বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে ‘মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়রের এ মন্তব্য আসে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৫৬৫ জন মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল জুলাই মাসেই রেকর্ড ৬ হাজার ৪২১ জন হাসপাতালে গেছেন।
কিন্তু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৮৫ শতাংশই চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যান না এবং যারা হাসপাতালে যান, তাদের মাত্র ২ শতাংশের তথ্য সরকারি নজরদারির মধ্যে আসে- এমন যুক্তিতে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের একটি অনুমিত দুদিন আগে প্রথম আলোতে প্রকাশ করা হয়।
সেখানে বলা হয়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে সাড়ে তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য বিশ্লেষণ করে আক্রান্তের এই অনুমিত সংখ্যা পাওয়া গেছে। আর এই অনুমিত হিসাব তৈরিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সহায়তা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বৃহস্পতিবার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, “ছেলেধরা নিয়ে যে গুজব উঠেছে; এটাও সেরকম। সরকার এটা কঠিনভাবে মোকাবেলা করবে।”
তিনি দাবি করেন, সাড়ে তিন লাখ মানুষের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ওই তথ্য ‘কাল্পনিক’।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫৬০ জন ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই আছেন ৫৫৯ জন রোগী।
গত মাসের শুরু থেকেই ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেছে। মশাবাহিত এ রোগে এরইমধ্যে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যদিও সরকারের খাতায় এসেছে আট জনের মৃত্যুর খবর।
ঢাকায় এখন ডেঙ্গু রোগীর চাপ এত বেশি যে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক সরকারি হাসপাতালে বেডের অতিরিক্ত রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিশেষ সমন্বয় সভা করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ওষুধ দ্রুত সংগ্রহ করতে উদ্যোগ নিতে বলা হয়।
আর তার পরদিন সকালে মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে ২৫ থেকে ৩১ জুলাই দেশব্যাপী মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহের উদ্বোধন করা হল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম দাবি করেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা আশপাশের দেশের তুলনায় কম।
মশা মারার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে আইসিডিবিআর,বির গবেষণায় ফলাফলও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
মন্ত্রী বলেন, “অভিযোগ ওঠার পর আমরা পরীক্ষা করতে দিয়েছিলাম। পরীক্ষার পর আমরা জানতে পেরেছি যে, ওষুধে কোনো সমস্যা নাই।”
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে পূর্ণ বয়স্ক মশা মারতে এক লিটার কেরোসিনের সঙ্গে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পারমেথ্রিন, শূন্য দশমিক ২ শতাংশ টেট্রামেথ্রিন এবং শূন্য দশমিক ১ শতাংশ এস বায়ো অ্যালাথ্রিনের মিশ্রন ফগার মেশিন দিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এক লিটার কেরোসিনের সঙ্গে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ পারমেথ্রিন, শূন্য দশমিক ২ শতাংশ টেট্রামেথ্রিন এবং শূন্য দশমিক ২ শতাংশ অ্যালেথ্রিন মেশানো হয়।
এই মিশ্রনে মশা মারার মূল উপাদান হিসেবে থাকে পারমেথ্রিন, যেটা এখন মশা মারতে কাজ করছে না বলে আইসিডিডিআর,বির গবেষণায় উঠে আসে।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরীক্ষায় মশার পারমেথ্রিন, ডেল্টামেথ্রিন, টেট্রামেথ্রিন, ম্যালাথিয়ন প্রতিরোধী হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া গেছে।