চাঁদপুর বিআরটিএ অফিসে অনিয়মই যেনো নিয়মে
বিআরটিএ চাঁদপুর অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা যেনো নিয়মে পরিণত হয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটির চাঁদপুর জেলা কার্যালয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভবনের নিচতলায় অবস্থিত। এখানে জেলা পর্যায়ের উচ্চপদস্থ সকল কর্মকর্তার আসা-যাওয়া থাকলেও এ অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা যেনো কেউই দেখছে না। এ যেনো প্রদীপের নিচে অন্ধকার।
ভুক্তভোগী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও অফিসের বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, বিআরটিএ অফিসটিতে দুর্নীতির মহা উৎসব চলছে। অফিস প্রধান থেকে শুরু করে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত। শুধুু কি তাই, অনিয়ম-দুর্নীতির কার্যক্রম জোরালো করার জন্যে অফিস প্রধান তার ক্ষমতাবলে কয়েকজন দালালকে অফিসিয়াল পদে রেখে অর্থ উপার্জন করে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিচ্ছেন।
জানা যায়, বিআরটিএ চাঁদপুর অফিস সিএনজি স্কুটার ও মোটর সাইকেল চালকদের নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, ফিটনেস লাইসেন্স নবায়ন, রূট পারমিট প্রদান, মালিকানা বদলিসহ কয়েকটি খাত থেকে প্রতি মাসে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা অবৈধ উপার্জন করছে। এর বাইরে সড়কে চলাচলকারী ট্রাক, বাসসহ অন্যান্য যানবাহন হতেও অবৈধ অর্থ আসছে। নিয়ম অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্যে কোনো ব্যক্তি আবেদন করার পর তাকে লার্নার কার্ড নামে একটি কার্ড ইস্যু করা হয়। এ জন্যে সরকারি খাতে ব্যাংক ড্রাফ্ট করে জমা দিতে হয় ৩৪৫ টাকা। ২ মাস পর ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে তাকে পরীক্ষা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। সেটি লিখিত পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্যে ডাকা হয়। এই পরীক্ষায় কোনো পরীক্ষার্থীকে ড্রাইভিং বিষয়ে পড়ালেখা করে পরীক্ষা দিতে হয় না। পাসের জন্যে টাকাই হলো মূল। অফিসের মাধ্যমে সরাসরি আসলে ৩ হাজার আর দালালের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা দিলেই তিনি পাস। এবার তিনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করুন বা না করুন। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এই পরীক্ষায় কেউ ফেল করেছে এমন কথা শোনা যায় না। যদিও ২/১টি ফেল হয়ে থাকে, তাহলে তাও অন্য কোনো কারণে। পরীক্ষায় পাসের পর তাকে বিভিন্ন কাগজপত্র জমা দিতে হয়। সেটিকে বলা হয় ফাইল কাগজ। ঐ ফাইল কাগজসহ প্রায় ১৭শ’ টাকার একটি ব্যাংক ড্রাফট জমা দিতে হয়। এটি জমা দেয়ার ২ মাস পর তাকে দেয়া হয় তার কাক্সিক্ষত ড্রাইভিং লাইসেন্স। ঐ ফাইলটি জমা দেয়ার সময় তাকে অফিসের নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে অফিস খরচ বাবদ অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। এরপর লাইসেন্স দেয়ার পূর্বে লাইসেন্সটি যার নামে তার ছবি লাইসেন্স কার্ডে দিতে ছবি তোলা বাবদ ৪শ’ থেকে ১ হাজার টাকা অফিস খরচ হিসেবে দিতে হয়। এরপর তাকে গাড়ি চালানো ও সিগন্যাল সহ বিভিন্ন বিষয়ে ট্রেনিং দেয়ার কথা থাকলেও সেটি না করে পুনরায় ফাইল বাবদ অফিস খরচের নামে ১ হাজার টাকা দিয়ে একজন ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্সটি নবায়ন করতে হয়। সেখানেও নতুন লাইসেন্সে তার ছবি সংযুক্ত করতে ৫শ’ টাকা অফিস খরচ বাবদ দিতে হয়। অর্থাৎ লাইসেন্স নবায়ন বাবদ অতিরিক্ত এবং অবৈধ দিতে হয় সর্বনি¤œ সাড়ে ৪ হাজার টাকা ।
১০০ সিসি মোটর সাইকেল লাইসেন্সের জন্য ব্যাংক ড্রাফট করতে হয় ৭ হাজার টাকা। আর অফিস খরচ বাবদ অতিরিক্ত বা অবৈধ দিতে হয় ৩ হাজার টাকা । সিএনজি স্কুটারের ফিটনেস বাবদ ব্যাংক ড্রাফ্ট দিতে হয় ১ হাজার ৮৭ টাকা । অফিস খরচ বা অবৈধ টাকা দিতে হয় সর্বনি¤œ ৩ হাজার টাকা। স্কুটারের রূট পারমিটে ব্যাংক ড্রাফট ১২শ’ টাকা আর অবৈধ বা অতিরিক্ত অফিস খরচ দিতে হয় ২ হাজার টাকা ।
সিএনজি স্কুটার বা মোটর সাইকেলের মালিকানা পরিবর্তন করতে হলে বা গাড়ি বিক্রি করা হলে নতুন মালিকের নামে কাগজপত্র নিতে হলে ব্যাংক ড্রাফ্ট করতে হয় ২১৩০ টাকা । অথচ অফিস খরচ বা অবৈধ টাকা দিতে হয় সর্বনি¤œ ৫ হাজার টাকা।
সড়কে চলাচলকারী যানবাহন তদারকি বা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বিআরটিএ চাঁদপুরের উপ-পরিচালক শেখ মোঃ ইমরান হোসেনের সাথে উল্লেখিত অবৈধ অর্থের বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, কোথায় কী লেনদেন হয় বা কারা অতিরিক্ত অর্থ নেয় এ বিষয়ে আমার জানা নেই। অফিসের ফাইল লেখা সহ বিভিন্ন বিষয়ে অফিসিয়াল চেয়ারে বসে যে ক’জন কাজ করছেন তারা বিআরটিএ অফিসের কোন্ শ্রেণীর কর্মকর্তা সেটি জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে গিয়ে তিনি বিভিন্ন সংবাদ কর্মীর সাথে সুসম্পর্কের বিষয়ে বলতে থাকেন। তিনি বলেন, আমি ২০১৫ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে এ অফিসে কর্মরত। সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে কাজ করতে চাই।
উল্লেখ্য, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন, সিএনজি স্কুটারের লাইসেন্স, ফিটনেস, রুট পারমিট, মোটর সাইকেলের লাইসেন্স এবং সিএনজি ও মোটর সাইকেলের মালিকানা পরবর্তনের কাজেই মূলত অনিয়ম দুর্নীতি হয়ে থাকে। অফিস সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর জেলায় সিএনজি স্কুটারের লাইসেন্স রয়েছে ৬ হাজার ৭শ’ টি। সেই হিসেবে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে উল্লেখিত বিষয়গুলোতে সর্বনি¤œ হিসাব অনুযায়ী প্রতি মাসে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয় বিআরটিএ চাঁদপুর অফিসে।