তাহলেই রাতারাতি চালের বাজার বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করা সম্ভব। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রায় ১০ লাখ টন চাল আমদানির জন্যে ৩শ' জন ব্যবসায়ীকে অনুমতি দিয়েছিলো খাদ্য মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে চাঁদপুরের ৩ জন পাইকারি চাল ব্যবসায়ী ভারত থেকে ৪ হাজার টন চাল আমদানির সুযোগলাভ করেন। এরা হলেন মেসার্স পরেশ মালাকার ১ হাজার টন, মেসার্স মামনি ট্রেডার্স ১ হাজার টন আর রায় ট্রেডার্স ২ হাজার টন। বর্তমান সময়ের ইরি ও বোরো ফসল আমদানি হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এই আমদানির সময়সীমা বহাল থাকবে বলে জানা যায়। এই সময়ের মধ্যে এই সকল প্রতিষ্ঠান তাদের চাল আমদানি না করলে তাদের অনুমোদন বাতিল হয়ে যাবে। তবে রায় ট্রেডার্স ইতিমধ্যে আমদানি শুরু করলেও বাকি ২টি প্রতিষ্ঠান আমদানি কার্যক্রম শুরু করছেন কি না তা জানা যায়নি।
চাঁদপুরের অন্যতম চাল আমদানিকারক অঞ্জন কুমার দাস জানান, ভারত থেকে মোটা চাল দেশে আনতে এখনো ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। তাতে দেশে আনা প্রতি কেজি চালের দাম পড়ে যায় ৪২ টাকা থেকে ৪৩ টাকা। দেশে রাইস মিল মালিকদের উৎপাদিত চালও পাইকারি বাজারে এই দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। ফলে আমদানিকারকদের চাল আমদানিতে তেমন লাভ না হওয়ায় অনেকেই চাল আমদানিতে নিরুৎসাহী হয়ে পড়েছেন। এ কারণে বাজারের চালের কিছু ঘাটতি দেখা দিলেই চালের বাজারমূল্য বেড়ে যায়।
তিনি মনে করেন, চাল আমদানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করলে চালের বাজারমূল্য অনেকটা নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, আমদানিকৃত চাল বাংলাদেশের বর্ডার এলাকায় লোড-আনলোড করতে ৪/৬ দিন সময় বেশি লেগে যায়। ফলে তাদের আমদানি ব্যয় ও বৃদ্ধি পায়। বিষয়টি দেখার জন্যে তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।