• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ভারতের ভ্যাকসিন মাসে ৫০ লাখ ডোজ পাবে বাংলাদেশ

প্রকাশ:  ২৪ নভেম্বর ২০২০, ১৩:২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

করোনার ভ্যাকসিনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সালমান, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট বাজারে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সরবরাহ শুরু করলে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবে। এ ভ্যাকসিনের বাজারজাতকরণ শুরুর দিন থেকেই বাংলাদেশ মাসে ৫০ লাখ করে ডোজ পাবে।

সোমবার (২৩ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘করোনাকালীন বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ পরিস্থিতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় (ভার্চুয়াল) এসব কথা ব‌লেন তিনি।

সালমান এফ রহমান বলেন, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট বাজারে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সরবরাহ শুরু করলে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবে। চুক্তি অনুযায়ী সিরাম ইনস্টিটিউট যেদিন আন্তর্জাতিক বাজারজাতকরণ শুরু করবে সেদিন থেকেই বাংলাদেশ মাসে ৫০ লাখ করে ডোজ পাবে।

তিনি বলেন, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সিরাম ইনস্টিটিউট ভারত সরকারকে যে দামে ভ্যাকসিন বিক্রি করবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে। আমরা আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন সম্পর্কে সুখবর পাওয়া যাবে। এরপর থেকেই বাংলাদেশের ভ্যাকসিন পাওয়া শুরু হবে।

বাংলাদেশ বিশ্বে সবচেয়ে কমদামে ভ্যাকসিন পাবে দাবি করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মডার্না ও ফাইজারের তৈরি ভ্যাকসিনের দাম রাখছে ৪০ ডলার। সম্প্রতি চীনে বাজারজাত হওয়া আরেকটি ভ্যাকসিনের দাম রাখছে ৬০ ডলার। আর বাংলাদেশ একই কার্যকারিতার ভ্যাকসিন পাবে মাত্র ৫ ডলারে।

সালমান এফ রহমান বলেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলানোর জন্য সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, এর মধ্যে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ঋণ পেয়েছেন। অনেকেই পাননি। যেটা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। গঠনমূলক সমালোচনা ঠিক আছে। কিন্তু এটা নিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে, যা ঠিক না। করোনার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা যে সমস্যায় পড়েছেন, সে বিষয়ে সরকার অবগত।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। ইতোমধ্যেই ৫ হাজার কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। প্রকৃত এসএমই উদ্যোক্তাদের না পাওয়ায় মূলত ঋণ বিতরণে সমস্যা হচ্ছে। সরকার এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি খাতে এসএমই উদ্যোক্তাদের নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। মূল লক্ষ্য হলো- প্রকৃত এসএমই উদ্যোক্তারা যেন প্রণোদনার ঋণ পায়।

ফ্রিল্যান্সারদের বিষয়ে তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সাররা নিবন্ধন করতে পারলে তাদের কাজের সুযোগ বাড়বে। বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সারদের নিবন্ধন বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি এই উপদেষ্টা বলেন, দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক ইতিবাচকভাবে এগোলেও গড় জিডিপি অনুপাত কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে আসেনি। এমনকি বন্ড মার্কেটও কার্যকর নয়। অনেকেই বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু গড় জিডিপির অনুপাত বাড়ছে না কেন? আমাদের কাছেও এর সঠিক উত্তর নেই। তবে করের আওতা বাড়ানো না গেলে এই সূচকটির উন্নতি করা যাবে না। এমনকি কর বিষয়ে ব্যবসায়ীরা যে হয়রানির কথা বলেন তাও কমবে না।

বিশ্ব ব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ সূচক তৈরির কাজ এ বছর স্থগিত করা হয়েছে জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ২০২২ সালে যখন পরবর্তী র‌্যাংকিং প্রকাশ করবে তখন বাংলাদেশকে ডাবল ডিজিটে (১০০ এর নিচে) নিয়ে আসার প্রধানমন্ত্রীর যে লক্ষ্য রয়েছে, সেটা আমরা পূরণ করব।

সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে মিথ্যাচার করছে দাবি করে বিশেষ অতিথি আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির জন্য জিডিপির ৪০ শতাংশ বিনিয়োগ প্রয়োজন। মহামারির কারণে গত অর্থবছরে প্রায় তিন মাস অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ ছিল। তবু সরকার ৫ দশমিক ২০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে দাবি করছে। এই প্রবৃদ্ধি সরকারি মিথ্যাচার। বিবিএস রাতে যে তথ্য ঠিক করে পরের দিন সকালে তা মন্ত্রীর ফোনে পরিবর্তন হয়ে যায়। এভাবেই এতো বেশি প্রবৃদ্ধি। তবে ব্যাংকের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনাকে সরকারের সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা উল্লেখ করে এজন্য তিনি সরকারকে ধন্যবাদ দেন।

তিনি আরও ব‌লেন, প্রণোদনা অর্থ‌নৈ‌তিক ক্ষ‌তি মোকা‌বিলায় সহায়ক ভূ‌মিকা পালন করছে। ঋণের সুদের হার কমানো অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। আগামী‌তে যার সুফল মিল‌বে। ত‌বে বি‌নি‌য়োগ বাড়া‌তে হ‌লে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমা‌তে হ‌বে। তা না হ‌লে ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের সুফল পাওয়া সম্ভব না।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, মহামারির ধাক্কায় ভারতের মতো দেশেও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চীনের অর্থনীতি পড়েছে চাপে। অথচ এই সংকটেও বাংলাদেশ ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। দেশের অর্থনীতি যে শক্তিশালী অবস্থানে আছে এটা তার প্রমাণ। সংকট মোকাবিলায় শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে না থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বয় করে কাজ করার তাগিদ দেন তিনি।

ব্যবসা প‌রিচালনা ও ঋণ প্রা‌প্তি নি‌শ্চি‌তে এসএমই খা‌তের জন্য সহ‌জ নী‌তিমালা করার পরামর্শ দেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ। পাশাপা‌শি বি‌নি‌য়োগ বাড়া‌তে এনবিআরের সহযোগিতা বাড়া‌নোর তা‌গিদও দেন তি‌নি।

ডিআরইউ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, মীর নাসের হোসেন, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ ও ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের যুগ্ম সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বক্তব্য রাখেন।

সর্বাধিক পঠিত