• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মতলবে বহুল আলোচিত যুবলীগ নেতা খবির হত্যাকান্ড : সুষ্ঠু বিচার ও আসামীদের ফাঁসির দাবিতে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

‘হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীকে মামলায় সংযুক্ত করা হয়নি’

প্রকাশ:  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৪১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

২০১২ সালে মতলব দক্ষিণে বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর হত্যাকা- যুবলীগ নেতা খবির হোসেন হত্যাকা-। দীর্ঘ ছয় বছর পার হয়ে গেলেও এখনো এর কোনো কুলকিনারা হয়নি। অনেকে ভুলেও যেতে বসেছে নৃশংসতম এ হত্যাকা-ের কথা। কিন্তু ভুলতে পারেননি রক্তের বন্ধনে যারা রয়েছেন সেই স্বজনরা। তাই তো তারা খবির হত্যার বিচারের দাবিতে আবার সোচ্চার হয়ে ওঠেছেন। মতলব দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ও চাঁদপুর-২ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) এম রফিকুল ইসলামের পিএস মোঃ খবির হোসেনের হত্যা মামলার আসামীদের ফাঁসির দাবিতে পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করেছে।
    গতকাল ১৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার নওগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে মরহুম মোঃ খবির হোসেনের পরিবার এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মরহুম মোঃ খবির হোসেনের স্ত্রী মোসাম্মৎ ফাতেমা খবির। বক্তব্য রাখেন মামলার বাদী মরহুম মোঃ খবির হোসেনের বড় ভাই মোঃ মোশারফ হোসেন, শিশু কন্যা মোসাম্মৎ ফাহমিদা হোসেন, ফারহানা হোসেন তাহা এবং এলাকাবাসীর পক্ষে লিটন মুন্সী, বিল্লাল হোসেন, শাহ আলম মাস্টার, তাফাজ্জল হোসেন, আব্দুল মান্নান খান, মিলন প্রধান, বদিউজ্জামান ও মোঃ বজলুর রশিদ।
    সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মরহুম মোঃ খবির হোসেনের স্ত্রী মোসাম্মৎ ফাতেমা খবির জানান, তিনি উপাদী উত্তর ইউনিয়নের নওগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। তার স্বামী মোঃ খবির হোসেন প্রধানিয়া ২০১২ সালের আগস্ট মাসের ২৯ তারিখ রাত আনুমানিক পৌনে ২টার দিকে গ্রামের বাড়ি থেকে মতলব পৌর এলাকায় নিজ বাসায় মোটর সাইকেলযোগে যাওয়ার সময় ১০/১২ জন সন্ত্রাসী দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে গুরুতর আহত করে। পরে অচেতন অবস্থায় প্রথমে তাকে মতলব উপজেলা হাসপাতাল এবং পরে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন চাঁদপুরের চিকিৎসকরা। সেখান থেকে আবার ঢাকাস্থ গ্রীন লাইফ হাসপাতালে তাকে চিকিৎসার জন্যে নেয়া হয়। এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মারা যান। ঘটনার সময় আমাদের পরিবারের লোকজন আমার স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়ায় এবং আমি ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকায় মামলা করতে দেরি হয়। পরবর্তীতে আমার ভাসুর মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে ৩০ আগস্ট ২০১২ তারিখে মতলব দক্ষিণ থানায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও অজ্ঞাত কয়েকজনের নামে মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং-০৬, ৩০-০৮-২০১২খ্রিঃ)। মামলা দায়ের করার দিনেও আমার স্বামী চিকিৎসাধীন ছিলেন।
    মামলার আসামী হিসেবে সাগর দেওয়ান (২৮), বাশার (২০), জুয়েল (২৩), নজরুল (২২), মেহেদী দেওয়ান (২৪), সাগর (২১), হেলাল (২০), সোহরাব (২৬) ও সোহেল সরকার (২৫)-এর নাম এজাহারে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে মামলার প্রতিবেদনে আরো দুইজন আসামীর নাম যোগ করেন। তারা হচ্ছে দুলাল মিয়া ওরফে দুলাল দেওয়ান (৪৯) ও মাইনুল কবির হিমেল (২৪)।
    এ ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতলব দক্ষিণ থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মিজানুর রহমান পাটওয়ারী চাঁদপুরে মতলব দক্ষিণ আমলী আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। নিহত খবিরের স্ত্রী ফাতেমা জানান, এখন পর্যন্ত মামলার সকল প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় বিচার কার্যক্রম থমকে আছে। আমার স্বামী খবির হোসেন প্রধানিয়া ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি মতলব দক্ষিণ উপজেলা যুবলীগের সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন এবং ২০১১ সালে মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী উত্তর ইউপির চেয়ারম্যান পদে তিনি নির্বাচন করেন। ফাতেমা আরো বলেন, চাঁদপুর-২ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) এম রফিকুল ইসলামের পিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তার স্বামী। সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজ করার কারণে তার সাথে দলীয় ও অন্যান্য লোকজনের শত্রুতাও সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে জেলা পরিষদের সম্পত্তির টাকা উত্তোলন নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। মূলত এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার স্বামীর উপর আক্রমণ হয় এবং পরবর্তীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, আমার স্বামী নিহত হওয়ার পর ঘটনাটি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে হত্যার সাথে জড়িত মূল আসামীরা আড়াল হয়ে যায়। পরবর্তী নির্বাচনে আমাদের এলাকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম এমপি। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর বৃহত্তর মতলবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাব-প্রতিপত্তি পরিবর্তন হয়ে যায়। এতে করে মামলাটির অগ্রগতি অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে। মামলার শুরুতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সহযোগিতা করলেও পরবর্তীতে তা আর পাওয়া যায়নি। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে তৎকালীন এমপি এম রফিকুল ইসলামের ভাই মোঃ তওফিকুল ইসলাম দেওয়ানকে আমরা সন্দেহ করি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তার নামটি মামলায় সংযুক্ত হয়নি। তওফিকুল ইসলাম দেওয়ানসহ তার সহযোগিরা বর্তমানেও মামলাটি যেনো সঠিকভাবে বিচার না হয় সে অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তাদেরকেও তারা অর্থ ও পরামর্শ দিয়ে উচ্চ আদালত থেকে জামিন করিয়ে নিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ওই তওফিকুল ইসলাম প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন। আর যদি কোনো কারণে উনি মনোনয়ন পেয়ে যান তাহলে আমাদের পরিবারের জন্যে আরও বড় হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এমনকি মামলার গতি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করবেন বলে আমাদের প্রবল আশঙ্কা।
    লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! আপনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা ও ৪ বারের সফল প্রধানমন্ত্রী। আমি একজন হতভাগিনী হিসেবে আপনার কাছে আমার অনুরোধ, স্বামীর মৃত্যুর পর আমি নিজে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে মামলাটি পরিচালনা করে আসছি। খবির নিহত হওয়ার ৩ মাস পর আমার দ্বিতীয় কন্যা সন্তান জন্ম হয়। এর আগেও একটি কন্যা সন্তান ছিলো। আমি বর্তমানে ঢাকা আইসিডিডিআরবিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকুরি করে কোনোরকম সংসার চালাচ্ছি। বড় মেয়েটি বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছে। মামলাটি অগ্রগতি না হওয়ার কারণে আমরা মানসিকভাবে খুবই নাজুক অবস্থায় আছি। লোমহর্ষক হত্যার ওই ঘটনা মনে পড়লে আমরা এখনো অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমি ও আমার কন্যারা এখনো তাদের পিতার জন্যে কাঁদে। আমরা খবির হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচারসহ প্রকৃত আসামীদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।

 

সর্বাধিক পঠিত