নিয়ন্ত্রণহীন অটোবাইকে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ
রাস্তায় এক সময় রিকশা ছিল। রিকশায় লাগানো বেলের টুংটাং শব্দে অন্য বাহন এবং মানুষ সতর্ক হয়ে যেত। তার জায়গা এখন দখল করেছে ব্যাটারি চালিত অটোবাইক বা মিশুক। এখন টুংটাং বেলের আওয়াজের জায়গায় ব্যবহার করা হচ্ছে মিনি সাইজের হাইড্রোলিক হর্ন। আর দাপটের সাথে চলছে ব্যাটারি চালিত অটোবাইক গ্রাম গঞ্জ শহর সর্বত্র। কোথাও কোথাও এমন অবস্থা তৈরি হয় যে, রাস্তায় অটোবাইকের কারণে মানুষ হাঁটতে পারে না।
দাপটের সাথে পাল্লা দিয়ে চলে অটোবাইকের হুইসেলের গতি। রাস্তায় চলাচল করা মানুষ ও অন্য যানবাহনকে সতর্ক করার জন্য হাইড্রোলিক হর্ন প্রয়োজন অপ্রয়োজনে বাজিয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে এর অদক্ষ এবং আধাদক্ষ ড্রাইভার। এতে শ্রবণপ্রতিবন্ধিত্বের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ দৃশ্য এখন চাঁদপুর জেলার সর্বত্র। জেলার বিভিন্ন উপজেলার সড়কগুলো এখন ব্যাটারি চালিত অটোবাইকের দখলে।
রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ মানুষ, শিশু-কিশোর, রোগী, বিদ্যালয়গামী ছাত্র-ছাত্রী কেউ এখন এই শব্দ দূষণের অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এসব অটোবাইকের চালক অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু-কিশোর। যাদের কোনো ধরনের ড্রাইভিং জ্ঞান নেই। এরা প্রয়োজেন অপ্রয়োজনে হাইড্রোলিক হর্ন বাজিয়ে জনস্বাস্থ্য ও মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এতে দিন দিন মানুষের শ্রবণ শক্তি কমে যাচ্ছে। অতিরিক্ত এ শব্দ দূষণের প্রভাবে বিভিন্ন বয়সের মানুষের মাথা ব্যথা, কান ব্যথা, হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও শব্দ দূষণের তালিকায় রয়েছে শ্যালো মেশিন দ্বারা চালিত টমটম এবং ইট বালি নেয়ার জন্য ট্রলি গাড়ি।
স্বাস্থ্যে শব্দ কী ধরনের প্রভাব ফেলে এমন এক প্রবন্ধে লিখা হয়েছে, আচমকা শব্দে (ইমপালস সাউন্ড) ও দীর্ঘ মেয়াদে উচ্চ শব্দের (৭৫ থেকে ৮৫ ডেসিবেল) মধ্যে থাকলে মানুষ শ্রবণ ক্ষমতা হারাতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৬০ ডেসিবেলের অধিক শব্দ যদি দীর্ঘসময় ধরে থাকে তাহলে সাময়িক বধিরতা আর ১০০ ডেসিবেলের অধিক শব্দ হলে স্থায়ী বধিরতা হতে পারে। কারণ এতে মানুষের কানের কোষ মারা যেতে পারে। কানের কোষ মারা গেলে তা মনোযোগের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এই কোষ নতুন করে আর তৈরি হয় না। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে দেশে আইন ও বিধি রয়েছে। কিন্তু আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নেই।
অটোবাইক বা মিশুকে ব্যবহৃত হয় চার্জেবল ব্যাটারি। প্রতিদিন চার্জ দিয়ে অটোবাইক বা মিশুক চালাতে হয়। ফলে দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ অটোবাইকের ব্যাটারি চার্জের পিছনে চলে যায়।
মতলব দক্ষিণে অটোবাইক বা মিশুকের বাজানো হর্ন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে পথচারী মোঃ শাখাওয়াত সুমন প্রধান জানান, হাইড্রোলিক হর্নের উচ্চ আওয়াজে পথচারিসহ সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মানুষ ধীরে ধীরে বধিরতাকে বরণ করে নিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এক সময় যখন পায়ে চাপা রিকশা ছিল তখন রিকশার নির্দিষ্ট একটা গতি ছিল। এখন ব্যাটারি চালিত হওয়ায় বেপোরোয়া গতিতে এই অটোবাইক চালানোর ফলে অহরহই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে যাত্রী সাধারণ। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ অবস্থার পরিকল্পিত সমাধান দাবি করেন।
উচ্চ শব্দে বাজানো হর্ন সম্পর্কে অটোবাইকের চালক মোঃ স্বপন প্রধান জানান, রাস্তায় এখন মানুষ ও গাড়ি দুটোই বেশি। অল্প আওয়াজে এখন আর কেউ নিজের অবস্থান থেকে সরতে চায় না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করি। তাছাড়া রাস্তার প্রশস্ততার তুলনায় মানুষ এবং গাড়ি চলাচল করে বেশি। এক প্রশ্নের জবাবে মোঃ স্বপন প্রধান বলেন, আমি অন্য পেশায় ছিলাম। করোনায় আমি এখন অটোবাইক চালক। এটাই আমার রুটি রুজির অবলম্বন।
ইজিবাইক বা অটোবাইকের হাইড্রোলিক হর্নের কবল থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা এবং এ গাড়িগুলোর অপপ্রয়োগ বন্ধে পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।