ভাষাসৈনিক শাহাদাত হোসেনের আহাজারি ॥ প্রতিকার চেয়ে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
আপন লোকদের হাতে প্রতারণার শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ৮৩ বছরের বৃদ্ধ এসএম শাহাদাত হোসেন। প্রতিকার চেয়ে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির সহযোগিতা কামনা করেছেন। জীবন সায়াহ্নে এসে নিজ সন্তানদের সেবা যতœ পাওয়াসহ আপন ভিটে মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার ইচ্ছা পোষণ করেন। নিজের লক্ষ লক্ষ টাকার সহায় সম্পদ থাকার পরও আত্মীয় স্বজন সহ নিজ সন্তানদের দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়ে খেয়ে না খেয়ে বর্তমান সময়ে চাঁদপুর শহরের আঃ করিম পাটওয়ারী রোডস্থ চাঁদনগর হোটেলের একটি কক্ষে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তিনি আহাজারি করে বলেন, যে ভাষার জন্যে সংগ্রাম করেছি, যে দেশের জন্যে আন্দোলন করেছি, সেই প্রিয় মাতৃভূমিতে নিজ আত্মীয় পরিজনদের দ্বারা প্রতারিত হবো, আর ন্যায় বিচারের আশায় প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াবো তা কখনো ভাবিনি। আজ নিজেকে অত্যন্ত অসহায় মনে করছি। তারপরও বুক বেঁধে আছি প্রশাসন সুদৃষ্টি দিবেন, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আমার প্রতি সদয় হবেন, ফিরে পাবো আমি আমার কষ্টার্জিত সহায় সম্পদ।
শাহাদাত হোসেন সাপ্তাহিক তদন্তচিত্র নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে সাংবাদিকতায় ছিলেন সংশ্লিষ্ট। তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটন সাপেক্ষে লিখেছেন অনেক মানুষের দুঃখ-দুর্দশা-বঞ্চনার খবর। কিন্তু একদিন তিনি নিজেই যে খবরে পরিণত হয়ে যাবেন সে কথা ভুলেও কখনো ভাবেন নি। চাঁদপুর শহরের নিকটস্থ রঘুনাথপুরে তাঁর পৈত্রিক নিবাস থাকলেও তিনি নিজের উপার্জিত অর্থে রাজধানীতে গড়ে তোলেন স্থায়ী আবাসস্থল। মিরপুর ৬নং সেকশনের ‘ট’ ব্লকে ৮১/৮২ রূপনগরের সেই আবাসস্থল তথা সহায়-সম্পদ তিনি দু ছেলে তিন মেয়েকে হেবা করে লিখে দিয়েছেন। বিনিময়ে তাঁর বার্ধক্যকালে চেয়েছিলেন সেবা-যতœ। এরই মধ্যে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করলেন। এমন শারীরিক বিপর্যয়ে সেবা-যতœ যেখানে অনিবার্য সেখানে তিনি তার কিছুই পাচ্ছিলেন না। হলেন বাস্তুচ্যুত।
এমতাবস্থায় শাহাদাৎ হোসেন গ্রামের বাড়িতে পৈত্রিক নিবাসে জীবন সায়াহ্নের দিনগুলো কাটাতে চাইলেন। কিন্তু ভাতিজারা গ্রাস করে ফেলেছে সব। তারা ১৭ লাখ টাকার গাছ কেটে নিয়ে গেছে আর ড্রেজার দ্বারা ৪০ লাখ টাকার মাটি কেটে নিয়ে সাবেক ইউপি মেম্বারসহ বিভিন্ন জনের পুকুর ভরাট করেছে। তাঁর পৈত্রিক নিবাসে তাঁর মৃত এক ভাইয়ের ছেলে বিল্ডিং করেছে। তিনি সেই বিল্ডিংয়ে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে তাঁকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এই ভাতিজার নামে চাঁদপুর মডেল থানা ও এডিএম কোর্টে দুটি মামলা রুজু করা হয়েছে। এতো কোনো ফলোদয় হয়নি। পুলিশ প্রশাসন কাক্সিক্ষতভাবে এগিয়ে আসেনি। তিনি এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রীকে জানিয়েও কোনো সুবিচার পাননি।
বাস্তুচ্যুত শাহাদাৎ হোসেনের যাবার কোনো জায়গা নেই। গেল পবিত্র রমজানে তিনি চাঁদপুর শহরের স্ট্র্যান্ড রোডস্থ হোটেল তাজমহলে উঠেন এবং চৌধুরী মসজিদে ইতিকাফ করেন। তিনি যাতে তাঁর পিতার বাস্তুভিটায় ফিরে যেতে পারেন সে ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা পেতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। অন্যথায় তাঁকে প্যারালাইজ্ড ও পঙ্গু অবস্থায় রাস্তায় নেমে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। এভাবে একজন ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সাংবাদিক যদি রাস্তায় নেমে যান, তাহলে সরকার ও তার প্রশাসন যন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে সচেতন মহল মনে করেন।