শিক্ষামন্ত্রী হস্তক্ষেপ কামনা
দু মাসের অভয়াশ্রম কার্যক্রমে নিবন্ধিত ১৩ হাজার জেলে পরিবারের জন্যে চাল বরাদ্দ নেই
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে ১ মার্চ থেকে দু’মাসব্যাপী জাটকা রক্ষায় অভয়াশ্রম কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এ সময় সকল প্রকার জাল ফেলা ও মাছ ধরা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত রয়েছে। জেলায় সরকারিভাবে নিবন্ধিত ৫১ হাজার জেলে পরিবারের মধ্যে ৩৮ হাজার জেলে পরিবারের জন্য চাল বরাদ্দ এসেছে। নিবন্ধিত ১৩ হাজার জেলে পরিবারের জন্য চাল বরাদ্দ না আসায় তাদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। বরাদ্দ কম আসায় পদ্মা-মেঘনা পাড়ের ৪ উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যানগণ চাল বিতরণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। মার্চ মাসে অভয়াশ্রম শুরু হলেও ফেব্রুয়ারি মাসের বরাদ্দের চাল বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় এখনো বিতরণ করা যায়নি বলে জানা যায়।
জাটকা রক্ষা ও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকার চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত একশ কিলোমিটার, চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর থেকে শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার তারাবুনিয়া থেকে নড়িয়া উপজেলার ভোমকারা পর্যন্ত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার সহ মোট ৫টি অভয়াশ্রম অঞ্চলের প্রায় ৪শ কিলোমিটার নদী অঞ্চলে মার্চ-এপ্রিল দু’মাস অভয়াশ্রম ঘোষণা করে সকল প্রকার জাল ফেলা ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ সময় অভয়াশ্রম অঞ্চলে লক্ষ লক্ষ জেলে পরিবার বেকার হয়ে পড়ে। সরকার অভয়াশ্রমে ক্ষতিগ্রস্ত জেলে পরিবারকে নিবন্ধিত করে ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৪ মাস প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে ভিজিএফ চাউল সহ বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করে থাকে।
চাঁদপুর জেলার চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রমের অন্তর্ভুক্ত। এ চার উপজেলায় সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৫১ হাজার ১শ ৯০ জন। গত বছর ২০১৯ সাল পর্যন্ত জাটকা রক্ষা মৌসুমে নিবন্ধিত সকল জেলে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চার মাস চাল পেয়েছে। চলতি বছর বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর জেলার নিবন্ধিত ৫১ হাজার ১শ ৯০ জন জেলে পরিবারের মধ্যে ৩৮ হাজার ৫ জন জেলে পরিবারের জন্য চাল বরাদ্দ প্রদান করে। সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলে কার্ডধারী ১৩ হাজার ১শ ৮৫ জন জেলে পরিবারের জন্য চাল বরাদ্দ না আসায় তাদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। অভয়াশ্রম কার্যক্রমে বেকার হয়ে পড়া জেলে পরিবারগুলো পরিবার পরিজনের জীবন জীবিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। মৎস্যজীবী নেতৃবৃন্দ জানান, বঞ্চিত এসব জেলে মৌসুমী জাটকা ব্যবসায়ী আড়তদারদের প্ররোচনায় অভাবের তাড়নায় নদীতে জাটকা ধরতে নেমে পড়লে অভয়াশ্রম কর্মসূচি ব্যাহত হবে।
জেলা জাটকা রক্ষা টাস্কফোর্স কমিটির গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সভায় মৎস্যজীবী নেতৃবৃন্দ বরাদ্দ কম আসার বিষয়টি উল্লেখ করেন। নিবন্ধিত বাকি ১৩ হাজর ১শ ৮৫ জন জেলে পরিবারের জন্য চাল বরাদ্দের জন্য সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য সভায় জোর দাবি জানান। জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভার পর চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মৎস্যজীবী নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগণ জানান, বরাদ্দ কম আসায় চাল বিতরণের সময় আমরা সমস্যায় পড়ব এবং চাল বিতরণে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। বঞ্চিত জেলে আইডি কার্ডধারী জেলেদের আমরা কী জবাব দিব? তারা বাকি জেলে পরিবারের জন্য দ্রুত চাল বরাদ্দের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানান। অন্যথায় বঞ্চিত কার্ডধারী বেকার জেলেদের নদীতে নামা রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। জাটকা রক্ষা কর্মসূচি ব্যাহত হবে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহআলম মল্লিক জানান, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলেদের আইডি কার্ড প্রদানের মাধ্যমে একটি যুগান্তরকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। নিবন্ধিত কার্ডধারী জেলেদের অভয়াশ্রম চলাকালে চালসহ বিকল্প কর্মসংস্থানে উপকরণ সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়া নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ে বৃষ্টিতে, দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত জেলেদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের পদক্ষেপ নিয়েছেন। যেখানে চাঁদপুর জেলায় ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৫১ হাজার আইডি কার্ডধারী নিবন্ধিত জেলে জাটকা রক্ষা মৌসুমে ৪০ কেজি করে ৪ মাস চাল সহায়তা পেয়েছে, সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বছরে জেলার ১৩ হাজার আইডি কার্ডধারী পরিবারকে চাল বরাদ্দ প্রদান না করায় বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। তিনি এ ব্যাপারে চাঁদপুরের কৃতী সন্তান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির এমপির হস্তক্ষেপ কামনা করেন। জেলা জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তছলিম নিবন্ধিত আইডি কার্ডধারী সকল জেলের জন্য চাল বরাদ্দ প্রদান না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আইডি কার্ডধারী বঞ্চিত ১৩ হাজার জেলে পরিবারের জন্য দ্রুত চাল বরাদ্দের জন্য তিনিও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির হস্তক্ষেপ কামনা করেন।