• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

পদ্মা-মেঘনায় ভাঙ্গন কবলিত চাঁদপুর ও শরীয়তপুরের কয়েকটি ইউনিয়ন

প্রকাশ:  ১১ জুলাই ২০২০, ১০:২৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চলতি বর্ষায় চাঁদপুরে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বর্ষা ও উজানের পানির ঢলে টইটম্বুর চাঁদপুর বেষ্টিত পদ্মা ও মেঘনা নদী। বইছে তীব্র স্রোত। বন্যার পানির ঢল আর তীব্র স্রোতে পদ্মা-মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে পদ্মা ও মেঘনার ভাঙনে নদীর দুপাড়ে অসংখ্য ঘর-বাড়ি ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে হাইমচর রক্ষা বাঁধ ও চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের পুরাণবাজার এলাকা।

বিভিন্ন সূত্রে এবং জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, মেঘনায় ভাঙছে হাইমচর, পুরাণবাজার, ইব্রাহিমপুর ও হানারচর ইউনিয়ন। পদ্মায় ভাঙছে চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বর ও পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্টেশন।

করোনা ভাইরাসের পাশাপাশি অব্যাহত নদী ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা পাড়ের মানুষ।

সদ্য করোনা জয়ী হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নূর হোসেন পাটোয়ারী জানান, তাঁর উপজেলার মধ্য চরে ও ঈশানবালা ব্যাপকভাবে ভাঙ্গছে। জোয়ারের পানিতে বিভিন্ন গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া হাইমচর রক্ষা বাঁধের তেলির মোড়ের উত্তর পাশে এবং আমতলী হতে চরভৈরবী লঞ্চ ঘাট পর্যন্ত বস্নকবাঁধের বিভিন্ন স্থান দিয়ে বস্নক দেবে গেছে।

নি বলেন, জরুরি ভিত্তিতে ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা দরকার। তা না হলে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাইমচর রক্ষা বাঁধ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি কামনা করেছেন।

এছাড়া চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের পুরাণবাজার হরিসভা এলাকাতে বাঁধে ধস দেখা দেয়। কিন্তু তীব্র স্রোতের কারণে এসব এলাকায় ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না। স্থানীয়রা জানান, গত ৩ জুলাই বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী ভাঙ্গনস্থান পরিদর্শন করে জরুরি ভিত্তিতে কয়েকশ' বালুভর্তি বস্তা ফেলার ব্যবস্থা করেন। আপাতত সেখানে ভাঙ্গন রোধ হয়েছে। তবে বাজার এলাকার শহর রক্ষা বাঁধের কয়েকটি পয়েন্ট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেখান দিয়ে মেঘনার তীব্র স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে।

দিকে মেঘনার ভাঙ্গনে বিলীন হতে চলেছে সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রাম ও বাজার। সেখানে স্থাপিত শরীয়তপুর ফেরিঘাটের টার্মিনালের জায়গাটুকুও নদীতে চলে যাচ্ছে।

ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম খান জানান, ২০১৬ সালে আলুরবাজার ফেরিঘাটের নৌ চ্যানেল ড্রেজিং করার পর থেকেই দক্ষিণ পাশের বিশাল এলাকাজুড়ে এ ভাঙ্গন শুরু হয়। বর্ষা এলে এর তীব্রতা বেড়ে যায়।

গত কয়েকদিনের ব্যাপক ভাঙ্গনে ইব্রাহিমপুর গ্রামের প্রায় দেড়শ' পরিবার ভিটেমাটি হারা হয়েছে। নদী ভাঙ্গন বিষয়টি তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিকে অবগত করেছেন।

জরুরি ভিত্তিতে ভাঙ্গন রোধে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর অফিসের নিকট দাবি জানিয়েছেন।

হানারচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাজমুল হাসান বাবু জানান, চেয়ারম্যান সাত্তার রাঢ়ির বাড়ির দক্ষিণ দিকে ইউনিয়নের মধ্য গোবিন্দিয়া গ্রাম ভেঙ্গে যাচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিরাজ বেপারী বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সেখানে থাকা ঈদগাহ, প্রাইমারি স্কুল এবং পুরাতন বেড়িবাঁধ এলাকাটি মেঘনার ভাঙ্গনের মুখে।

অপরদিকে মেঘনার ন্যায় হিংস্র হয়ে উঠেছে পদ্মা নদী। বেষ্টিত এক জনপদের নাম চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন। পাশেই শরীয়তপুর জেলার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্টেশন। দুটি জনপদেই পদ্মার উজানের স্রোতে নদী ভাঙ্গছে বলে জানিয়েছেন রাজেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী হযরত আলী বেপারী।

তিনি জানান, তার ইউনিয়নের লক্ষীরচর, খাস কান্দি, রাজারচর জাহাজমারা গ্রাম ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে নদী। গত কয়েক দিনে ভাঙ্গনের মুখ থেকে প্রায় শতাধিক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া বলাশিয়া সাইক্লোন সেন্টার ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের স্থাপনাও যেকোনো মুহূর্তে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। বিষয়টি তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

শরিয়তপুরের বাসিন্দা মনির হোসেন খান তার ফেসবুক পেইজে জানান, ভেদরগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান স্টেশন বাজার এলাকা জুড়ে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন চলছে। বুধবার (৮ জুলাই) রাতের বেলায় সেখানে ২০টি দোকান পদ্মায় দেবে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ বাবুল আক্তার বলেন, চাঁদপুরের বিভিন্নস্থানে নদীর তীব্র স্রোতে কোথাও কোথাও ভাঙন দেখা দেয়ায় আমরা তা রোধ করতে তৎপর রয়েছি। তবে বন্যার পানি বৃদ্ধি ও প্রচ- স্রোতের কারণে শহর রক্ষা বাঁধের হরিসভা এলাকার কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে ও বস্নক দেবে গেছে। বর্তমানে সেই বাঁধের ৯০ মিটার এলাকায় বালির বস্তা ফেলে ভাঙন রক্ষার কাজ চলছে। অন্যান্য স্থানে এখনো কাজ শুরু করা যায়নি।

সর্বাধিক পঠিত