হাজীগঞ্জে নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন
গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হাজীগঞ্জে ২/১ টি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে নিরাপত্তা ছিলো একেবারে ঢেলে সাজানো। যার কারণে বড় ধরনের কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মমিনুল হক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন তিনি নিজে ভোট দিতে পারেননি।
হাজীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে ও সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোটগ্রহণ শুরুর ঘন্টাখানেক পরেই হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে দুই ঘন্টা ধরে। এ সময় বিএনপির বেশ কিছু কর্মীকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়ায় অংশ নিতে দেখা গেছে। সংঘর্ষের সময় উভয়পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপের কারণে ডিগ্রি কলেজের নতুন ভবনের বেশ কিছু জানালা ভাংচুরসহ এলাকা অনেকটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দুপুর ১২ টার দিকে র্যাব এসে উভয়পক্ষকে ধাওয়া দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
সকাল ১০টার দিকে হাজীগঞ্জ পাইলট হাইস্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে ছাত্রলীগের মিরাজুল ইসলাম সরোয়ারকে বেদম প্রহার করে। এরপরেই ভোট কেন্দ্র শান্ত হয়ে আসলেও বিএনপির একাংশ পাশর্^বর্তী স্বর্ণকলি স্কুলের সামনে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় দায়িত্বরত একজন ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির উপর তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এর কিছু পরেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণকালে চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাতের প্রাইভেটকার ও সাংবাদিকদের বহনকারী অপর একটি মোটরসাইকেলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ওই দুর্বৃত্তরা। এ সময় কাজী শাহাদাতসহ অপর সাংবাদিক আহত হন এবং তাঁকে বহন করা প্রাইভেট কারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর কিছু পরেই সেনাবাহিনী সড়কে অবস্থানকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সকাল ১১টার দিকে উপজেলার ৬নং বড়কুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি-জামায়াতের ভোটার কেন্দ্রের ভেতর থেকে ৭টি ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ঐ এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি টহল ইউনিট সে এলাকায় পৌঁছে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়।
সকাল ১১টার দিকে জামায়াতের এক নেতার ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলার ৭নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর ভূঁইয়া একাডেমী কেন্দ্রসহ বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় রামচন্দ্রপুর বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান ভাংচুর হয়। প্রায় ঘন্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর হাজীগঞ্জ থেকে পুলিশের একটি দল গিয়ে লাঠিচার্জ করলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাজার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
প্রায় একই সময় উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের অলিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ধানের শীষের পক্ষে অর্ধশতাধিক মহিলা ভোট কেন্দ্রে ঢুকে পড়লে চারদিকে বিশৃঙ্খলা ও উভয় পক্ষের মধ্যে আধাঘন্টা ধরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া উপজেলার ৯নং গন্ধর্ব্যপুর ইউনিয়নের মালিগাঁও বাজার, বাকিলা ইউনিয়নের শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাটিলা এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এদিকে নির্বাচনের দিন বিকেল ৩টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন চাঁদপুর-৫ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক। সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যের পাশাপাশি নিজে এবং তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ভোট দিতে পারেননি বলে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তিনি অভিযোগ করেন।
এতোকিছুর পরও চারদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল ও দায়িত্বপালন ছিলো চোখে পড়ার মতো। আনসার ভিডিপি, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলার বিভিন্ন সংস্থার লোকজন ছিলেন দায়িত্বে সচেতন। তাই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়।