• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

জলবায়ু প্রকল্পের কাজে আমরা যেকোনো জবাবদিহিতায় প্রস্তুত : পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ বাবুল আখতার

প্রকাশ:  ৩০ আগস্ট ২০২০, ১৪:২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চাঁদপুরের আয়োজনে চাঁদপুরে জলবায়ু নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশার জনসাধারণের অংশগ্রহণে 'করোনাকালে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন : অংশীজনের করণীয়' শীর্ষক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভা গতকাল ২৯ আগস্ট ২০২০ অনুষ্ঠিত হয়।


সনাক সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ মোশারেফ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ বাবুল আখতার। তিনি বলেন, সনাক-টিআইবি'র আজকের আয়োজনের ফলে আমি অনেক সমৃদ্ধ হতে পেরেছি। প্রতিটি আলোচনাই আমার কাছে অত্যন্ত সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। জলবায়ু কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকল জনসাধারণের মতামত নিয়ে কাজ কারাটাও একটা দুরূহ ব্যাপার। তাই যারা এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ ও দক্ষ তাদের সাথে আলোচনা করে কাজ করা যেতে পারে। আবার অনেক সময় যেসকল জনগণ এধরনের কাজে অভিজ্ঞ তাদের অর্থের বিনিময়ে হলেও নিয়মিত কাজ তদারকি করার জন্য রাখা যেতে পারে।

 


তিনি বলেন, জলাধার ভরাট করলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। অনেক সময় দেখি জলাধার ভরাটের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর জরিমানাও করে থাকে। তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি কাজ করতে গেলে কর্মকর্তাদের জনগণের সাথে মিশতে হবে। কাজের মান নিয়ন্ত্রণ করতে হলে কাজের মধ্যে আমাকে ঢুকতে হবে। তিনি জনসাধারণের কাছ থেকে উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তরে বলেন, নদী অাঁকাবাঁকা হওয়ার কারণ নদীর স্রোতধারার পরিবর্তন। ডাকাতিয়া নদীর উপর স্টাডি চলছে। আশা করছি প্রকল্প নির্ধারণ হলে কাজ করা হবে।

 


তিনি আরও বলেন, চাঁদপুরের নদী ভাঙ্গন নিয়ে আমরা খুব চিন্তায় থাকি। চাঁদপুরে নদী ভাঙ্গন রোধে ব্যাপকভাবে কাজ করা দরকার। তিনি বলেন, যেকোন কাজ করতে গেলে দক্ষ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ লোক দ্বারা করা দরকার। আপদকালীন সময়ে আমরা জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ করি। যেমন : কয়েকদিন আগে পুরাণবাজার হরিসভা সংলগ্ন রাস্তা ভাঙ্গা শুরু হলে আমরা ঘটনাটি জানার এক ঘন্টার মধ্যে কাজ শুরু করেছি। চাঁদপুর জেলার বাহির থেকে লোক এনে আমরা কাজ করিয়েছি। আমি মনে করি, যত অভিযোগ আসবে কাজের গতিশীলতা তত বাড়বে। তবে আমি আপনাদের কাছ থেকে অভিযোগ চাই না শুধু সঠিক পরামর্শ চাই। জলবায়ু অর্থায়নের জন্য আমরা যেকোন ধরনের জবাবদিহি করতে প্রস্তুত। জলবায়ু সম্পর্কে আমার কাছে কেউ তথ্য চাইলে সরাসরি বা মোবাইলের মাধ্যমে আমি তা দিয়ে থাকি। তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে। জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের জন্য জনগণের চাহিদা জানতে পেরেছি। ভবিষ্যতেও আশা করছি সনাক-টিআইবি এ ধরণের আরও আয়োজন করবে। আমাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে আমরা আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারবো।

 


সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নসর উল্লাহ বলেন, জলবায়ু সমস্যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক একটি সমস্যা। মহামারী কোভিড-১৯-এর সাথে জলবায়ুও সম্পৃক্ত রয়েছে। তবে জাতীয় পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের অনেক ক্ষতি করে থাকে। এক্ষেত্রে সমুদ্র পৃষ্ঠের পানি বেড়ে গিয়ে নিম্নাঞ্চলের মানুষ বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কৃষকদের আবাদী ও ফসলি জমিগুলোর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। জলাশয়গুলো ভরাট, খালগুলো অপরিকল্পিতভাবে ভরাট, অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন এমনকি প্রকৃতির অনেক ক্ষতি আমরা করে থাকি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাধারণ জনগণ যাতে কোনো ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেদিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমরা যেন কোনো হুমকির সম্মুখীন না হই সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, টিআইবি কর্মকর্তা যে ধারণাপত্রটি উপস্থাপন করেছেন তা অত্যন্ত তথ্যনির্ভর একটি উপস্থাপনা।

 


সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুরের উপ-পরিচালক এএইচএম রাশেদ বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন পরিবেশের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আজকের মতবিনিময় সভা থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ উত্থাপিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু ট্রাস্ট যে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করে সেসকল প্রকল্পে পরিবেশের ছাড়পত্র অবশ্যই নিতে হবে। কিন্তু দেখা গেছে অনেকে নেয় না। আমি মনে করি সাধারণ জনগণই তাদের এলাকার সমস্যাগুলো বুঝতে পারে। তাই কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের পূর্বে জনগণের মতামত নিতে হবে। তিনি বলেন, অপরিকল্পিতভাবে জলাধার ভরাটের ব্যাপারেও আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা ইতিমধ্যে মতলবে এধরনের জলাধার ভরাটের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানাও করেছি। তিনি বলেন, চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরে জনবল সংকটের কারণে কাজের অনেক ব্যাঘাত ঘটছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। সাধারণ জনগণকে এ ব্যাপারে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। পরিবেশ সবার, তাই আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে।

