• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ত্রাণ নিয়ে গভীর রাতে তেলেসমাতি অবস্থা!

প্রকাশ:  ১৭ এপ্রিল ২০২০, ১২:২১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ত্রাণের প্যাকেট তৈরি করাকালীন পুলিশের অভিযানের পর থেকে এলাকায় তেলেসমাতি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত বুধবার দিবাগত রাতে হাজীগঞ্জের বাকিলা বাজারে এমন ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে চাল চোর উপাধিসহ মানহানিকর নানা উদ্ভট কথা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই বিভিন্ন জনে চেয়ারম্যানের পক্ষে-বিপক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস আর কমেন্ট করতে দেখা গেছে। তবে চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটোয়ারী বলেছেন, যে ত্রাণ নিয়ে এতো কিছু সেগুলো মধ্যবিত্তদের জন্যে করা প্যাকেট। যে প্যাকেটের মধ্যে ১০ কেজি চাল, ১ কেজি করে মসুরির ডাল, সয়াবিন তেল, ছোলা আর ২ কেজি করে আলু রয়েছে। এগুলো সরকারি ত্রাণের দ্রব্যাদি নয়, এগুলো আমার ব্যক্তিগত। যা ক্রয়ের মেমো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে রাতেই ঘটনাস্থলে দেখিয়েছি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটি বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে তদন্ত করেছে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা কর্মহীন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার এবং আসন্ন রমজান উপলক্ষে কিছু খাদ্যসামগ্রী দেয়ার উদ্যোগ নেন ইউপি চেয়ারম্যান। প্রতি ব্যাগে ১০ কেজি চালের সাথে ১ কেজি করে ছোলা, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, মসুরির ডাল আর ২ কেজি করে আলু ছিলো। উল্লেখিত খাদ্যসামগ্রীগুলো সংগ্রহ করার পর একটি গুদামে নিয়ে রাখার সময় স্থানীয় কিছু লোকজন জড়ো হয়ে রাতেই পুলিশকে খবর দেয়।

 


এ বিষয়ে খবর পেয়ে রাতেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মোঃ আফজাল হোসেন ও থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলমগীর হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এর কিছু পরেই অর্থাৎ রাতেই ঘটনাস্থলে আসেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া। চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটোয়ারীকে খবর দিয়ে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে আনেন এ ম্যাজিস্ট্রেট। এরপরেই তিনি বিষয়টি জেনে পরবর্তী ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন বলে জানান।

 


স্থানীয়রা চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ১০ কেজি চাল, ১ কেজি করে তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, মসুরির ডাল ও ২ কেজি করে আলু প্যাকেট করে চুরি করে নাকি? তাছাড়া আমরা যেটুকু শুনেছি এগুলো তো তার নিজের টাকায় ক্রয় করা, যা মধ্যবিত্তদের মাঝে বিলি করার জন্যে প্যাকেট করাচ্ছিলেন। চেয়ারম্যানের এমন মহৎ কাজে কিছু লোক বিরোধিতা করছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

 


