• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

অভিযানের আগের দিন পাঁচবার ইলিশের দরপতন ও বৃদ্ধি

একদিনেই ৭ কোটি টাকার ১৫ হাজার মণ ইলিশ বিক্রি

প্রকাশ:  ১০ অক্টোবর ২০১৯, ২২:৩০ | আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৯, ২২:৩২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুরে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের আগেরদিন অর্থাৎ গত মঙ্গলবার রাতভর বড়স্টেশন মাছের আড়ত ও বিভিন্ন হাট-বাজারে দিনের চেয়ে রাতে ব্যবসায়ী ও ক্রেতার ভিড় ছিলো অনেক বেশি। এদিন ভোর রাত পর্যন্ত চলেছে ইলিশ বেচা-বিক্রি। আড়তে লক্ষ্য করা গেছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। কেনা-বেচা হয়েছে কয়েক কোটি টাকার ইলিশ। তবে ক্রেতাদের কেউ কেউ পদ্মা ও মেঘনার ইলিশ মনে করে চড়া দামে সাগরের ইলিশ কিনে প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইলিশ ব্যবসায়ী বাবুল হাজী জানান, মঙ্গলবার দিনে ও রাতে গড়ে প্রায় ১৫ হাজার মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা।
অন্য ব্যবসায়ীরা জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত একদিনেই পাঁচবার ইলিশের হাটে দরপতন ও বৃদ্ধি হয়েছে। শুধুমাত্র মঙ্গলবার রাতেই প্রায় ১০ হাজার মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে। এ মাছঘাটের ৫০টি আড়তে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে ইলিশ বিক্রি।
ক্রেতারা জানান, ইলিশ বিক্রির শেষদিন হওয়ায় কম দামে ইলিশ কেনার আশায় ক্রেতারা এসেছিলেন। কিন্তু বার বার দরপতন ও বৃদ্ধিতে বিভ্রান্ত হন তারা। এদিকে কম দামে কয়েক হাজার মানুষ ইলিশ কিনতে আসায় আড়তগুলোতে হাঁটার জন্যে তিল ধারণের জায়গা ছিলো না। শত শত মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন যানবাহনের যানজটে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তায় ছিলো প্রচ- যানজট।
মঙ্গলবার দক্ষিণ অঞ্চলের ও সাগরের ইলিশে মাছঘাট একাকার হয়ে পড়ে। যার ফলে এসব ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় চলে রাত প্রায় ৩টা পর্যন্ত। গভীর রাতে সাধারণ ক্রেতা না থাকায় শহরের বিভিন্ন হাট-বাজার, শহরতলীর ব্যবসায়ী ও উপজেলার পাইকাররা রাতে ইলিশ কিনেছে একেবারে কম দামে।
ব্যবসায়ীরা জানান, মঙ্গলবার দিনে ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশের মণ ছিলো ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। সে ইলিশ রাতে বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। ৮-৯শ’ গ্রামের ইলিশ দিনে ৩০-৩৫ হাজার টাকা মণে বিক্রি হলেও রাতে পাইকারি বিক্রি হয়েছে ২৩-২৫ হাজার টাকায়। ৫শ’-৬শ’ গ্রামের ইলিশ দিনে ১৮-১৯ হাজার টাকা মণে বিক্রি হলেও রাতে বিক্রি হয়েছে ১৪-১৫ হাজার টাকা। শেষ রাতের ক্রেতারা ইলিশ কম দামে কেনার সুযোগ পেয়েছে।
বড়স্টেশন মাছঘাট ছাড়াও শহরের বিপণীবাগ, ওয়্যারলেস, ফিশারি, বাবুরহাট, পুরাণবাজার, কোর্ট স্টেশন গেট, লেকেরপাড়, জোড়পুকুরপাড়, নৌ-টার্মিনাল এলাকা, বড়স্টেশন, নতুনবাজার-পুরাণবাজার ব্রিজ এলাকা, নতুনবাজার, বাসস্ট্যান্ড, পালবাজার গেটসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে রাতভর ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় চলতে দেখা গেছে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ শবেবরাত জানান, মঙ্গলবার চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার লোকাল ইলিশ কম ছিলো। নোয়াখালী, বরিশাল ও ভোলার ইলিশে মাছঘাট ভরপুর ছিলো। সকালে প্রচুর বিক্রির পর ইলিশশূন্য হয়ে পড়ে মাছঘাট। বিকেলে ও রাতে আরো অনেক ট্রলার চাঁদপুরে আসায় ইলিশের প্রচুর আমদানি হয়। গতকাল রাতে প্রায় ৫ হাজার মণ ইলিশ আমদানি হয়। তবে আমার ধারণা, মঙ্গলবার রাতে ৮০-৮৫টি আড়তে প্রায় ৭ কোটি টাকার মতো ইলিশ বিক্রি হয়েছে।
মৎস্য আড়তের মালিক হাজী জালাল উদ্দিন জমাদার বাবুল হাজী বলেন, দিনে বিক্রির পরে রাতে অনেক ইলিশ মাছঘাটে আসে। সে ইলিশ গভীর রাত পর্যন্ত বিক্রি হয়। গত বছরও আমদানি হওয়া ইলিশ রাত ৩টা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিলো। ইলিশের দাম দিনে বেশি থাকলেও রাতে পানির ধরে বিক্রি হয়েছে। গতকাল তার আড়তে কমপক্ষে ২ হাজার মণ এবং সব কটি আড়তে প্রায় ১৫ হাজার মণ ইলিশ আমদানি হয়েছে বলে তিনি জানান।
মৎস্য ব্যবসায়ী আজিজুল হক জমাদার বলেন, রাত ৩টা পর্যন্ত হাতিয়া, বরিশাল থেকে ১৪-১৫টি ফিশিংবোট ও পিকআপ ভ্যানযোগে ইলিশ আসে। সান্তাহার, নীলফামারী, চুয়াডাঙ্গা, বগুড়া, পাবনা, নাটোর থেকেও  পাইকাররা মাছ কিনতে চাঁদপুরে আসে।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বড়স্টেশন মাছঘাট থেকে অবৈধভাবে প্যাকিং করে মঙ্গলবার রাতেই বিভিন্ন জেলার মোকামে পাঠানোর নামে ভারতে ইলিশ পাচার হয়েছে। সরকার নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়ে নির্ধারিত পরিমাণ ইলিশ ভারতে রপ্তানি করার সুযোগ দিয়েছিলো। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে এসব ইলিশ পাচার করা হয়েছে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেয়া যেতো।