চাঁদপুরে আখের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
চাঁদপুর জেলায় এ বছর আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ার কারণে কৃষকদের মুখেও হাসি ফুটেছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সবচে’ বেশি আখ আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আখ খুচরা ও পাইকারী বিক্রি। আগামী ১ মাসের মধ্যে অধিকাংশ জমির আখ বিক্রি হয়ে যাবে। এসব জমিতেই আবাদ হবে বোরো ধান।
চাঁদপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৮ উপজেলার আখ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬৭৫ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৬৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৩৩৫ হেক্টর, মতলব উত্তর উপজেলায় ২১০ হেক্টর। মতলব উত্তর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা সেচ প্রকল্পের আওতায় হওয়ার কারণে জমিগুলো কৃষি উপযোগী থাকে বছরজুড়ে।
এছাড়াও চাঁদপুর সদর উপজেলায় আখের আবাদ হয়েছে ৬৫ হেক্টর, মতলব দক্ষিণে ৫ হেক্টর, হাজীগঞ্জ উপজেলায় ৮ হেক্টর, শাহরাস্তিতে ৩৫ হেক্টর, কচুয়ায় ৫ হেক্টর ও হাইমচর উপজেলায় ৭ হেক্টর।
গত ২৪ জুলাই সোমবার ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর ও বালিথুবা ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় জমিতে আখের আবাদ হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় শুধু আখ আর আখ। কৃষকরা জমিতে কাজ করছেন। কেউ আখ তুলছেন, কেউ আঁটি বাঁধছেন। আবার অন্য শ্রমিক এসব আখ সড়কে নিয়ে স্তূপ করে রাখছেন।
ফরিদগঞ্জের বালিথুবা ইউনিয়নের মদনেরগাঁও গ্রামের কৃষক মুখলেছুর রহমান বলেন, তিনি এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে আখ আবাদ করেছেন। খরচ বাদ দিয়ে তার কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লোহাগড় গ্রামের কৃষক জুয়েল পাটওয়ারী ও সুমন খান বলেন, তারা প্রায় ১৫ বছর আখের আবাদ করেন। সেচপ্রকল্প হওয়ার কারণে তাদের আখের ফলন খুবই ভালো হয়। এ বছর তাদের জমিতে ২০৮ নম্বর অর্থাৎ যা ‘চাঁদপুর গ্যা-ারি’ নামে পরিচিত এটিই তারা আবাদ করেছেন। চাঁদপুর গ্যা-ারি স্থানীয়ভাবে খুচরা এবং পাইকারী দুইভাবে বিক্রি হচ্ছে। কারণ এ আখ খুব সহজেই চিবিয়ে খাওয়া যায় এবং দামও ভালো পাওয়া যায়।
মদনেরগাঁও গ্রামের আরেক কৃষক বাবুল গাজী বলেন, আমাদের এলাকায় ইদানীং সময়ে আখ বিক্রি শুরু হয়েছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে সব আখ বিক্রি হয়ে যাবে। তবে কিছু উঁচু জমির আখ দেরিতে বিক্রি হয় এবং ওইসব কৃষক দামও ভালো পান। এখন পাইকাররা এসে পুরো জমির আখ একসাথে ক্রয় করে নিতে শুরু করেছে।
আখের পাইকারী ব্যবসায়ী রমজান আলী মিজি চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, এ বছর আখের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। এ এলাকায় চাঁদপুর গ্যা-ারি, রং বিলাস, ইশ^রদি বিএসআরআই ৩৪, ৪১ ও ৪২ আবাদ হয়। স্থানীয় জাতের আখের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। আমি এসব আখ ক্রয় করে ঢাকা এবং নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করে চাঁদপুরের চাইতে ভালো দাম পেয়ে থাকি।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা নোয়াখেরুল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ভালো থাকায় চাঁদপুরে আখের আবাদ খুবই ভালো হয়েছে। আখ লাভজনক হওয়ার কারণে কৃষকদেরও দিন দিন আখ আবাদের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। চাঁদপুর গ্যা-ারি নামক আখ এখন স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হচ্ছে এবং আখ চাষীরা ভালো দামও পাচ্ছে।