• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

তীব্র স্রোতে দুই নৌরুটে ফেরি পারাপারে অচলাবস্থা

প্রকাশ:  ১৮ জুলাই ২০১৯, ২২:৩৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
পদ্মায় পানি বেড়ে দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ঘাটের পন্টুন ডুবে গেছে
প্রিন্ট

পদ্মা-যমুনা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে নৌযান চলাচলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রচণ্ড স্রোতের বিপরীতে ফেরিগুলো চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। চারটি ফেরি চলাচল করতে না পারায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। যান্ত্রিক সমস্যায় সংস্কারে আছে রুটের সাতটি ফেরি। এতে করে ফেরির সংকটও দেখা দিয়েছে প্রকট আকারে।

এসব কারণে গত কয়েকদিন ধরে এ রুটে যানবাহন পারাপার চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উভয় ঘাটে নদী পারের অপেক্ষায় আটকে পড়েছে সহস্রাধিক যানবাহন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ দৌলতদিয়া ঘাট থেকে গোয়ালন্দ রেলগেট পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটারজুড়ে মহাসড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। যানজটে আটকে পড়ে সহস্রাধিক যানবাহন। আটকেপড়া যাত্রী ও চালকরা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তিন-চার দিনেও নদী পার হতে পারছে না অপচনশীল পণ্যবাহী যানবাহন। ১/২ দিন ধরে আটকে থেকে কয়েকশ' কাঁচামালবাহী ট্রাকের পণ্য পচতে/পাকতে শুরু করেছে।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া অফিস সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে পাটুরিয়া ঘাট থেকে যাত্রী ও যানবাহন বোঝাই করে রোরো ফেরি আমানত শাহ দৌলতদিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয়। কিন্তু মাঝ নদীতে এসে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরিটি আর সামনে এগোতে পারেনি। এ অবস্থায় প্রায় চার ঘণ্টা সেখানে ইঞ্জিন চালু রেখে ফেরিটি স্থির রাখতে পারলেও একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে পুনরায় পাটুরিয়া ঘাটে ফিরে যায়। একইভাবে দুপুর ১২টার দিকে রোরো ফেরি শাহজালাল পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ঘাটের কাছাকাছি এলেও তীব্র স্রোতে শেষ পর্যন্ত ঘাটে ভিড়তে পারেনি। 

সূত্রমতে, তীব্র স্রোতের কারণে আগে থেকেই বন্ধ হয়ে আছে রোরো ফেরি খানজাহান আলী ও ইউটিলিটি ফেরি শাপলা-শালুক। এ ছাড়া রুটের পাঁচটি ফেরি প্রায় এক মাস ধরে সংস্কারে আছে নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ডে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত এ রুটে সচল ছিল মাত্র ১১টি ফেরি। কিন্তু ফেরিগুলোর নদী পার হতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২-৩ গুণ সময় বেশি লাগছে। 


এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, পদ্মায় পানি বেড়ে দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ঘাটের পন্টুন নিমজ্জিত হয়ে গেছে। পন্টুনের র‌্যাম উঁচু হয়ে যাওয়ায় সেখান দিয়ে ঠিকমতো যানবাহন ফেরিতে উঠতে পারছে না। ঘাট মেরামতের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্বশীল কাউকেই সেখানে দেখা যায়নি। এ সময় সেখানে উপস্থিত গোয়ালন্দের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করলে তাদের কর্মীরা এসে ফেরির র‌্যাম ও নিমজ্জিত রাস্তায় বালু ও খোয়া ফেলে উঁচু করার কাজ শুরু করে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া অফিসের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি জানান, রুটে চলাচলকারী ১৫টি ফেরির মধ্যে তীব্র স্রোতের কারণে চারটি ফেরি চলাচল করতে পারছে না। অন্য ফেরিগুলো ট্রিপে অতিরিক্ত সময় লাগায় ঘাট এলাকায় যানবাহনের সিরিয়ালের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ১৮টি ফেরির মধ্যে বর্তমানে তিনটি ফেরি ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন পারাপার করছে। মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকূল পয়েন্টে বিপদসীমার আট সে.মি. ওপর দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হওয়ায় লৌহজং টার্নিং পয়ন্টে ঘূর্ণিস্রোত তীব্র হয়ে উঠছে। তিনটি ফেরির মধ্যে প্রতিটি ফেরি ৬-৭ ঘণ্টা সময় বহন করে পদ্মা পারাপার হচ্ছে। 

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ছোট-বড় ১৭টি যানবাহন ও তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে ফেরি কাকলী শিমুলিয়া ঘাট থেকে কাঁঠালবাড়ি ঘাটের উদ্দেশে রওনা করে। ফেরিটি লৌহজং চ্যানেলের কাছে পৌঁছলে ঘূর্ণিস্রোতের কবলে পড়ে। তিন ঘণ্টা পর্যন্ত উজান বেয়ে ফেরিটি কাঁঠালবাড়ি ঘাটে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়। আট ঘণ্টা পর ফেরিটি উদ্ধার করে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।

বিআইডব্লিউ টিসির কাঁঠালবাড়ি ঘাট ইনচার্জ আব্দুস সালাম মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে লৌহজং চ্যানেলে ঘূর্ণিস্রোত আরও প্রকট রূপ ধারণ করেছে। কাকলী নামে একটি ফেরি আট ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে। উভয় পারে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বাধিক পঠিত