 


স্বাগত বক্তব্যে সনাকের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আমরা একটি সংকটময় মুহূর্ত মোকাবেলা করছি। তারপরও আমরা সামাজিক দূরত্ব্ব বজায় রেখে কাজ করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরাঞ্চলের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি আরও বলেন, আমরা অংশীজন মিলে চাঁদপুরে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা করার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। তিনি বলেন, পরিবেশের ছাড়পত্র না নিয়ে কাজ করার ফলে উন্নয়ন হচ্ছে, তবে টেকসই হচ্ছে না। জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় চাঁদপুরে কর্তৃপক্ষ কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে আর কী কী করণীয় তা আজকের এই সভা থেকে দিকনির্দেশনা দিবেন। তিনি আরও বলেন, সনাক-টিআইবি মূলত একটি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা হিসেবে পরামর্শ প্রদান করে এবং সহযোগিতার মাধ্যমে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকে।

 


কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে শুভেচ্ছা বক্তব্যে টিআইবির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোঃ আতিকুর রহমান বলেন, আজকের অনুষ্ঠানটি বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং ভিন্নধর্মী একটি মিলনমেলা। তিনি বলেন, জলবায়ুজনিত সমস্যা একটি বৈশি্বক সমস্যা। এটা অনেকটা মহামারীর মতো ? তিনি বলেন, আজকের মতবিনিময় সভায় মূলত জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে, কারা এজন্য দায়ী, কারা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, জলবায়ু অর্থায়ন কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। প্রতিটি জলবায়ু প্রকল্প যাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের মতামতের আলোকে করা হয় সেজন্য তিনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

 


'করোনাকালে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন : অংশীজনের করণীয়' শীর্ষক ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন টিআইবির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার (জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন) ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ মোঃ জাকির হোসাইন খান। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। বনভূমি ধ্বংস করা, আবাদী ও ফসলি জমি বিনষ্ট করে অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত করার ফলে জলবায়ুর উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়েছে। তিনি আরও বলেন, আশির দশকে বছরে মাত্র ৩-৪ টি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হতো, আর বর্তমানে দেখছি ৫-৬ টি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯-এর সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব জড়িত রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ বিশ্বে দশ নম্বরে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। হিমালয় থেকে বরফ গলতে শুরু করেছে। যার কারণে অতি বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস দেখা দিচ্ছে। তিনি জলবায়ু ফান্ডের টাকা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে ব্যয় করার আহ্বান জানান।

 


মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ বেলায়েত হোসেন গাজী বিল্লাল ও মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান মানিক, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্যাহ, সময় টেলিভিশন ও কালের কণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার ফারুক আহম্মদ, দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার সম্পাদক সোহেল রুশদী, হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান টুটুল, কচুয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি রাকিবুল হাসান, জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ মোঃ মহিউদ্দিন রাসেল, সূর্যের হাসি ক্লিনিকের ম্যানেজার বেবী সাহা প্রমুখ।

বক্তাগণ বলেন, মৈশাদী ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ড নদী কেন্দ্রিক। ডাকাতিয়া নদীর ভাঙ্গনরোধে একাধিকবার জরিপ করা হলেও এখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনে যেহেতু বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সেহেতু জলবায়ু ফান্ডের টাকা সঠিকভাবে ব্যয় করার আহ্বান জানান বক্তারা। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সকল প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে ও টেকসইভাবে হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য টিআইবি'র প্রতি তারা আহ্বান জানান। বক্তাগণ মতবিনিময় সভার পরামর্শ ও সুপারিশগুলো সরকারের কাছে পেঁৗছে দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারা বলেন, চাঁদপুরে নদীভাঙ্গন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় নদী ভাঙ্গন রোধে প্রকল্পের কাজগুলো সঠিকভাবে ও স্বচ্ছতার সাথে হচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাই তারা জলবায়ু প্রকল্পের কাজগুলো স্বচ্ছতার সাথে করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বক্তাগণ এধরনের একটি সময়োপযোগী সভা আয়োজন করার জন্য সনাক-টিআইবিকে ধন্যবাদ জানান।

সভাপতির বক্তব্যে সনাক সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ মোশারেফ হোসেন বলেন, আমাদের মধ্যে কমিটমেন্টের অভাব রয়েছে। এটা ঠিক থাকলে আমরা যেকোন সমস্যার সমাধান করতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যেসকল প্রকল্প গ্রহণ করা হয় তার পূর্বে সাধারণ জনগণের মতামত গ্রহণ করা দরকার। তিনি বলেন, যিনি নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন তিনিই জানেন ভাঙ্গনরোধে কী করণীয়। তাই যারা ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন তাদের কাছ থেকে প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে মতামত নেয়ার আহ্বান জানান। মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করার জন্য তিনি সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

টিআইবি'র এরিয়া ম্যানেজার মোঃ মাসুদ রানার সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জলবায়ু নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, বিভিন্ন পেশার জনসাধারণ, টিআইবি'র প্রোগ্রাম ম্যানেজার (সিই) কুমিল্লা ক্লাস্টার মোঃ হুমায়ুন কবির, সনাক চাঁদপুরের সদস্যবৃন্দ, জলবায়ু বিষয়ক জন অংশগ্রহণ কমিটি (সিসিপি) কমিটির সদস্যবৃন্দ, স্বজন গ্রুপের সদস্যবৃন্দ, ইয়েস ও ইয়েস ফ্রেন্ডস গ্রুপের সদস্যবৃন্দ এবং টিআইবি কর্মীবৃন্দ।