চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজের বাসভবন কি তাহলে ঝুকিপূর্ণ?
চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজ মোঃ জুলফিকার আলী খাঁনের বাসভবনের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হলো এটি ব্যবহার করাটা আর নিরাপদ নয়। একে তো ভবনের ভেতরে ছাদের পলেস্তরা ভেঙ্গে পড়েছে, আবার অন্য রুমে দেখা গেলো ছাদের বিভিন্ন অংশ ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। পলেস্তরা ভেঙ্গে পড়ার সময় ভাগ্যক্রমে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে জুলফিকার আলী খাঁনের ছোট ছেলে মইজ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় জেলা ও দায়রা জজের বাসভবনের দ্বিতীয় তলার বেড রুমে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। বেড রুমের ছাদের বড় একটি অংশের পলেস্তরা ভেঙ্গে যেখানে পড়েছে এর পাশেই জজ সাহেবের ছোট ছেলে ৭ম শ্রেণীর ছাত্র মইজ দাঁড়ানো ছিলো। তার পাশেই উপর থেকে হঠাৎ পলেস্তরা ভেঙ্গে পড়ে। ভাগ্যক্রমে শিশু মইজ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। তার শরীরে অথবা মাথায় যদি পড়তো তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতো। ঘটনার সময় জজ সাহেব তাঁর কর্মস্থলে ছিলেন। আর বাসায় ছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
দুর্ঘটনার পর খবর পেয়ে প্রথমে জজ সাহেবের বাসায় ছুটে আসেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির আঃ মতিন মোল্লা ও নায়েবে নাজির নাদিম। এরপর দুর্ঘটনার ৪৫ মিনিটের মাথায় অর্থাৎ সোয়া ১১টার সময় চাঁদপুর কণ্ঠের এই প্রতিবেদকসহ আরো ক’জন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা ঘটনা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন। পলেস্তরা ভেঙ্গে পড়ার দৃশ্য দেখে সকলেই বললেন, এটি কোনো মানুষের শরীরের উপর পড়লে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতো।
সংবাদকর্মীরা জজ সাহেবের বাসায় গিয়ে তাঁর স্ত্রী ও দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তাঁর ছোট ছেলে মইজের সাথে কথা বলে ঘটনা সম্পর্কে জানেন। তখন তাঁরা ঘটনার ভয়াবহতার বিষয় জানান এবং এখানে বসবাস করাটা যে আর নিরাপদ নয় সে আশঙ্কার কথাও জজ সাহেবের স্ত্রী এবং জজ আদালতের স্টাফরা জানান। এদিকে সংবাদকর্মীরা বাসভবনের ড্রইং রুমে গিয়েও দেখেন ছাদের কিছু কিছু জায়গা ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। এসব দৃশ্য দেখে মনে হলো ভবনটি ব্যবহারের জন্যে আর উপযোগী নয়। যদিও বাহ্যিকভাবে রং করে পরিপাটি অবস্থায় রাখা হয়েছে।
এদিকে দুর্ঘটনার পর এক ঘন্টা সময় পার হলেও চাঁদপুর গণপূর্ত বিভাগের কেউ ঘটনাস্থলে আসেন নি দেখে এই প্রতিবেদক গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাহাবুবুর রহমানকে ফোন করে ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছু জেনেছেন কিনা জানতে চান। তখন তার প্রতিউত্তর তিনি যেভাবে দিলেন, তাতে মনে হয়েছে তিনি ঘটনাটিকে তেমন একটা গুরুত্ব দেননি। এটিকে তিনি সামান্য ঘটনা বলেও মন্তব্য করলেন। তিনি এও বললেন যে, তিনি চাঁদপুরেই আছেন এবং একটি ভবনের ঢালাই চলছে, সেখানে তিনি আছেন। তিনি তার অফিসের লোক পাঠিয়েছেন, তারা আসছেন বলে জানান। এরপর পৌনে ১২টার সময় অর্থাৎ ঘটনার সোয়া এক ঘণ্টা পর চাঁদপুর গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ঘটনাস্থলে আসেন। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ মাজেদুর রহমান খানকে ঘটনা জানালে তিনি গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীকে তাৎক্ষণিক জজ সাহেবের বাসায় যেতে বলেন। বেলা সোয়া ১২টার দিকে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাহবুবুর রহমান ঘটনাস্থলে আসেন।
জেলা জজের বাসভবনের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাহাবুবুর রহমান সংবাদ কর্মীদের বলেন, এটি তারা রিপেয়ারিং করে দেবেন। এরপর তিন বছরের মতো ঝুঁকিমুক্তভাবে এখানে থাকা যাবে। তিনি আরো জানান, ১৯৯৩ সালে এ ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ হিসেবে ২৫ বছর হয় এ ভবনটির বয়স। এরই মধ্যে কয়েকবার কিছু কিছু জায়গায় সামান্য কিছু সংস্কার করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে-সরকারি কোনো ভবনের মেয়াদ কি ২৫/৩০ বছর হয়? জেলা জজের বাসভবন কি তাহলে ঝুঁকিপূর্ণ?