ইস্টার সানডের প্রার্থনার মধ্যে গির্জা ও হোটেল মিলিয়ে আটটি স্থানে বোমা হামলায় রোববার রক্তাক্ত হয় শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো।
এর একটি পাঁচতারা হোটেলে দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে ছিলেন শেখ সেলিমের মেয়ে শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া।
বোমা হামলায় শেখ সেলিমের আট বছর বয়সী নাতি জায়ান চৌধুরীর মৃত্যুর খবর রাতে পরিবারের একটি সূত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করে।
জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স আহত হয়ে কলম্বোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাংসদ শেখ সেলিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই।
শ্রীলঙ্কায় হামলার পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, বোমা হামলার ঘটনার পর থেকে এক শিশুসহ দুই বাংলাদেশির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তাদের নাম-পরিচয় তিনি সে সময় প্রকাশ করেননি।
ব্রুনেই সফররত শেখ হাসিনা সেখানে প্রবাসীদের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে নিজের স্বজনদের বোমা হামলার শিকার হওয়ার কথা প্রথম জানান।
তিনি বলেন, “শেখ সেলিমের মেয়ে, জামাই ও দুই বাচ্চা নিয়ে শ্রীলঙ্কায় ছিল। সেখানে মেয়ের জামাই প্রিন্স … ছেলে সাড়ে আট বছর… ওরাও গিয়েছিল.. রেস্টুরেন্টে, সেখানে বোমা পড়েছে।
“জামাই আহত হাসপাতালে, বাচ্চাটার এখনও কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না যে সে কোথায় আছে। আপানারা একটু দোয়া করেন, যেন ওকে পাই। “
এরপর শেখ সেলিমের একান্ত সচিব ইমরুল কায়েস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যতদূর জেনেছি স্যারের (শেখ সেলিম) জামাই (মশিউল) ও নাতি আহত। এর মধ্যে জামাই শঙ্কামুক্ত, নাতি শঙ্কামুক্ত নন।”
হামলার সময় হোটেলের নিচতলার রেস্তোরাঁয় সকালের নাস্তা করতে গিয়েছিলেন প্রিন্স ও তার বড় ছেলে জায়ান। ছোট ছেলে জোহানকে নিয়ে শেখ সোনিয়া ওই সময় হোটেলের কক্ষে ছিলেন।
ইমরুল জানান, খবর শোনার পর বেলা ৩টার দিকে শেখ সেলিমের স্ত্রী ও ছোট ছেলে শেখ ফজলে নাইম শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। ব্রুনেই থেকে শেখ ফজলে ফাহিমও শ্রীলঙ্কায় রওনা হচ্ছেন।
শেখ সেলিম ঢাকার বাড়িতেই রয়েছেন জানিয়ে ইমরুল বলেন, উনাকে সান্ত্বনা দিতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও স্বজনরা বাড়িতে এসেছেন।
এরপর যোগাযোগ করা হলে তখন ওই বাড়িতে থাকা শেখ সেলিমের স্বজন (সম্পর্কে মামাত ভাই) শেখ অলিদুর রহমান হীরা শ্রীলঙ্কায় জায়ানের মৃত্যুর খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেন।
সকালে ও দুপুরে দুই দফায় কলম্বো ও আশপাশে আট জায়গায় হামলার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দুইশ ছাড়িয়ে গেছে; আহত হয়েছে সাড়ে চারশ মানুষ।
ব্রুনেইয়ে বক্তব্যে শেখ হাসিনা তার স্বজনদের জন্য দোয়া চান।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কায় হামলার ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা জানেন যে একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেছে। প্রায় আটটা জায়গায় সেখানে বোমা হামলা হয়েছে। অনেক মানুষ মারা গেছে, অনেকে আহত…। আমরা এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।”
জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস নির্মূলে বাংলাদেশ সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা ঘোষণাই শুধু দিইনি, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাকে সব সময় সতর্ক রেখেছি। এ ধরনের কোনো… যদি আমরা বের করতে পারি, সাথে সাথে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতিবাদ, মাদকাসক্ত…. এর কোনো স্থান হবে না।”
শ্রীলঙ্কায় হামলার ভয়াবহতার কথা বলতে গিয়ে গত মাসে নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্ট চার্চে দুটি মসজিদে হামলার কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে আপনারা দেখেছেন নিউ জিল্যান্ডে… সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ এলাকা, ওখানে কেউ চিন্তাই করতে পারে নাই কখনও এরকম ঘটনা ঘটবে। সেখানে মসজিদের ভেতরে নামজ পড়া অবস্থায় প্রায় ৫৫ জনকে… নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
“এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড… আসলে সন্ত্রাসী সন্ত্রাসীই। এদের কোনো ধর্ম, নাই, এদের কোনো জাত নাই, এদের কোনো দেশ নাই।… এরা মানুষের জীবনকে নষ্ট করে, মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়।”
বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় পেট্রোল বোমার সন্ত্রাসের প্রসঙ্গও এ সময় মনে করিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
“২০১৩ সালে, ২০১৪ সালে, ২০১৫ সালে এক টানা তিন মাস আগুনে পুড়িয়ে পুড়িয়ে কত মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।… এই ধরনের জঘণ্য কাজ যেন আর বাংলাদেশে না ঘটে।”
ওই কারণেই গত ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অগ্নি সন্ত্রাসীদের দেশের মানুষ গ্রহণই করেনি। অবশ্য ভোট পাবে কি করে, তারা তো নির্বাচন করেনি, নমিনেশন বাণিজ্য করেছে। ৩০০ সিটে ৬৪২ জনকে নমিনেশন দিলে জিতবে কী করে বলেন?”