আমার ওপর সেনাবাহিনীর কোনো চাপ নেই : ইমরান খান
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন যে তার ওপরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কোনো চাপ নেই এবং তিনি তার নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করছেন।
পাকিস্তানের একটি বেসরকারি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাত্কারে তিনি সাংবাদিক মনসুর আলী খানকে বলেছেন, আমি তো সেনাবাহিনীর বিরোধিতা তখন করবো যখন সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আমার ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করা হবে। এখনও পর্যন্ত এমন একটি ঘটনাও ঘটেনি যেখানে এমন হয়েছে যে আমি যা করতে চেয়েছি সেনাবাহিনী আমাকে সেটা করতে বাধা দিয়েছে।
ইমরান খান বলেন, আমাদের ইশতেহারের দিকে ভালো করে তাকালেই দেখা যায় এর বিদেশনীতির পুরোটাই তেহরিক-ই-ইনসাফেরই।
ইমরান আরও বলেন, নওয়াজ শরীফ ও জারদারি ক্ষমতা ছাড়ার পর বিদেশনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন যে তারা ভারতের সাথে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেনাবাহিনী তা চায়নি। তবে তাদের ইশতেহার পড়ে এটা মনে হওয়া দরকার যে তাদের চেষ্টা আসলে ছিল।
এ বিষয়ে কথা বলার সময় তিনি আফগান শান্তি আলোচনার প্রসঙ্গও টানেন। তিনি বলেন যে, তিনি মুসলিম দেশগুলোকে একত্রিত করার বিষয়ে কথা বলেছেন ঠিকই কিন্তু ইসলামিক দেশগুলোর পারস্পরিক ইস্যুতে কোনো পক্ষ নেননি।
অসীম সেলিম বাজওয়ার পদত্যাগ
ইমরান খানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে পাক-চীন অর্থনৈতিক করিডোরের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল অসীম বাজওয়া পদত্যাগ করতে চাইলে কেন তা গৃহীত হয়েছিল না? কিন্তু পরে তিনি যখন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর পদ ছাড়তে চাইলেন, কেন তা গৃহীত হলো?
জবাবে ইমরান খান বলেন, অসীম সেলিম বাজওয়া ছিলেন বেলুচিস্তানে সাউদার্ন কমান্ডের প্রধান। গ্যদার চায়না-ইন্ডিয়া ইকোনোমিক করিডোরের (সিপেক) মূলকেন্দ্র। সেলিম বাজওয়া আগে থেকেই সেখানে কাজ করছিলেন, সেখানে চীনাদের সাথে কাজ করছিলেন তিনি। এজন্য সেখানে কাজের জন্য আমরা তাকেই সেরা ভেবেছিলাম, আমাদের ওপর কোনো চাপ ছিল না।
আর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর পদ থেকে পদত্যাগ গ্রহণের বিষয়ে ইমরান খান বলেন, আমরা জেনারেল বাজওয়াকে সাময়িকভাবে ওই পদে নিয়ে এসেছিলাম।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মিডিয়া বিভাগ আইএসপিআরের প্রসঙ্গও টানেন ইমরান। অসীম বাজওয়া আইএসপিআরের প্রধানের দায়িত্বও পালন করেছেন।
অসীম বাজওয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে ইমরান খান বলেন যে, তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জবাব আগে দিয়েছেন। তিনি বলেন, কারও যদি এখনও অভিযোগ থাকে, তবে এটি এনএবিতে দাখিল করুন। এছাড়া এসব অভিযোগ সংবাদপত্র বা টিভিতে এসেছে।
মিডিয়ায় চাপ এবং সাংবাদিকদের ক্ষতি
পাক প্রধানমন্ত্রীর কাছে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কজন সাংবাদিক, যেমন- মতিউল্লাহ জান, আলী ইমরান সাইদ, এসইসিপি পরিচালক সাজিদ গন্ডাল নিখোঁজ হয়েছেন।
জবাবে ইমরান খান বলেন, আমি জানি না তাদের সাথে কী হয়েছে।
এরপর সাংবাদিক মনসুর আলী তার কাছে জানতে চান, কে তাদের নিয়ে গেছে, কে জানে? এর জবাবে ইমরান বলেন, এ বিষয়ে তার জানা নেই এবং এটি তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
নির্বাচিত না বেছে নেয়া প্রধানমন্ত্রী
ইমরান খানের কাছে প্রশ্ন রাখা হয় যে, তাকে যখন বেছে নেয়া প্রধানমন্ত্রী বলা হয় তখন তার খারাপ লাগে কি-না?
ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ক্রিকেট ম্যাচের উদাহরণ টেনে আনেন। তিনি বলেন, ম্যাচ জিততে কৌশল সবসময় বদলে যেতে থাকে। জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে তার একটি কৌশল ব্যর্থ হলে তিনি অন্য কৌশল নেবেন।
ইমরান খান বলেন যে, নওয়াজ শরীফকে বেছে নেয়া হয়েছিল, আগে তিনি কোনো নির্বাচন লড়েছিলেন না। শরীফকে প্রথমে অর্থমন্ত্রী এবং পরে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল। জুলফিকার আলী ভুট্টো এক স্বৈরশাসকের সঙ্গে ছিলেন এবং আইয়ুব খান যখন রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন, তখন ভুট্টো একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
ইমরান খান বলেন যে তিনি শূন্য থেকে সবকিছু শুরু করেছেন এবং তার অন্য কোনো রাজনৈতিক পটভূমি নেই।
'আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীন'
বিরোধী দলের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশিরভাগ মামলা দুই পক্ষই করেছে। তিনি বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীন রেখেছি।
ইমরান খান পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরীফ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে বলেন, তার মেডিকেল রিপোর্ট পড়ে তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে একজন ব্যক্তির এত বেশি রোগ হতে পারে।
নওয়াজ শরীফের বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে শাহবাজ আনসারী লাহোর হাইকোর্টে গ্যারান্টি দিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
'জাহাঙ্গীর তারিন আমার খুব কাছের ছিল'
সাংবাদিক মনসুর আলী খান ইমরান খানের কাছে পিটিআই নেতা জাহাঙ্গীর তারিনের বিষয়ে জানতে চান যে, তারিন এখনও দলের অংশ কি-না। জবাবে ইমরান বলেন, দলে তার কোনো পদ নেই।
তিনি বলেন, আমি শুধু এটুকু বলতে চাই যে আমি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজে হস্তক্ষেপ করতে চাই না, যে অপরাধে জড়িত তাকে শাস্তি দেওয়া হবে।
জাহাঙ্গীর তারিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, এতে তিনি লজ্জিত। এখন মামলা চলছে। হ্যাঁ, তবে আমার দুঃখ হয়। জাহাঙ্গীর আমার খুব কাছের ছিলেন। জাহাঙ্গীর বলেন যে তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ।
ইমরান খান বলেন, দলের সদস্য বা মন্ত্রীদের সম্পর্কে যখনই কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়, সাথে সাথে তা আইবির মাধ্যমে তদন্ত করা হয়।
তবে এখন পর্যন্ত দলের কাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সে নাম বলতে অস্বীকার করেছেন।
পাঞ্জাবের প্রাক্তন তথ্যমন্ত্রী ফয়াজ উল হাসান প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, তিনি শক্তিশালী মন্ত্রিত্ব চাইলে তাকে দেয়া হয়েছিল, তবে তিনি আগে সংখ্যালঘুদের নিয়ে একটি মন্তব্য করেছিলেন, যার কারণে তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
পররাষ্ট্র নীতি
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং কেবল আমরা নয় অন্যান্য দেশও এর সাথে জড়িত।
সৌদি আরবের সাথে অবনতিশীল সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন যে, এরকম কোনো বিষয় নেই। তিনি বলেন, মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। কোনো সমস্যা নেই। তুরস্কেরও আমাদের সাথে ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং চীনের সাথে সম্পর্ক আগে যেমন ছিল এখন তেমন নেই। আফগানিস্তানের সাথে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আজ যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে বলেছে যে আমরা শান্তি আলোচনায় যে ভূমিকা নিয়েছি তা এর আগে কেউ কখনও নেয়নি।