• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মধ্যরাতে সাংবাদিককে মোবাইল কোর্টে কারাদ- বেআইনি : টিআইবি

প্রকাশ:  ১৫ মার্চ ২০২০, ১০:৫১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে ঘর থেকে তুলে আনার পর মোবাইল কোর্টে বিচার করে কারাদ- দেয়ার পুরো ঘটনাকেই বেআইনি বলে আখ্যায়িত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি দাবি করেছে যে, আইনের এমন যথেচ্ছ অপপ্রয়োগ আইনের শাসনের সাংবিধানিক অঙ্গীকারের পরিপন্থি এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর নামান্তর। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় দ্রুত তদন্ত এবং জড়িতদের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে প্রশাসন তথা সরকারের ওপরই জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলবে বলেও মন্তব্য করা হয় টিআইবির বিবৃতিতে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদের সূত্র ধরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন আছে, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। সে অনুযায়ী রাতের বেলা কোনো নাগরিককে ঘর থেকে তুলে  এনে মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনা করাটা অবৈধ। যে সাংবাদিককে কারাদ- দেওয়া হয়েছে, তিনি যদি সন্দেহের তালিকায় থাকতেন, তাহলে তাঁকে নজরদারিতে রাখা যেত; কিংবা ‘অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায়’ পুলিশ অভিযান চালাতে পারত। আরো গুরুতর মনে হলে ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর বাসা সিলগালা করে দিয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মধ্যরাতে ‘দরজা ভেঙ্গে’ একজন নাগরিককে তুলে আনা এবং পরে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে কারাদ- দেওয়াটা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা যতটুকু বুঝি, তাতে মোবাইল কোর্টের ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা, কিন্তু তা না করে ঐ সাংবাদিককে তুলে আনার পর কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনা থেকে পুরো ঘটনাটির পিছনেই যে অপরাধ দমন নয় বরং অন্য কোনো বিবেচনা কাজ করেছে তা স্পষ্ট।’
ড. জামান আরো বলছেন, ‘এরই মধ্যে কারাদ-প্রাপ্ত সাংবাদিকের স্ত্রী অভিযোগ করেছেন যে তাঁর স্বামীকে ‘আটক করার পর নগ্ন করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে’। এই অভিযোগের সত্যতা থাকলে, তা কেবল আইনের অপব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বরং যে বা যারা এই ঘটনায় জড়িত, তারা সরাসরি ফৌজদারি অপরাধ করেছে। সুতরাং আমরা দাবি করছি যে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় গঠিত তদন্ত কমিটি দ্রুত একটি নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য প্রতিবেদন দেবেন এবং এমন জবাবদিহিমূলক পদক্ষেপ গৃহীত হবে যার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে না।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে যে, আরিফুল ইসলাম জেলা প্রশাসক ও তাঁর নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের ‘নানা স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের’ বিষয়ে প্রতিবেদন করে আসছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করার জন্যই যদি তাঁকে এমন বেআইনিভাবে তুলে এনে বিচার করা হয়ে থাকে, তবে সেটা দেশের জন্যে এক অশনি সংকেত। কারণ সেক্ষেত্রে এই পুরো ঘটনাপ্রবাহকে বিবেচনা করতে হবে গণমাধ্যমের জন্যে একটি সতর্ক বার্তা হিসেবে, যার সরাসরি অর্থÑ দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করা যাবে না। যেখানে দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার অঙ্গীকার করেছেন, সেখানে প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার এহেন আচরণ গুরুতর অসদাচরণ এবং সরকারকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার শামিল।’
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত এই অভিযোগের সুরাহা করে, দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগতব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানান ড. ইফতেখারুজ্জামান।

 

সর্বাধিক পঠিত