• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাচ্ছেন মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি

প্রকাশ:  ২৪ জানুয়ারি ২০২০, ২১:৫৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাচ্ছেন চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী এলাকার সাংসদ মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম। মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা এ মহানায়কের উক্ত পুরস্কার পাওয়ার খবরে তাঁর নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীদের মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। এ আনন্দে হাজার হাজার নেতা-কর্মী তাদের প্রিয় নেতাকে সামিজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অভিনন্দন জানাতে দেখা গেছে।
এদিকে গতকাল ২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে পুরস্কারের জন্যে মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপির নাম ঘোষণা করেন। ২ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পুরস্কার তুলে দেবেন।
জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপির রচিত ‘এ টেল অব মিলিয়নস্’ বইটি ১৯৭৪ সালে এবং বইটির বাংলা অনুবাদ ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ ১৯৮১ সালে প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার করুণ ও বেদনাময় কাহিনী নিয়ে রচিত তাঁর আরেকটি বই ‘মুক্তির সোপানতলে’ প্রকাশিত হয় ২০০১ সালের জুলাই মাসে। এ দুটি বই ছাড়াও আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধের উপর বহু নিবন্ধ লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টরের এ কমান্ডার। এছাড়াও তিনি দেশ-বিদেশের বহু টেলিভিশনে মুক্তিযুদ্ধের উপর সাক্ষাৎকারে অংশ নিয়েছেন।
১৯৬০ সালে প্রবর্তিত বাংলা একাডেমি পুরস্কার ১০টি বিষয়ে দেয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ও লেখকদের হাতে তিন লাখ টাকা, সনদপত্র ও স্মারক তুলে দেয়া হবে।
জীবনী : ১৯৪৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৩ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার নাওড়া গ্রামে জনাব রফিকুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আশরাফ উল্লাহ ঢাকা জেলার ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডুকেশন অফিসার ছিলেন। তিন ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে রফিকুল ইসলাম পিতা মাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান। তাঁর স্ত্রী চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের কন্যা। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে।
রফিকুল ইসলাম নিজ গ্রামের নাওড়া স্কুল, পিরোজপুরের ভা-ারিয়া, গোপালগঞ্জ মডেল স্কুল, শরীয়তপুরের পালং, কুমিল্লার চান্দিনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লেখাপড়া করেন এবং ১৯৫১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা মডেল হাইস্কুল হতে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করেন। পরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ হতে আইএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে অনার্স পড়াশোনা করেন।
১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ‘ইউপিপি’ সংবাদ সংস্থায় সাংবাদিকতা করেন।
১৯৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান আর্মিতে যোগ দেন এবং ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান আর্মির ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কমিশন লাভ করেন। পরবর্তীতে তাঁকে আর্টিলারী কোরে নেয়া হয়।
১৯৬৮ সালে তিনি লাহোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে তাঁর ইউনিট ২৪ ফিল্ড রেজিমেন্ট (আর্টিলারী)সহ যশোহর ক্যান্টনমেন্ট আসেন এবং রেজিমেন্টের অ্যাডকুট্যান্ট-এর দায়িত্ব পালন করেন। পরে ডেপুটেশনে দিনাজপুরে ৮ উইং ইপিআর-এর অ্যাসিস্ট্যান্স উইং কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালের প্রথমদিকে তিনি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্-এর চট্টগ্রামস্থ হেডকোয়ার্টারে অ্যাডজুট্যান্ট পদে যোগ দেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ৮:৪০ মিনিটে তিনি তাঁর অধীনস্থ ইপিআর-এর বাঙালি সৈনিক ও জেসিওদের নিয়ে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং রাত ১১টা ৩০ মিনিটে সমগ্র চট্টগ্রাম শহর দখলে আনতে সক্ষম হন।
স্বাধীনতাযুদ্ধে তিনি ১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। ৫টি সাব-সেক্টর নিয়ে গঠিত ১নং সেক্টরটি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার অংশ নিয়ে গঠিত ছিলো। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্যে আরো অনেকের সাথে তাঁকে জীবিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সর্বোচ্চ সম্মান ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।
১৯৭২ সালের ২৯ এপ্রিল সেনাবাহিনী অবসর নিয়ে চট্টগ্রামে সে সময়কার বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক ‘দি পিপলস ভিউ’-র সহযোগী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং ১৯৮১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি হ্যান্ডলুম বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং তারপরে বি.আই.ডব্লিউ.টি.সি.’র চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৯০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের প্রথম নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা হিসেবে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়-এ দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি নির্বাচনী এলাকা ২৬৪-চাঁদপুর-৫ হতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ওই বছরের ২৩ জুন হতে ১৯৯৯ সালের ১১ মার্চ পর্যন্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮১ সালে তিনি ‘ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট’-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘হার্ভাড বিজনেস স্কুলে সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে অধ্যয়ন করেন।
২০০৮ থেকে শুরু করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ৪র্থ বারের মতো চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি নির্বাচনী এলাকা-২৬৪ হতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বর্তমান তিনি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।