• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

উৎসকর বৃদ্ধিতে সঞ্চয়পত্র গ্রাহকদের মাঝে ক্ষোভ

প্রকাশ:  ১৫ জুলাই ২০১৯, ১০:৪৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 উৎসকর বৃদ্ধিতে সঞ্চয়পত্র গ্রাহকদের মাঝে চলছে ক্ষোভ। চাঁদপুর জেলা সঞ্চয়পত্র অফিসে গিয়ে তেমনটিই পরিলক্ষিত হয়। অনেক গ্রাহকই বলেন, সরকার আমাদের সাথে চুক্তিপত্র লঙ্ঘন করেছেন। আমরা যারা বাজেট অধিবেশনের পূর্বে জাতীয় সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছি, আমাদেরকে এর আওতায় আনা ঠিক হয়েছে কিনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দয়া করে একটু ভেবে দেখবেন। তারা বলেন, জাতীয় সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার ক্ষেত্রে ক্রয়কারীদের জমাকৃত টাকার উপর কত টাকা লাভ দেওয়া হবে এবং লাভকৃত টাকার উপর কত টাকা উৎস কর কেটে নেওয়া হবে তা কিন্তু জমা দেওয়ার পূর্বেই গ্রাহকদের জানানো হয়। এ সকল নিয়ম মেনেই আমানতকারীগণ সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেন বা টাকা জমা রাখেন। কিন্তু বাজেট অধিবেশনে সঞ্চয়পত্র গ্রাহকদের সাথে চুক্তি হওয়া পূর্বের শর্ত রাখেনি সরকার-এমনটাই মনে করেন সঞ্চয়পত্র আমানতকারীগণ। তারা বলেন, আমাদের আমানতের উপর প্রাপ্য লভ্যাংশের শতকরা ৫ ভাগ হারে উৎসকর কেটে নেওয়া হবে, এ শর্ত সাপেক্ষে আমরা টাকা জমা রাখি। কিন্তু এখন ১০ ভাগ হারে উৎস কর কেটে নেয়া হচ্ছে, তাতো চুক্তি লঙ্ঘনের সামিল। সরকার যদি এবারের বাজেটে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের উপর মুনাফার হার বৃদ্ধি করতেন, তাহলে আমরা যারা পূর্বের আমানতকারী ছিলাম তারা কি এ সুযোগ পেতাম। নিশ্চয়ই পেতাম না। সুযোগ পেতো নতুন আমানতকারীগণ। আমরা মনে করি, নতুন আমানতকারীদের ক্ষেত্রেই বাজেট অধিবেশনে বৃদ্ধি পাওয়া নতুন উৎসকর কার্যকর হওয়া উচিত। আমাদের সারা বছরের একটি হিসেব থাকে আমরা আমাদের জমাকৃত টাকা থেকে এত টাকা লাভ পাবো এবং এ টাকা থেকে আমরা কী খাতে কী ব্যয় করবো তা আমরা নির্ধারণ করে রাখি। বাড়তি উৎস কর কেটে নেওয়ায় এখন আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে। আমরা এমন কোনো ব্যবসা জানি না যে, অন্য কাজ করে সংসার চালাবো। এ আমানতের উপরই আমাদের নির্ভর করতে হয়।
জেলা সঞ্চয় অফিসে গিয়ে দেখা যায়, যে সকল আমানতকারী কোনো কারণ বশত তাদের লভ্যাংশ কয়েক মাস বা কয়েক বছরেও উত্তোলন করেন নি, তাদেরকেও নতুন উৎসকরের আওতায় আনা হয়েছে। বাড়তি উৎসকর দিয়েই তাদের লভ্যাংশ তুলতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য, আমরাতো আমাদের লাভের টাকা বাজেট অধিবেশনের পূর্বেই সঞ্চয়পত্রের উপর প্রাপ্য হই। তখন যদি উত্তোলন করে নিতাম, তাহলে তো আমাদের এ বাড়তি উৎস কর দিতে হতো না। তাহলে আমরা এখন তা দিব কেন? কিন্তু আমানতকারীদের এ কথা শুনতে নারাজ জেলা সঞ্চয় অফিসের সহকারী পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান। তিনি জানান, প্রতিদিনই গ্রাহকগণ বাড়তি উৎসকরের জন্যে অনেক কথা বলছেন। কিন্তু তাদেরকে সান্ত¡না দেয়া বা বুঝিয়ে বলা ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই। সরকার যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করতে বদ্ধপরিকর। তবে গ্রাহকদের অভিমত বা ক্ষোভের কথা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো। এর বাইরে আমাদের কিছু করার নেই।  