এদিকে সারারাত ত্রাণ নিয়ে এতো তেলেসমাতি ও ফেসবুকে বিভিন্ন জনের কথার সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার দুপুরের নিকে নিজের ফেসবুকে লম্বা ও আবেগঘন এক স্ট্যাটাস দেন ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটোয়ারী। স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন_'অত্যন্ত দুঃখ ভরাক্রান্ত মন নিয়ে করোনার এই দুর্দিনে আপনাদের দুটো কথা লিখতে বসছি। প্রতিটা পদে পদে ষড়যন্ত্রকারীরা আমার হাত-পা টেনে ধরছে। মাঝে মাঝে নিজেকে খুবই ক্লান্ত মনে হয়। মনে হয় হাল ছেড়ে দেই। গতরাতের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ইউনিয়নের জনগণের যে সাড়া পাচ্ছি, তাতে নতুন করে আবার আলো দেখতে পাচ্ছি। আপনারা কাল রাত থেকে আজকে সকাল পর্যন্ত আমাকে যে মনোবল জুগিয়েছেন, তাতে মনে হয়েছে সবাইকে সত্যি ঘটনাটা জানানো দরকার। আমি যদি চুপসে যাই তাহলে অপবাদকারীরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জনগণকে সঠিক কথা জানাবো। প্রথমেই বলে নিচ্ছি, সরকার থেকে ইউনিয়ন পরিষদে ত্রাণের জন্যে শুধু চালই বরাদ্দ দেয়া হয়। ইউনিয়নে যে চাল বরাদ্দ দেয়া হয় তা ইউনিয়নের দরিদ্রদের মাঝে দিয়ে আর মধ্যবিত্তকে দিতে পারি না। করোনার কারণে অনেকেই প্রকাশ্যে ত্রাণ চাইতে পারে না। আবার তাদের ঘরে খাবারও নেই। বেশির ভাগই ব্যক্তিগতভাবে অথবা মেসেজ করে গোপনে সহায়তা চায়। তাই আমি সরকারি ত্রাণের অপ্রতুলতার কারণে নিজে ব্যক্তিগতভাবে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে গোপনে সহায়তা করে থাকি। যার মধ্যে রয়েছে ১০ কেজি চাল, ১ কেজি তেল, ১ কেজি পেঁয়াজ, ২ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল ও ১ কেজি বুট। এ পর্যন্ত ইউনিয়নের প্রায় হাজারখানেক মধ্যবিত্ত পরিবারকে সহযোগিতা করেছি। রাতে মধ্যবিত্তের ঘরে সহযোগিতার একটা বস্তা পাঠিয়ে দিতাম। যাদেরকে দিতাম তারাও জানতো চেয়ারম্যান দিয়েছে, আর আমিও জানতাম তাদেরকে দিয়েছি। কিন্তু কেউ কারও মুখোমুখি হতে হতো না। বিষয়টা স্বস্তির দু পক্ষের জন্যই। গতরাতে আমার ব্যক্তিগত ত্রাণের প্যাকেটগুলো প্যাকেজিং শেষ করে পরিষদের গোডাউনে জায়গার সংকুলান হবে না দেখে বাকিলা বাজারের প্লাজা মার্কেটের একটি গোডাউনে রাখার সিদ্ধান্ত নিই। সে অনুযায়ী ব্যক্তিগত সহযোগিতার প্যাকেটগুলো রাতে ভ্যানে করে প্লাজা মার্কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার কয়েকজন এসে বাধা দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা সেখানে শতাধিক লোক জড়ো করে ফেলে এবং সরকারি চাল চুরি হচ্ছে বলে সস্নোগান দিতে থাকে। এ সময় আমাকে এক সাংবাদিক ফোন করে বিষয়টি জানান। আমি ইউনিয়নে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করি। কিন্তু কেউ ফোন ধরে না। এরই মধ্যে জানতে পারি, তারা বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছে এবং থানার ওসি, এসপি সার্কেল ও ইউএনও মহোদয় ঘটনাস্থলে এসেছেন। এবার আমি এসপি সার্কেল ও ইউএনওকে ফোন করি। তারা আমাকে ঘটনাস্থলে আসার জন্যে বলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল ইউনিয়ন পরিষদে চলে যাই। এসে ইউএনও ম্যাডাম ও প্রশাসনকে সবকিছু বুঝিয়ে বলি। তারা সবকিছু দেখে উল্টো ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে এসবের জবাব জানতে চান এবং আজকে এ ঘটনার সুষ্ঠু মীমাংসা করার কথা দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এই হচ্ছে মূল ঘটনা। এখন আমার প্রশ্ন : সরকারি বরাদ্দ শুধু চাল। তাহলে আলু, তেল, ডাল, বুট, পেঁয়াজ এগুলো আসলো কোথা থেকে? ইউনিয়নবাসীর প্রতি অনুরোধ, আপনারা আমার পাশে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। আর যারা ষড়যন্ত্রকারী তাদের বিচার আল্লাহ করবে।

এদিকে ভিন্ন এক প্রশ্নে এ জনপ্রতিনিধি বলেন, যারা আমার মানহানি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনী প্রক্রিয়ায় যাচ্ছি। আমার নিজের দলে গুটিকয়েক লোক দলীয় পদ-পদবী না পেয়ে আমাকে খাটো করার জন্যে সবসময় উঠে পড়ে লেগেছে। মূলত তারাই আমাকে ত্রাণ চোর বানাতে চেয়েছে।

ত্রাণের মালামাল ক্রয়ের রসিদ চেয়ারম্যান দেখিয়েছেন এমন বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জুলফিকার আলীকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের রিপোর্ট হাতে আসলে বিস্তারিত বোঝা যাবে।

সর্বাধিক পঠিত