নিয়ম ভঙ্গ করেই ঋণ বিতরণ করছে ১৪ ব্যাংক
নিয়ম ভঙ্গ করেই ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে দেশি-বিদেশি ১৪টি ব্যাংক। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা না মেনেই অল্প সুদে আমানত গ্রহণ করে বেশি সুদে ঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকগুলো। বেশিরভাগ ব্যাংক পারলেও হাতেগোনা কয়েকটি ব্যাংক আমানত ও ঋণের সুদহারের পার্থক্য (স্প্রেড) পরিপালন করতে না পারায় প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শক্তিশালী তদন্তের মাধ্যমে ছোটবড় সব ধরনের অনিয়মের বিচার হওয়া উচিত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী সব ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদহারের পার্থক্য ৪ শতাংশের মধ্যে থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু নির্ধারিত নিময় ভঙ্গ করছে দেশের বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। ৫৯ ব্যাংকের তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অক্টোবরে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর শেষে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ১৪ ব্যাংক এ হার মানছে না, এর মধ্যে দেশি বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে ৭টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৭টি। রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের এ হার ২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। বিষেশায়িত তিন ব্যাংকের ব্যবধান ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ আর ৯টি বিদেশি ব্যাংকের এ হার ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।
ইচ্ছামতো ঋণের সুদ আরোপ বন্ধ করতে স্প্রেড নীতিমালা জারি করা হয়। তা না হলে এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয় ব্যাংক খাতে, এতে কিছুটা অস্থিরতাও তৈরি হয়। এ প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানত ও ঋণের মধ্যে সুদহার ব্যবধান ৫ শতাংশ নির্ধারণ করে ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর একটি সার্কুলার জারি করে। সার্কুলার মতে, ভোক্তাঋণ ও ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্যান্য খাতে স্প্রেড নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকতে হবে।
পরে ২০১৮ সালের ৩০ মে এ ব্যবধান ৪ শতাংশ নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ যে সুদহারে আমানত সংগ্রহ করবে, তার সঙ্গে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে। অর্থাৎ কোনো ব্যাংক ১০ শতাংশ সুদে আমানত নিলে ব্যাংকটির ঋণ সুদহার হবে সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ। তবে ভোক্তা ও সব ধরনের কার্ডের সুদহারের বেলায় এ নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না বলে জানানো হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ (অক্টোবর) তথ্য অনুযায়ী, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ঋণ-আমানত সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) হচ্ছে ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ, সিটি ব্যাংকের ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৪ দশমিক ১১ শতাংশ, সীমান্ত ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ, ইস্টার্ন ব্যাংকের ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ, ব্র্যাক ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ, কমিউনিটি ব্যাংকের ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এ হার ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ৫ দশমিক ১২ শতাংশ, সিটি ব্যাংক এনএ’র ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ, উরি ব্যাংকের ৬ দশমিক ২০ শতাংশ, দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন লিমিটেডের ৫ শতাংশ এবং ব্যাংক আল-ফালাহ লিমিটেডের ব্যবধান ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, সব ঋণের বেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে স্প্রেড সীমা আছে, তাতে উৎপাদন ও এসএমই খাতে এ সীমা মানছে না ব্যাংকগুলো। আলোচনা করে এ বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আইন সবার জন্যই প্রযোজ্য। এই সময়ে এসেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা না মানাটা যুক্তি সঙ্গত নয়। এখন অনুরোধের সময় চলে গেছে, সরাসরি অ্যাকশনে যেতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। ইন্ডিভিজুয়ালি মিটিং করে বলতে হবে, না হলে তাদের ব্রাঞ্চ সম্প্রসারণ বন্ধ করে দিতে হবে।