কথা হয় জেলা সঞ্চয় অফিসার মোঃ জাহাংগীর হোসেনের সাথে। তিনি জানান, সরকার সঞ্চয়পত্রের উপর লভ্যাংশের হার কমাননি। পূর্বের হারেই লাভ প্রদান করছেন। তবে উৎসকর ৫ ভাগ বৃদ্ধি করেছেন। যা পুরানো বা নতুন সকল আমানতকারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বর্তমান সময় যারা লাভ বা মূল টাকা তুলতে আসেন তাদের অনেক প্রশ্নের সম্মুুখীন হতে হয় আমাদের।
এ বছর সদ্য সমাপ্ত বাজেট অধিবেশনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্র আমানতকারীদের লভ্যাংশর উপর ১০ ভাগ হারে উৎসকর কর্তন। যা পূর্বে ছিল ৫ ভাগ হারে। তবে বাজেট অধিবেশনে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হয়নি। পূর্বের প্রদত্ত হারই বহাল রাখা হয়েছে। উৎসকর পূর্বের ৫ ভাগের স্থলে ১০ভাগ বৃদ্ধিতেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। বর্তমান সময় মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেই ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এবং বিকল্প কোনো উপার্জনের রাস্তা না পেয়ে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন এবং এ সঞ্চয়পত্রের উপর নির্ভর করেই সংসার চলে এমন অধিকাংশ পরিবারের। এবছর বাজেট অধিবেশনে যখনই উৎসকর বৃদ্ধির প্রস্তাব আনেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী, তখনই সংসদে এ প্রস্তাবের উপর মানবিক দিক বিবেচনা করে উৎসকর বৃদ্ধি না করার জন্য মাননীয় সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরীসহ অনেকে জোরালো বক্তব্য রাখেন। তাদের এ বক্তব্যে আমানতকারীদের অনেকেই আশার আলো দেখেছিলেন। তারা ভেবেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রীর আনীত এ প্রস্তাব খারিজ করে দিবেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা খারিজ না হয়ে অর্থমন্ত্রীর আনীত প্রস্তাবই পাস হয়ে গেল। আর পাস হওয়ার সাথে সাথেই তা কার্যকর হয়ে গেলো। উৎসকর বৃদ্ধিতে পরিবার প্রকল্পের আওতাধীন আমানতকারীগণ এক লাখে প্রতিমাসে পাবেন ৮৬৪ টাকা, যা পূর্বে পেতেন ৯১২ টাকা। নীট প্রকল্পের আওতাধীন আমানতকারীগণ এক লাখে প্রতি ৩ মাস অন্তর পাবেন ২৪৮৪ টাকা, যা পূর্বে পেতেন ২৬২২ টাকা। পেনশনার প্রকল্পের আওতাধীন আমানতকারীগণ এক লাখে প্রতি ৩ মাস অন্তর পাবেন ২৬৪৬ টাকা, যা পূর্বে পেতেন ২৭৯৩ টাকা। তবে আমানতকারীগণ মনে করেন বর্তমান সময়ে সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধিসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির বাজারে যাতে মধ্যবিত্ত পরিবার দু মুঠো খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারে, সেদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নজর দিবেন এবং বাড়তি উৎসকর কার্যকর না করে পূর্বের উৎস কর বহাল রাখবেন।